ভারত, আমেরিকার সঙ্গে মিনি ট্রেড ডিল-এ চাল, দুগ্ধজাত পণ্য এবং গমের বিষয়ে কোনো সমঝোতা করেনি। এখন ৯ই জুলাইয়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমেরিকাকে।
ট্রেড ডিল: ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি (Trade Deal) নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে গেছে। ভারত পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে যে চাল, দুগ্ধজাত পণ্য, গম এবং জেনেটিক্যালি মডিফাইড শস্যের (Genetically Modified Crops) বিষয়ে কোনো সমঝোতা হবে না। এখন সিদ্ধান্ত আমেরিকার হাতে। যদি ৯ই জুলাই পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হয়, তাহলে আমেরিকার আরোপিত ২৬% পারস্পরিক শুল্ক (Reciprocal Tariff) পুনরায় চালু হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, উভয় দেশের নজর এখন ৯ই জুলাইয়ের সময়সীমার দিকে।
আমেরিকার উপর এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী বা মিনি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছিল। সূত্রানুসারে, ভারত এখন তাদের অবস্থান সম্পূর্ণভাবে স্পষ্ট করে দিয়েছে। ভারত সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে আলোচনা যা হওয়ার ছিল, তা সম্পন্ন হয়েছে এবং এখন নতুন কোনো আলোচনার সম্ভাবনা নেই।
ভারত, আমেরিকাকে একটি ন্যায্য ও সুষম প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ভারতীয় কৃষক ও ভোক্তাদের স্বার্থের কথা মাথায় রাখা হয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, এখন এটি আমেরিকার উপর নির্ভর করে যে তারা এই প্রস্তাব গ্রহণ করে কিনা।
কোন বিষয়গুলোতে ভারত 'রেড লাইন' টেনেছে
ভারত স্পষ্ট করেছে যে তারা তাদের কৃষি ক্ষেত্রকে কোনো ধরনের অসম বাণিজ্য শর্তের মধ্যে ফেলবে না। বিশেষ করে যে পণ্যগুলির বিষয়ে ভারত আমেরিকার সঙ্গে চুক্তিতে রাজি হয়নি, সেগুলি হল:
চাল: ভারত বিশ্বে চালের বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। আমেরিকার চাপ সত্ত্বেও, ভারত এই ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত নয়।
দুগ্ধজাত পণ্য: ভারতীয় দুগ্ধ শিল্প কোটি কোটি গ্রামীণ পরিবারের জীবিকার সঙ্গে যুক্ত। আমেরিকা চায় ভারত দুগ্ধজাত পণ্যের জন্য আরও বাজার খুলুক, কিন্তু ভারত এতে কোনো সমঝোতা করতে রাজি হয়নি।
গম: ভারত গম আমদানি নিয়েও কড়া মনোভাব দেখিয়েছে।
জেনেটিক্যালি মডিফাইড শস্য: এই বিষয়েও ভারতের অবস্থান স্পষ্ট। স্বাস্থ্য ও কৃষি সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে ভারত এই শস্যের বিষয়ে সতর্ক রয়েছে।
ইস্পাত, অটো এবং অ্যালুমিনিয়ামের উপর সীমিত পরিসরে আলোচনা
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে যে বিষয়গুলির উপর সম্ভাব্য সমঝোতা হতে পারে, তার মধ্যে কিছু শিল্প ক্ষেত্র যেমন ইস্পাত, অটো এবং অ্যালুমিনিয়াম অন্তর্ভুক্ত। যদিও, ভারত এই ক্ষেত্রগুলিতেও আঞ্চলিক শুল্ক ছাড়ের পক্ষে নয়। কর্মকর্তাদের মতে, অন্তর্বর্তী বাণিজ্য চুক্তিতে এই ক্ষেত্রগুলির উপর সীমিত সমঝোতা হতে পারে, তবে তাও জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে।
৯ই জুলাইয়ের মধ্যে ঘোষণা হতে পারে
পিটিআই-এর (PTI) রিপোর্ট অনুযায়ী, যদি আমেরিকা ভারতের প্রস্তাব গ্রহণ করে, তাহলে ৯ই জুলাইয়ের আগেই বাণিজ্য চুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হতে পারে। এই চুক্তি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির (Bilateral Trade Agreement) দিকে প্রথম পদক্ষেপ হবে।
ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও আমেরিকা বিটিএ (BTA) নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যে প্রথম ধাপ চূড়ান্ত করা হবে। তার আগে, উভয় দেশ এই অন্তর্বর্তী চুক্তিটি সম্পন্ন করার জন্য কাজ করছে।
যদি চুক্তি না হয়, তাহলে কি হবে
যদি ৯ই জুলাই পর্যন্ত কোনো চুক্তি না হয়, তাহলে আমেরিকার দ্বারা পূর্বে আরোপিত ২৬% পারস্পরিক শুল্ক পুনরায় চালু হতে পারে। উল্লেখ্য, ২রা এপ্রিল, ২০২৫-এ আমেরিকা ভারত থেকে আসা কিছু পণ্যের উপর এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিল। যদিও, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিকে অস্থায়ীভাবে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছিলেন।
বর্তমানে আমেরিকার ১০% বেসলাইন শুল্ক এখনও চালু রয়েছে। ভারতের দাবি হল, আমেরিকা ২৬% শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করুক, যাতে বাণিজ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে।
ভারতের স্পষ্ট অবস্থান
বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল গত সপ্তাহে পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে ভারত কোনো বাণিজ্য চুক্তি কেবল সময়সীমার চাপে করবে না। তিনি বলেন যে চুক্তি তখনই হবে যখন সেগুলি ভারতের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।
তাঁর মতে, কোনো বাণিজ্য চুক্তি তখনই সফল হতে পারে যখন তাতে উভয় দেশই সমানভাবে লাভবান হবে এবং তা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে। ভারত উন্নত দেশগুলির সঙ্গে চুক্তির জন্য সর্বদা প্রস্তুত, কিন্তু 'জাতীয় স্বার্থই সর্বোচ্চ' - এটিই আমাদের অগ্রাধিকার।