২০২৫ সালের দশেরা ২ অক্টোবর সারা ভারতে পালিত হবে। এই উৎসব ভগবান রামের রাবণের উপর বিজয় এবং দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের প্রতীক। রামলীলা, পূজা, বিসর্জন এবং বিশেষ মুহূর্তের সাথে এই উৎসব ধর্ম, সত্য ও বিজয়ের বার্তা দেয় এবং বিভিন্ন রীতিনীতি সহকারে সারা দেশে উৎসাহের সাথে পালিত হয়।
Dussehra 2025: উৎসবের মরসুমে নবরাত্রির সমাপ্তির সাথে সাথে ভারতে দশেরা ২ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার পালিত হবে। এই দিনে ভগবান রাম রাবণের উপর বিজয় লাভ করেছিলেন এবং দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। সারা দেশে রামলীলা, রাবণ দহন, মা দুর্গা বিসর্জন এবং স্থানীয় পূজা অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। এই উৎসব কেবল ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং পরিবার ও সমাজকে ঐক্য, আনন্দ এবং সদাচারের বার্তাও দেয়।
২০২৫ সালের দশেরার তারিখ এবং মুহূর্ত
এই বছর দশেরা ২ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার পালিত হবে। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে এটি আশ্বিন শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে পড়ে। বিশেষ পূজা এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এই দিনে পালিত হয়, যা নবরাত্রির সমাপ্তির সাথে সাথে উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠে।
প্রধান মুহূর্ত
- বিজয় মুহূর্ত: দুপুর ০২:০৯টা থেকে ০২:৫৬টা পর্যন্ত
- অপরাহ্ন পূজার সময়: দুপুর ০১:২১টা থেকে ০৩:৪৪টা পর্যন্ত
- দশমী তিথি শুরু: ১ অক্টোবর ২০২৫, সন্ধ্যা ০৭:০১টায়
- দশমী তিথি শেষ: ২ অক্টোবর ২০২৫, সন্ধ্যা ০৭:১০টায়
- শ্রবণ নক্ষত্র শুরু: ২ অক্টোবর ২০২৫, সকাল ০৯:১৩টায়
- শ্রবণ নক্ষত্র শেষ: ৩ অক্টোবর ২০২৫, সকাল ০৯:৩৪টায়
দশেরাতে পালিত রীতিনীতি
দশেরা সারা ভারতে বিভিন্ন উপায়ে পালিত হয়। উত্তর ভারতে রামলীলার আয়োজন করা হয়, যেখানে রাবণ, কুম্ভকর্ণ এবং মেঘনাদের প্রতিমা দহন করা হয়। এই আয়োজন ভগবান রামের রাবণের উপর বিজয়ের কাহিনীকে জীবন্ত রূপে উপস্থাপন করে এবং মানুষের মধ্যে উৎসাহ ও ধর্মীয় অনুভূতি বৃদ্ধি করে।
বাংলা এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে দশমীর দিনে মা দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। এই বিসর্জন কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ নয়, বরং স্থানীয় সংস্কৃতি এবং উৎসবের প্রধান আকর্ষণও হয়ে ওঠে। মানুষ মা দুর্গার প্রতিমাকে শেষ বিদায় জানায় এবং পরের বার তাঁর পূজার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
দক্ষিণ ভারতে এই দিনে অস্ত্র, যন্ত্র এবং বইয়ের পূজা করার ঐতিহ্য রয়েছে। অনেক জায়গায় লোকেরা তাদের যানবাহন, সরঞ্জাম এবং অস্ত্রের পূজা করে সেগুলিকে আশীর্বাদ করে। মহারাষ্ট্র এবং গুজরাটে শমী বৃক্ষ এবং “অপরাজিতা” দেবীর পূজা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এই রীতিনীতির মাধ্যমে লোকেরা তাদের ঘর এবং জীবনে সাফল্য, সমৃদ্ধি এবং সুরক্ষার কামনা করে।
কেন দশেরা পালিত হয়
আশ্বিন শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে ভগবান রাম রাবণকে বধ করেছিলেন, তাই এটি দশেরা রূপে পালিত হয়। একই সাথে, এই দিনেই দেবী দুর্গা মহিষাসুর নামক রাক্ষসকে বধ করেছিলেন, তাই এটি বিজয়া দশমী নামেও পরিচিত। এই উৎসব ধর্ম, সত্য এবং বিজয়ের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়।
দশেরা কেবল ধর্মীয় গুরুত্বের উৎসব নয়, বরং এটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষকে সদ্গুণ, সত্য এবং ধর্মের পথে চলার অনুপ্রেরণা দেয়। উৎসবের এই দিনটি সারা দেশে ঐক্য, আনন্দ এবং উৎসাহের প্রতীক হয়ে ওঠে।
উৎসবের সময় বিশেষ কার্যক্রম
দশেরাতে বিভিন্ন স্থানে মেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনেক শহরে বিশেষভাবে রামলীলা মঞ্চস্থ হয়, যেখানে রামায়ণের গল্পগুলিকে অত্যন্ত বর্ণাঢ্য উপায়ে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়াও, উৎসব উপলক্ষে বাজারে কেনাকাটার পরিবেশ দেখা যায়। লোকেরা তাদের পরিবারের সাথে কেনাকাটা করে, মিষ্টি এবং সাজসজ্জার জিনিস কেনে।
উৎসবের সময় বিশেষ পূজা, যজ্ঞ এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানও করা হয়। বিজয় মুহূর্ত এবং অপরাহ্ন পূজার সময় সকল ভক্তদের জন্য পথনির্দেশক হয়, যাতে তারা সঠিক সময়ে পূজা করতে এবং আশীর্বাদ পেতে পারে।
শিশু এবং যুবকদের জন্য দশেরা
দশেরা শিশু এবং যুবকদের জন্যও বিশেষ গুরুত্ব রাখে। রামলীলার মঞ্চায়ন এবং প্রতিমা দহন তাদের ধর্ম ও বিজয়ের গল্পের মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষা দেয়। একই সাথে, এটি তাদের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে সংযুক্ত করে।
সারা দেশে বিভিন্ন রঙ এবং ঐতিহ্য
ভারতের বিভিন্ন অংশে দশেরা উদযাপনের উপায় ভিন্ন ভিন্ন। উত্তর ভারতে রাবণ দহন প্রধান আকর্ষণ, যখন বাংলা এবং উত্তর-পূর্বে মা দুর্গা বিসর্জনের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত থাকে। দক্ষিণ ভারতে অস্ত্র এবং বইয়ের পূজার মাধ্যমে সাফল্য এবং সুরক্ষার কামনা করা হয়। মহারাষ্ট্র এবং গুজরাটে শমী বৃক্ষ এবং অপরাজিতা দেবীর পূজার গুরুত্ব বেশি। এই বৈচিত্র্য প্রমাণ করে যে দশেরা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয় বরং সারা দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ।