সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হতে আর মাত্র দিনদুয়েক। তার আগেই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ফের একবার শিরোনামে। দীর্ঘদিন দূরে থাকার পর তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়ে দিয়েছে—জোটের বৈঠকে এবার অংশ নেবেন দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে অন্যদিকে, জোট ছেড়ে বেরিয়ে গেল আম আদমি পার্টি। মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধী ঐক্য কি আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে? নাকি নতুন আকার নিচ্ছে জোটের সমীকরণ?
ভার্চুয়ালেই হবে বৈঠক, অভিষেক থাকবেন কলকাতা থেকে
তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে শুক্রবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে—শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হওয়া ভার্চুয়াল বৈঠকে কলকাতা থেকেই যোগ দেবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগে ঠিক ছিল দিল্লিতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বাসভবনে মুখোমুখি বৈঠক হবে। কিন্তু অখিলেশ যাদব ও তৃণমূল সময় দিতে না পারায় ভার্চুয়াল মাধ্যমই বেছে নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট, ব্যস্ততা সত্ত্বেও বৈঠকে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় তৃণমূল।
২১ জুলাইয়ের আগে জোটে তৃণমূলের সরব উপস্থিতি
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর এই প্রথম কোনও ইন্ডিয়া জোট বৈঠকে অংশ নিতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও বাদল অধিবেশন উপলক্ষে অতীতের কিছু প্রস্তুতিমূলক আলোচনায় তৃণমূলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকেছেন, তবু শীর্ষ নেতৃত্বের এই প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আলাদা তাৎপর্য বহন করছে। ২১ জুলাইয়ের দলের বার্ষিক সভার আগে জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের সক্রিয়তা জোটকে নতুন দিশা দেখাতে পারে বলেই রাজনৈতিক মহলের অনুমান।
আপের 'গুডবাই'—মোদি-বিরোধী লড়াইয়ে বড় ফাটল?
সূত্রের খবর, আম আদমি পার্টি ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলেছে। লোকসভা নির্বাচনের পর আপ যে নিজস্ব পথেই হাঁটবে, তার ইঙ্গিত ছিলই। তবে এখন তা আরও স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে, জোটে আপের না থাকা মানে মোদীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিরোধী কণ্ঠ একধাক্কায় দুর্বল হয়ে পড়া। ২০২৪-এর নির্বাচনে যে ইন্ডিয়া জোট বিজেপিকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে দেয়নি, সেই ফ্রন্টে বড় ভাঙন হলে বিজেপির পক্ষে নতুন কৌশল সাজানো সহজ হবে বলেই মত বিশ্লেষকদের।
বিহার সমীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ, বাংলাও আলোচনার মেনুতে
বৈঠকে অন্যতম আলোচ্য বিষয় বিহার বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ সমীক্ষা। বিরোধীদের অভিযোগ, এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু বিহার নয়, ভবিষ্যতে এই মডেল প্রয়োগ হতে পারে বাংলা, অসম, কেরলের মতো রাজ্যেও—এমন আশঙ্কাও রয়েছে। তাই এই বৈঠকে বাংলার ভবিষ্যৎ ভোট যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা হতে পারে। তৃণমূলের উপস্থিতি তাই কেবল ‘প্রতীকী’ নয়, বাস্তব কৌশলের দিক থেকে তা তাৎপর্যপূর্ণ।
কংগ্রেস বনাম সিপিএম: রাহুলের মন্তব্যে জোটে নতুন জট
অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক মন্তব্য নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তিনি আরএসএস এবং সিপিএম-কে একই শ্রেণিতে ফেলে বলেন—এই দুই শক্তির বিরুদ্ধেই তিনি আদর্শগত লড়াই চালিয়ে যাবেন। এই মন্তব্যেই ক্ষুব্ধ সিপিএম। দলের সাধারণ সম্পাদক এমএ বেবি প্রকাশ্যে বলেন, রাহুলের বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। আমরা বিজেপি ও কংগ্রেসকে কখনও একই আসনে বসাইনি, কিন্তু রাহুল তেমনটাই করলেন। সিপিএম সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য একধাপ এগিয়ে বলেন, আপনি যদি সত্যিই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চান, তবে সিপিএমের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে হবে, না হলে সেটা হবে ‘মক ফাইট’।
জোট জটিলতায় কাকে ঘিরে ভবিষ্যৎ?
আপের বিদায়, সিপিএম-কংগ্রেস দ্বন্দ্ব এবং তৃণমূলের নতুন সক্রিয়তা—সব মিলিয়ে ইন্ডিয়া জোট এখন এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এই পরিস্থিতিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণ নতুন কোনও সংহতির বার্তা দেয় কি না, সেটাই দেখার। তবে রাজনীতির ঘরানায় একটাই কথা চলে—বৈঠকে থাকা মানেই একতা নয়, আর না থাকাই মানে বিচ্ছেদ নয়!