রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আজ অ্যাঙ্গোলার রাষ্ট্রপতি জোয়াও ম্যানুয়েল গনসালভেস লোরেনকোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময় অ্যাঙ্গোলার প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন যে ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তায় অ্যাঙ্গোলার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারত এবং আফ্রিকার দেশ অ্যাঙ্গোলার (Angola) মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (Droupadi Murmu) তাঁর সম্প্রতি অ্যাঙ্গোলা সফরের সময় এই দেশটির প্রশংসা করে বলেছেন যে অ্যাঙ্গোলা ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তায় (Energy Security) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে ভারত অ্যাঙ্গোলার তেল এবং গ্যাসের অন্যতম প্রধান ক্রেতা এবং ভবিষ্যতে শোধনাগার ও জ্বালানি প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী।
এই ঐতিহাসিক সফর ভারত-অ্যাঙ্গোলা কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি ছিল কোনও ভারতীয় রাষ্ট্রপ্রধানের অ্যাঙ্গোলায় প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর, যা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তায় অ্যাঙ্গোলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাষ্ট্রপতি মুর্মু লুয়ান্ডায় (Luanda) অ্যাঙ্গোলার রাষ্ট্রপতি জোয়াও ম্যানুয়েল গনসালভেস লোরেনকো (João Manuel Gonçalves Lourenço) এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময় বলেছেন যে ভারতের জ্বালানি চাহিদা পূরণে অ্যাঙ্গোলার অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন,
'ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তায় অ্যাঙ্গোলা সর্বদা একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদারের ভূমিকা পালন করেছে। আমরা অ্যাঙ্গোলার সাথে দীর্ঘমেয়াদী ক্রয় চুক্তি এবং বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছি।'
ভারত বর্তমানে অ্যাঙ্গোলার তেল ও গ্যাসের প্রধান ক্রেতা। ভারতীয় সংস্থাগুলি সেখানকার অনশোর এবং অফশোর আপস্ট্রিম প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেছেন যে ভারত একটি অগ্রণী পেট্রোলিয়াম শোধনকারী দেশ এবং অ্যাঙ্গোলায় নতুন শোধনাগার প্রকল্পগুলিতে অংশীদারিত্ব করতে আগ্রহী।
বন্দে ভারত-এর মতো ট্রেনও অ্যাঙ্গোলায় পাঠাবে ভারত

প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মুর্মু ভারতে তৈরি বন্দে ভারত হাই-স্পিড ট্রেনের উদাহরণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে ভারত তার রেল খাতে বিপ্লব এনেছে এবং অ্যাঙ্গোলার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতেও এমন আধুনিক ট্রেন পাঠানো যেতে পারে। বন্দে ভারত ট্রেন ভারতের আত্মনির্ভরতা অভিযানের প্রতীক। আমরা অ্যাঙ্গোলার রেল নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন যে ভারত ও অ্যাঙ্গোলা উভয়েরই যুব জনসংখ্যার বিশাল শক্তি রয়েছে এবং এটি অপরিহার্য যে উভয় দেশের তরুণরা ভবিষ্যতের দক্ষতা (Future Skills) শিখুক যাতে তারা বৈশ্বিক প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের অংশ হতে পারে।
কৌশলগত খনিজ এবং উদীয়মান প্রযুক্তিতে সহযোগিতা
জ্বালানি সহযোগিতা ছাড়াও, উভয় দেশ কৌশলগত খনিজ (Strategic Minerals) এবং উদীয়মান প্রযুক্তিগুলিতে (Emerging Technologies) অংশীদারিত্ব বাড়াতে সম্মত হয়েছে। অ্যাঙ্গোলা আফ্রিকার এমন দেশগুলির মধ্যে একটি যেখানে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিরল খনিজ (Critical and Rare Minerals) প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেছেন যে ভারতীয় সংস্থাগুলির এই খনিজগুলির অনুসন্ধান এবং প্রক্রিয়াকরণে প্রযুক্তিগত দক্ষতা রয়েছে।
এই অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে বৈদ্যুতিক যান (EVs), সেমিকন্ডাক্টর উত্পাদন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং সবুজ শক্তি (Green Energy)-এর মতো ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করতে পারে।
ঐতিহাসিক সফরের কূটনৈতিক গুরুত্ব
এই সফর ভারত ও অ্যাঙ্গোলার মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MEA) অনুসারে, উভয় দেশের মধ্যে ৪০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ককে নতুন গতি দিতে এই সফর করা হয়েছে। এর আগে, ২০২৫ সালের মে মাসে অ্যাঙ্গোলার রাষ্ট্রপতি লোরেনকো ভারত সফর করেছিলেন, যে সময় ভারত অ্যাঙ্গোলার প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা (Line of Credit) প্রদানের ঘোষণা করেছিল।
রাষ্ট্রপতি মুর্মুর এই সফর আফ্রিকায় ভারতের কূটনৈতিক নাগালকে আরও প্রসারিত করে, যা “গ্লোবাল সাউথ (Global South)”-এর কণ্ঠস্বর হওয়ার দিকে ভারতের নীতিকে তুলে ধরে। অ্যাঙ্গোলা সফর শেষে রাষ্ট্রপতি মুর্মু ১১ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত বতসোয়ানা (Botswana) সফর করবেন। এটিও কোনও ভারতীয় রাষ্ট্রপতির বতসোয়ানায় প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর হবে।












