হাইপোগ্লাইসেমিয়া: রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

হাইপোগ্লাইসেমিয়া: রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

হাইপোগ্লাইসেমিয়া হল এমন একটি অবস্থা যখন রক্তে শর্করার মাত্রা 70mg/dl এর নিচে নেমে যায়। এতে রোগীর ঘাম, মাথা ঘোরা, ক্ষুধা, দুর্বলতা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এটি বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে দেখা যায় এবং সময়মতো মনোযোগ না দিলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ ও প্রতিরোধ: হাইপোগ্লাইসেমিয়া, অর্থাৎ হঠাৎ রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যাওয়া একটি গুরুতর অবস্থা, যা প্রায়শই ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে দেখা যায়। সম্প্রতি সুইডেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটি সংবাদ সম্মেলনে এই কারণেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। ডাক্তারদের মতে, দুর্বলতা বা ক্লান্তি ভেবে লক্ষণগুলিকে ভুল করা বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ সময়মতো চিকিৎসা না হলে এটি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি বা কোমা পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।

কখন হাইপোগ্লাইসেমিয়ার শুরু হয়

সাধারণত যখন রক্তে শর্করার মাত্রা 70 mg/dl এর নিচে নেমে যায় তখন তাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলা হয়। এই অবস্থায় শরীর শক্তির অভাব অনুভব করতে শুরু করে এবং মস্তিষ্কও সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। সম্প্রতি এটি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে যখন সুইডেনের নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটি সংবাদ সম্মেলনের সময় হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান। পরে তিনি জানান যে তার রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়ার কারণেই এমনটা হয়েছিল। এই ঘটনাটি নির্দেশ করে যে এই সমস্যাটি কতটা বিপজ্জনক হতে পারে।

রক্তে শর্করার হঠাৎ কমে যাওয়া কেন বিপজ্জনক

রাজীব গান্ধী হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ অজিত জৈন বলেছেন যে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়াকে অনেকেই সাধারণ ক্লান্তি বা দুর্বলতা বলে মনে করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে, মানুষ এটিকে উপেক্ষা করে। কিন্তু বাস্তবে এই অবস্থা গুরুতর হতে পারে। যদি অবিলম্বে শনাক্ত না করা হয়, তবে রোগীর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি এবং এমনকি কোমা হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। বিশেষ করে ঘুমের সময় এই অবস্থা বেশি বিপজ্জনক প্রমাণিত হতে পারে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ

এই সমস্যার বেশ কিছু প্রাথমিক লক্ষণ রয়েছে যা চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি।

  • ঘাম হওয়া এবং ঠান্ডা লাগা।
  • হাত-পায়ে কাঁপুনি এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
  • হঠাৎ ক্ষুধা লাগা।
  • মাথা ঘোরা।
  • বিরক্তি বা উদ্বেগের অবস্থা।
  • মাথাব্যথা বা চোখের সামনে ঝাপসা দেখা।
  • ঠোঁট, জিভ বা গাল অসাড় হয়ে যাওয়া।
  • ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া।

যদি এই সংকেতগুলি সময়মতো শনাক্ত করা যায়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়া থেকে রোধ করা যেতে পারে।

গুরুতর হলে এই লক্ষণগুলি দেখা যায়

যখন হাইপোগ্লাইসেমিয়া গুরুতর হয়, তখন এটি আরও বিপজ্জনক লক্ষণ দেখাতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে বিভ্রান্তি, অস্বাভাবিক আচরণ, কথা বলতে অসুবিধা, ঝাপসা দেখা এবং সাধারণ কাজগুলি সম্পন্ন করতে অক্ষমতা। যদি ব্যক্তি ঘুমিয়ে থাকে তবে তার খারাপ স্বপ্ন আসতে পারে এবং অনেক সময় হঠাৎ ঝাঁকুনিও হতে পারে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধের উপায়

ডঃ অজিত জৈন বলেছেন যে এই সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব, বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের জন্য।

  • দিনের কোনো বেলার খাবার বাদ দেবেন না।
  • স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ব্যায়াম করবেন না।
  • খালি পেটে অ্যালকোহল পান করবেন না।
  • নিয়মিত বিরতিতে রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করতে থাকুন।
  • ব্যায়ামের আগে এবং পরে অবশ্যই শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করুন।
  • সবসময় আপনার সাথে জুস, ক্যান্ডি বা চিনি রাখুন যাতে হঠাৎ কমে গেলে অবিলম্বে ব্যবহার করতে পারেন।

কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার সম্ভাবনা ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে যারা নিয়মিত ইনসুলিন নেন বা ওষুধের উপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য এই অবস্থা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এছাড়াও, দীর্ঘ সময় ধরে উপোস থাকা, অতিরিক্ত পরিশ্রম করা বা মদ্যপানও এই সমস্যা বাড়াতে পারে।

Leave a comment