রাজ্যে একটানা ভারী বৃষ্টি জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ভূমিধস এবং জলমগ্নতার কারণে ৫৩৩টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, ২৬৬টি পানীয় জলের প্রকল্প এবং ৬৩৫টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া দফতর অনেক জেলায় ১২ই আগস্ট পর্যন্ত হলুদ সতর্কতা জারি করেছে। এ পর্যন্ত ১৯৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং মোট ক্ষতির পরিমাণ ১৯০৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
Himachal Pradesh: হিমাচল প্রদেশে বর্ষা তাণ্ডব চালাচ্ছে। একটানা ভারী বৃষ্টির কারণে অনেক জেলায় ভূমিধস, জলমগ্নতা এবং বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজ্যজুড়ে ৫৩৩টি রাস্তা, ৬৩৫টি ট্রান্সফরমার এবং ২৬৬টি পানীয় জলের প্রকল্প বন্ধ রয়েছে। মান্ডি, সোলান, কাংড়া এবং কুল্লু জেলার জনজীবন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আবহাওয়া দফতর ১২ই আগস্ট পর্যন্ত হলুদ সতর্কতা জারি করেছে। প্রশাসন সতর্ক রয়েছে এবং সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দুর্যোগে এ পর্যন্ত ১৯৯ জনের মৃত্যু, ৩৬ জনের নিখোঁজ এবং কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জলমগ্নতা ও ভূমিধসে রাস্তা বন্ধ
হিমাচল প্রদেশে গত ২৪ ঘন্টায় ভারী বৃষ্টি জনজীবনকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। সিমলা, সোলান, মান্ডি, চাম্বা, কাংড়া এবং বিলাসপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রবল বৃষ্টির কারণে ভূমিধস এবং জলমগ্নতার সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সোলানের কসৌলিতে, ১৫০ মিমি রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে অন্যান্য অঞ্চলে ৬০ থেকে ১২০ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া দফতর রাজ্যের জন্য ১২ই আগস্ট পর্যন্ত হলুদ সতর্কতা জারি করেছে এবং নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহে মারাত্মক প্রভাব
একটানা বৃষ্টির কারণে পুরো রাজ্যে ৫৩৩টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, যার মধ্যে ৪টি জাতীয় সড়কও রয়েছে। শুধুমাত্র মান্ডিতে ৩১৪টি, কুল্লুতে ১১৭টি, সিমলায় ২৬টি এবং কাংড়াতে ২৩টি রাস্তা বন্ধ রয়েছে। এনএইচ-3, এনএইচ-21, এনএইচ-305 এবং এনএইচ-5-এর মতো প্রধান সড়কগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ ব্যবস্থায়ও বড় প্রভাব পড়েছে। সোলানে ৩০৪টি, মান্ডিতে ২৮৫টি এবং সিমলায় ৪১টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে গেছে। পানীয় জলের প্রকল্পগুলির মধ্যে মান্ডির ৮৮টি, কাংড়ার ১২০টি এবং হামিরপুরের ২৭টি প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি
কুল্লু জেলার কুটলি গ্রামে বন্যায় অনেক বাড়িঘর ও যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিরমান্ড মহকুমার মোচকা নালায় আকস্মিক বন্যার কারণে একটি পুরনো সেতু ভেসে গেছে, এতে এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ মান্ডি, কাংড়া, সিমলা এবং সোলান জেলার ২১টি সংবেদনশীল ভূমিধসপ্রবণ এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে।
এই অঞ্চলগুলির মধ্যে পরাশর, কোটরোপি, গ্রিফিন পিক, ধর্মশালা, জাতোগ এবং ডাগশাইয়ের মতো এলাকাগুলোতে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে, যেখানে প্রশাসন সতর্কতার সাথে নজরদারি চালাচ্ছে। মানুষকে এই ধরনের এলাকায় অপ্রয়োজনে ভ্রমণ এড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
হাজার হাজার বাড়ি-দোকান ক্ষতিগ্রস্ত
রাজ্যে ২০ জুন থেকে সক্রিয় বর্ষার কারণে বৃষ্টি-সৃষ্ট ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৯৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ৩৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন এবং ৩০৪ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে মান্ডি জেলায়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে, ১৭৮৬টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৩৬৭টি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গেছে। ২৯৮টি দোকান এবং ১৬৯০টি গোয়ালঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধুমাত্র মান্ডিতে ১১১৮টি বাড়ি এবং ২৬৭টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ পর্যন্ত মোট ক্ষতির পরিমাণ ১৯০৫ কোটি টাকার বেশি বলে অনুমান করা হয়েছে। লোক নির্মাণ বিভাগের ১০০০৯ কোটি এবং জলশক্তি বিভাগের ৬৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রাজ্যে এ পর্যন্ত ৫৮টি আকস্মিক বন্যা, ২৮টি মেঘ ভাঙা বৃষ্টি এবং ৫১টি ভূমিধসের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।