ভারতে বিরল মৃত্তিকা চুম্বক তৈরির পরিকল্পনা: চীনের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ

ভারতে বিরল মৃত্তিকা চুম্বক তৈরির পরিকল্পনা: চীনের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ

ভারতের কাছে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম বিরল মৃত্তিকা খনিজ ভাণ্ডার রয়েছে, তবে কঠোর নিয়মকানুন এবং প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের কারণে এই খনিজগুলির খনন ও প্রক্রিয়াকরণ এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে রয়ে গেছে।

বিরল মৃত্তিকা উপাদান নিয়ে চীনের একচেটিয়া আধিপত্য এখন অনেক দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈদ্যুতিক যান থেকে মোবাইল ফোন এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পর্যন্ত এই খনিজগুলির চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে, চীন কর্তৃক বিরল মৃত্তিকা উপাদানগুলির (রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস) রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে ভারত সহ বেশ কয়েকটি দেশকে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অটো কোম্পানি এবং প্রযুক্তি খাতের জন্য এটি সরবরাহ শৃঙ্খলে সরাসরি প্রভাব ফেলবে।

ভারতের কাছে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ভাণ্ডার

ভারতের কাছে বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম বিরল মৃত্তিকা খনিজ ভাণ্ডার রয়েছে। তবে এর আহরণ ও প্রক্রিয়াকরণ আজও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। খনন, পরিশোধন এবং চুম্বক তৈরির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি কেবল প্রযুক্তিগতভাবে জটিল নয়, এর জন্য কঠোর পরিবেশগত নিয়মও মেনে চলতে হয়। বর্তমানে, দেশে এই দায়িত্ব ইন্ডিয়ান রেয়ার আর্থস লিমিটেড (আইআরইএল)-এর উপর ন্যস্ত রয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বড় পদক্ষেপ

এবার কেন্দ্র সরকার চীনের এই ব্ল্যাকমেইলিংয়ের জবাব খুঁজে বের করেছে। ভারী শিল্প মন্ত্রক একটি নতুন উৎপাদন-সংযুক্ত প্রণোদনা (পিএলআই) প্রকল্প আনতে চলেছে, যার মোট খরচ প্রায় ১৩৪৫ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামী এই প্রকল্পের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মন্ত্রক অন্যান্য মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয় করে এই প্রকল্পের চূড়ান্ত রূপ দিতে ব্যস্ত রয়েছে।

চুম্বক তৈরির উপর জোর দেওয়া হবে

এই প্রকল্পের অধীনে, ভারতে বিরল মৃত্তিকা চুম্বক তৈরির (রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট) উপর জোর দেওয়া হবে। চুম্বকগুলি হল সেই উপাদান যা বৈদ্যুতিক যান, বায়ু টারবাইন, মোবাইল ডিভাইস এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জামে ব্যবহৃত হয়। মন্ত্রকের সচিব কামরান রিজভি জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের অধীনে কোম্পানিগুলিকে কাঁচামাল থেকে তৈরি চুম্বক পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকরণ নিজেরাই করতে হবে। যে কোম্পানি এই কাজটি সম্পন্ন করবে, তাকে প্রণোদনা দেওয়া হবে।

বেসরকারি ও সরকারি উভয়কেই সুযোগ

পিএলআই প্রকল্পের সুবিধা সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রের কোম্পানিগুলিই পাবে। খবর অনুযায়ী, বর্তমানে দুটি কোম্পানি এতে আগ্রহ দেখিয়েছে, তবে প্রকল্প চূড়ান্ত হওয়ার পরে আরও অনেক কোম্পানি এতে যোগ দিতে পারে। সরকারের ইচ্ছা হল, ভারত এখন কেবল খননে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রক্রিয়াকরণ এবং সমাপ্তিকরণেও आत्मनिर्भर হবে।

চীনের চাল এবং বিশ্বব্যাপী প্রভাব

চীন বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম বিরল মৃত্তিকা প্রক্রিয়াকরণকারী এবং সরবরাহকারী দেশ। এটি বিশ্বের প্রায় ৮৫ শতাংশ বিরল মৃত্তিকা প্রক্রিয়াকরণ করে। যখনই কোনো দেশ চীনের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায়, তখন চীন বিরল মৃত্তিকার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। আমেরিকা, জাপান এবং ইউরোপীয় দেশগুলি এর ফল ইতিমধ্যে ভোগ করেছে। এখন ভারতও এই চাপ থেকে বেরিয়ে আসার দিকে পদক্ষেপ নিয়েছে।

ভারতীয় কোম্পানিগুলির আগ্রহ

দেশের অনেক প্রধান অটো এবং যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক কোম্পানি, যেমন মাহিন্দ্রা, উনো মিন্ডা এবং সোনা কমস্টার এখন ভারতেই বিরল মৃত্তিকা চুম্বক তৈরির সম্ভাবনা খুঁজছে। এই কোম্পানিগুলি মনে করে যে, স্থানীয় উৎপাদন সম্ভব হলে চীনের উপর নির্ভরতা কমবে এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতাও বজায় থাকবে।

মন্ত্রকের অভিপ্রায়, आत्मनिर्भरতার দিকে পদক্ষেপ

ভারী শিল্প মন্ত্রক এই পুরো ক্ষেত্রটিকে জাতীয় নিরাপত্তা এবং শিল্প নীতির সঙ্গে যুক্ত করে দেখছে। তাদের ধারণা, যদি ভারতে বিরল মৃত্তিকা চুম্বক তৈরি শুরু হয়, তাহলে বৈদ্যুতিক যান, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং প্রতিরক্ষা উৎপাদন খাতে ভারতের आत्मनिर्भर হওয়া সম্ভব হবে।

Leave a comment