ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি: ভারতীয় পণ্যের জন্য ইউরোপের দরজা উন্মুক্ত

ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি: ভারতীয় পণ্যের জন্য ইউরোপের দরজা উন্মুক্ত

ভারত ও যুক্তরাজ্যের (ইউকে) মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) অর্থাৎ এফটিএ-তে সম্মতি হওয়ার পর ভারতের ঘরোয়া পণ্যের জন্য ইউরোপের দরজা আরও বেশি করে খুলে গেল। এই চুক্তির ফলে যেখানে বড় বড় ভারতীয় কোম্পানি আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন পরিচিতি পাবে, সেখানে ছোট কৃষক, কারিগর ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্যও নতুন সুযোগ তৈরি হবে।

ব্রিটেনে বিক্রি হবে ভারতীয় স্বাদ ও ঐতিহ্য

এফটিএ-র অধীনে এখন থেকে ভারতের কোल्हाপুরের বিখ্যাত চপ্পল, গোয়ার ঐতিহ্যবাহী ফেনী, নাসিকের ওয়াইন, কেরলের তাড়ি, পাঞ্জাবের বাসমতী চাল এবং তামিলনাড়ুর লঙ্কা-সহ অসংখ্য পণ্য কোনও আমদানি শুল্ক ছাড়াই ব্রিটেনে পৌঁছতে পারবে। এর মানে হল, এখন ব্রিটিশরাও ভারতীয় স্বাদ ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে। বিশেষ বিষয় হল, মোট ৯৯ শতাংশ ভারতীয় পণ্য এই চুক্তির অধীনে ট্যাক্স ফ্রি থাকবে।

কাঁঠাল ও বাজরারও বিদেশে বাড়বে চাহিদা

এতদিন ভারতের অনেক ফল ও সবজি ব্রিটেনে সীমিত পরিমাণে পৌঁছত, কিন্তু এই বাণিজ্য চুক্তির পর এর রপ্তানি ব্যাপক পরিমাণে বাড়বে। কাঁঠাল, বাজরা, হলুদ, এলাচ, গোলমরিচ-এর মতো জৈব ও ঐতিহ্যবাহী পণ্যও সেখানকার বড় রিটেল চেনে জায়গা করে নেবে বলে আশা করা যায়। বিশেষ বিষয় হল, এই পণ্যগুলির জন্য পশ্চিমা দেশগুলিতে আগে থেকেই স্বাস্থ্যের কারণে ভাল চাহিদা রয়েছে।

গোয়ার ফেনী ও কেরলের তাড়ি পাবে নতুন বাজার

ভারতীয় ঐতিহ্যপূর্ণ পানীয় নিয়েও এখন পরিস্থিতি বদলাতে চলেছে। গোয়ার ফেনী, কেরলের তাড়ি এবং নাসিকের ওয়াইন এখন ব্রিটেনের পাব ও রেস্তোরাঁগুলিতে পরিবেশন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকার এই পণ্যগুলিকে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রমোট করছে, যাতে ২০৩০ সাল নাগাদ মাদক পানীয়ের রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছনো যায়। বর্তমানে এই সংখ্যাটি প্রায় ৩৭০ মিলিয়ন ডলার।

মাছ ও সামুদ্রিক পণ্যের হবে বড় চালান

অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা, কেরল এবং তামিলনাড়ুর মতো সামুদ্রিক রাজ্যগুলির মৎস্যজীবীদের জন্যও এই বাণিজ্য চুক্তি আশীর্বাদ প্রমাণ হতে পারে। তাঁদের ধরা সামুদ্রিক পণ্য এখন ব্রিটেনের খাদ্য বাজারে সরাসরি পাঠানো যাবে। ব্রিটিশ বাজারে ভারতীয় সামুদ্রিক পণ্যের চাহিদা আগে থেকেই ভাল, এবং এখন যখন শুল্ক লাগবে না, তখন প্রতিযোগিতায় ভারতের পাল্লা ভারী থাকবে।

বাসমতী চাল ও মশলার হবে ছড়াছড়ি

বাসমতী চাল ভারতীয় রান্নাঘরের পরিচিতি, এবং ব্রিটেনে এর চাহিদা সবসময় থাকে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ থেকে বাসমতীর বড় চালান এখন ট্যাক্স ফ্রি পাঠানো যাবে। এছাড়াও উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির মশলা, বিশেষ করে নাগাল্যান্ডের লঙ্কা, আসামের গোলমরিচ, মেঘালয়ের হলুদ এবং ত্রিপুরার সুগন্ধি চালের মতো পণ্যও ব্রিটেনের বাজারে নামার জন্য প্রস্তুত।

ভারতীয় ইলেকট্রনিক ও কেমিক্যাল সেক্টরও পাবে বুস্ট

শুধু খাদ্য ও ঐতিহ্যবাহী পণ্যই নয়, বরং ইলেকট্রিক মেশিনারি, কেমিক্যালস, লেদার গুডস এবং ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো সেক্টরও এই চুক্তির থেকে লাভবান হবে। বিশেষ বিষয় হল, ভারতের ওষুধের ব্রিটেনে আগে থেকেই ভাল সুনাম আছে, এবং এখন নিয়মে ছাড় দেওয়ার পর এর রপ্তানি আরও সহজ হয়ে যাবে।

ভারতের ছোট কৃষক ও উৎপাদকরা পাবে বড় প্ল্যাটফর্ম

এই চুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, ভারতের ছোট কৃষক, কারিগর ও গ্রামে কাজ করা উদ্যোক্তারা এখন সরাসরি ব্রিটেনের বাজার পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে। সরকারের পরিকল্পনা হল কৃষি পণ্যের রপ্তানিতে গ্রামগুলিকে যুক্ত করা, যাতে লোকাল টু গ্লোবাল থিমকে বাস্তবায়িত করা যায়।

বাণিজ্য বাড়ানোর আছে বড় লক্ষ্য

ভারত ও ব্রিটেন উভয়ই ২০৩০ সাল পর্যন্ত পারস্পরিক বাণিজ্যকে প্রায় দ্বিগুণ করার লক্ষ্য রেখেছে। বর্তমানে এই সংখ্যাটি প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ডলার, যা ১২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর জন্য উভয় দেশ পারস্পরিক বাণিজ্যকে সহজ ও দ্রুত করার দিকে কাজ করছে।

শহরের সঙ্গে গ্রামেও পৌঁছবে সুবিধা

এই পুরো চুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এর প্রভাব শুধু মেট্রো শহরগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। মহারাষ্ট্রের আঙুর, গুজরাটের বাদাম, অন্ধ্রের মাছ, গোয়ার ফেনী, কেরলের তাড়ি এবং উত্তর-পূর্বের মশলার মতো কয়েকশো পণ্য এখন ব্রিটেনে ভারতের শক্তিকে তুলে ধরবে। এর ফলে দেশের ছোট উৎপাদকরা একটি নতুন বাজার এবং নতুন পরিচিতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a comment