শ্রাবণ মাসে মায়ের ইচ্ছেপূরণ: পুত্র ও পুত্রবধূর কাঁধে পালকি চড়ে হরিদ্বার যাত্রা

শ্রাবণ মাসে মায়ের ইচ্ছেপূরণ: পুত্র ও পুত্রবধূর কাঁধে পালকি চড়ে হরিদ্বার যাত্রা

শ্রাবণ মাসের পবিত্রতায় ভগবান শিবের ভক্তিতে সারা দেশ মগ্ন। সর্বত্র হর-হর মহাদেবের ধ্বনি এবং কাঁধে বাঁক নিয়ে তীর্থযাত্রীদের শ্রদ্ধা চোখে পড়ার মতো। এই ভক্তিপূর্ণ আবহের মধ্যে হরিয়ানার কার্নাল জেলার মাজরা গ্রাম থেকে একটি অসাধারণ গল্প সামনে এসেছে, যা মানুষকে আবেগপ্রবণ করে তুলেছে।

গ্রামের অঞ্জলি এবং তাঁর স্বামী বলবান তাঁদের বৃদ্ধা শাশুড়ি প্রসন্নী দেবীর একটি পুরনো ইচ্ছে পূরণ করার জন্য তাঁকে পালকিতে বসিয়ে হরিদ্বার পর্যন্ত কাঁধে করে নিয়ে যান। তাঁরা শুধু মায়ের সেবাই করেননি, সেই সঙ্গে কয়েকশো কিলোমিটারের কঠিন পথ অতিক্রম করে সমাজের সামনে এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। এই দৃশ্য সাহারানপুর সহ পুরো রাস্তায় মানুষদের বিস্মিত ও আবেগ আপ্লুত করেছে।

বউমার সংকল্প এবং ছেলের সঙ্গ

বলবান জানান, তাঁর মা প্রসন্নী দেবীর বহু বছরের ইচ্ছে ছিল যে শ্রাবণ মাসে হরিদ্বার গিয়ে গঙ্গাজল এনে শিবলিঙ্গে অর্পণ করবেন। কিন্তু বয়স বাড়ার কারণে তিনি এখন আর বেশি দূর হাঁটতে পারেন না।

যখন বলবান এই কথা তাঁর স্ত্রী অঞ্জলিকে জানান, তখন অঞ্জলি দেরি না করে সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁরা দুজনে মিলে মায়ের এই ইচ্ছে পূরণ করবেন। অঞ্জলি বলেন, মা-বাবার স্থান ভগবানের থেকেও উপরে। তাঁদের সেবা না করলে কোনো পূজাই সম্পূর্ণ হয় না। এরপর দম্পতি একটি পালকি তৈরি করেন, মাকে তাতে বসান এবং ভগবান ভোলেনাথের কাছে শক্তি চেয়ে যাত্রা শুরু করেন।

রাস্তায় মানুষের সঙ্গ ও আশীর্বাদ

দম্পতি যখন সাহারানপুরের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁদের এই ত্যাগ দেখে পথচলতি মানুষজন থমকে দাঁড়ান। নানান রঙের বাঁক, ভক্তদের ভিড় এবং ‘বোল বম’ ধ্বনির মধ্যে এই দৃশ্য ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। লোকেরা শ্রদ্ধায় মাথা নত করেন এবং এই পরিবারের ভক্তি ও সেবার প্রশংসা করেন।

সাহারানপুরের স্থানীয় বাসিন্দা অঞ্জু প্রতাপ বলেন, আজকের দিনে এমন ত্যাগ ও প্রেম খুব দুর্লভ। অঞ্জলি এবং বলবান আমাদের দেখিয়েছেন যে সত্যিকারের ভক্তি মন্দিরে নয়, বরং বাবা-মায়ের সেবার মধ্যেই নিহিত। অনেকে এই জুটিকে শ্রাবণ কুমারের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

বউমার ভক্তিতে হৃদয় ছুঁয়েছে

সাহারানপুরে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় অঞ্জলি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, মায়ের ইচ্ছে আমার কাছে সবচেয়ে বড় ছিল। আমরা শিবজির কাছে এই প্রার্থনাই করেছি, যাতে এই যাত্রায় মায়ের কোনো কষ্ট না হয়।

অন্যদিকে, শাশুড়ি প্রসন্নী দেবীও পুত্র ও পুত্রবধূর এই পদক্ষেপে আপ্লুত ছিলেন। তিনি বলেন, আমার ছেলে ও বউমা আমাকে সেই আনন্দ দিয়েছে, যা আমি কখনো কল্পনাও করিনি। ভগবান শিব তাঁদের সমস্ত মনোকামনা পূরণ করুন। বলবানও তাঁর স্ত্রীর প্রশংসা করে বলেন যে অঞ্জলি শুধু তাঁর পাশে দাঁড়াননি, বরং মায়ের প্রতি তাঁর আত্মোৎসর্গ দেখিয়ে পুরো সমাজকে একটি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন।

সমাজের জন্য একটি প্রেরণাদায়ক উদাহরণ

এই যাত্রা শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং সম্পর্কের গভীরতা ও বয়স্কদের প্রতি সম্মানের প্রতীক হয়ে উঠেছে। অঞ্জলি এবং বলবান প্রমাণ করেছেন যে ভক্তি শুধু পূজা-অর্চনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সত্যিকারের ভক্তি সেই কাঁধে, যা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সেবা করার জন্য এগিয়ে আসে।

হরিদ্বার পর্যন্ত এই যাত্রা কঠিন হলেও, এই দম্পতির বিশ্বাস, নিষ্ঠা এবং ভালোবাসা এই যাত্রাকে ঐতিহাসিক করে তুলেছে। তাঁরা শাশুড়িকে শুধু গঙ্গাজল দর্শন করাননি, সেই সঙ্গে তাঁদের সেবার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ও জয় করেছেন।

Leave a comment