আজ উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুঁ অঞ্চলে হরেলা উৎসব বেশ ধুমধামের সঙ্গে পালিত হচ্ছে। শ্রাবণ মাসের শুরুতেই এই ঐতিহ্যপূর্ণ উৎসবটি মানুষের মধ্যে আনন্দ এবং শ্রদ্ধার আবহ তৈরি করে। মাঠের সবুজ ঘাস, বাড়িতে পূজা এবং উঠোনে ঐতিহ্যবাহী খাবার—হরেলা উৎসব দেবভূমির সাংস্কৃতিক পরিচয় হয়ে উঠেছে।
হরেলা শব্দের অর্থ কী
‘হরেলা’ শব্দটি হিন্দি শব্দ "হরিয়ালি" থেকে এসেছে, যা প্রকৃতির প্রাচুর্য, নতুন ফসলের সূচনা এবং পরিবেশের সঙ্গে সংযোগকে নির্দেশ করে। এই উৎসব ভূমি মায়ের উর্বরতা এবং বর্ষাকালের আগমনকে স্বাগত জানানোর প্রতীক হিসেবে পালিত হয়। উত্তরাখণ্ডে, বিশেষ করে কুমায়ুঁ অঞ্চলের গ্রাম ও শহরগুলিতে হরেলা উৎসব খুব উৎসাহের সঙ্গে উদযাপন করা হয়।
কীভাবে শুরু হয় হরেলার প্রস্তুতি
হরেলা উৎসব শুরু হওয়ার নয় দিন আগে, বাড়ির উঠোন বা মন্দিরগুলিতে একটি ঝুড়িতে যব, ভুট্টা, ধান এবং গমের মতো বীজ বপন করা হয়। এই বীজগুলিকে মাটি বা গোবর দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী ঝুড়িতে রাখা হয় এবং প্রতিদিন জল দিয়ে তাদের যত্ন নেওয়া হয়। দশম দিনে যখন এই বীজগুলি অঙ্কুরিত হয়ে সবুজ হয়ে যায়, তখন তাদের ‘হরেলা’ বলা হয়।
ভগবান শিব-পার্বতীর বিশেষ পূজা
হরেলা উৎসবের একটি ধর্মীয় দিকও রয়েছে। এই দিনে ভগবান শিব এবং মা পার্বতীর বিশেষ পূজা করা হয়। অনেক স্থানে মাটি দিয়ে শিব-পার্বতীর মূর্তি তৈরি করা হয় এবং তাদের জল, ফুল, বেলপাতা এবং শস্য উৎসর্গ করা হয়। এরপর হরেলার চারাগুলি ভগবানের কাছে উৎসর্গ করা হয় এবং পরে পরিবারের সদস্যদের দেওয়া হয়।
পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত হরেলা উৎসব
হরেলা কেবল একটি ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক উৎসব নয়, এটি প্রকৃতি এবং পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীকও। এই দিনে উত্তরাখণ্ডের অনেক অংশে গাছ লাগানো হয়। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত স্কুলছাত্র, যুবক এবং বৃদ্ধ সবাই মিলে গাছ লাগায় এবং পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখার অঙ্গীকার করে। এই উৎসব মানুষকে পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত হতে এবং সবুজকে লালন করার বার্তা দেয়।
হরেলায় তৈরি হয় বিশেষ খাবার
হরেলা উৎসবের দিনে ঐতিহ্যবাহী খাবারেরও বিশেষ ভূমিকা থাকে। এই উপলক্ষে বাড়িতে পুয়া, কড়ি, ভাট কি চুরকানি, আরবির পাতার পকোড়া, মন্ডুয়ার রুটি এবং ক্ষীর-এর মতো ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি খাবার তৈরি করা হয়। পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া এই উৎসবের সবচেয়ে বিশেষ ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
পরিবার এবং সমাজে প্রেম ও ঐক্যের উৎসব
হরেলা উৎসব সামাজিক ঐক্য এবং পারিবারিক বন্ধনের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়। এই দিনে মানুষ একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়, আশীর্বাদ নেয় এবং পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এবং গ্রামবাসী একসঙ্গে বসে খাবার খায় এবং উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেয়।
কুমায়ুঁ অঞ্চলে বিশেষ গুরুত্ব
হরেলা উৎসব উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুঁ অঞ্চলে বিশেষভাবে পালিত হয়। এখানে এই উৎসবটি চাষাবাদের চক্রের সঙ্গে জড়িত। বর্ষাকালে আগমনের সঙ্গে এই উৎসব নতুন ফসলের স্বাগত জানানোর রূপেও দেখা যায়। কৃষকরা এই উৎসব ভূমি মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং ভালো ফসলের কামনায় পালন করে।
শহরাঞ্চলেও ফিরছে এই ঐতিহ্য
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই উৎসব কেবল গ্রামীণ এলাকাতেই সীমাবদ্ধ নেই। শহুরে পরিবারগুলিও এখন হরেলা উৎসবকে ঐতিহ্যবাহী রীতি-নীতি সহকারে পালন করতে শুরু করেছে। স্কুল, এনজিও এবং সংস্থাগুলিতে শিশুদের বীজ বপন, হরেলা তৈরি এবং গাছ লাগানো শেখানো হয়। এর ফলে শিশুদের মধ্যে পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধের জন্ম হয়।