ঝুলন্ত দেহ ঘিরে শোকস্তব্ধ পিছাবনি আতঙ্কে পরিবার

ঝুলন্ত দেহ ঘিরে শোকস্তব্ধ পিছাবনি আতঙ্কে পরিবার

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথির পিছাবনি এলাকায় শনিবার সকালে উদ্ধার হল এক কিশোরের ঝুলন্ত দেহ। ছাত্রের নাম প্রকাশ না করা হলেও জানা গিয়েছে, সে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। সকালবেলা বাড়ির পাশের বাগানে একটি আমগাছে তার ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। মুহূর্তে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।সাধারণ এক ছুটির সকালেই বদলে গেল একটি পরিবারের জীবন। নিথর হয়ে ঝুলছে এক ছাত্রদেহ, আর তার পাশে পড়ে রয়েছে একটি সুইসাইড নোট, যা পড়ে চোখে জল আটকে রাখা দায়।

সুইসাইড নোটে নিখুঁত বার্তা— ‘বাবা, আমি ভুল করিনি’

মৃত ছাত্রের পকেট থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে কাঁথি থানার পুলিশ। সেই চিরকুটে স্পষ্ট লেখা— "বাবা, আমি কিছু ভুল করিনি। আমি ওই মেয়েটিকে চিনি না।" এই একটি লাইনেই যেন ফুটে উঠছে এক তরুণ মনের অসহায়তা, সমাজের চাপ, এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা।মৃত্যুর আগে বাবাকে দেওয়া শেষ বার্তা যেন একমাত্র প্রমাণ তার নির্দোষতার। এমন সাদা পাতায় লেখা কালো অক্ষর সমাজের অন্ধ বিশ্বাস আর অপমানের কুপ্রভাব স্পষ্ট করে দেয়।

পরিবারের দাবি— মিথ্যা অভিযোগের জেরেই আত্মহনন!

মৃত ছাত্রের পরিবারের দাবি, সম্প্রতি একটি মেয়ের সঙ্গে নাম জড়িয়ে সমাজে অপমানিত হতে হচ্ছিল ছেলেটিকে। তারা সাফ জানাচ্ছেন, ছেলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। এর জেরেই মানসিক চাপে ভেঙে পড়েছিল সে।পরিবারের কান্না যেন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে সমাজের প্রতি— সত্য যাচাই না করেই কি এক তরুণকে অপমানিত হতে হবে? জীবন কি এতই সস্তা হয়ে গেল?

অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু, তদন্তে নেমেছে পুলিশ

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ছেলেটির ফোনের কল রেকর্ড, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ এবং সোশ্যাল মিডিয়া।পুলিশের হাতে এখন একটাই টুকরো সুতো— সেই সুইসাইড নোট। তা থেকেই খুঁজে বার করার চেষ্টা চলছে মৃত্যুর পিছনে থাকা আসল সত্যটা।

স্কুল বন্ধুরা হতবাক, এলাকাজুড়ে নীরবতা

ছেলেটির স্কুলের সহপাঠীরা বলছে, সে চুপচাপ, কিন্তু ভদ্র এবং নম্র প্রকৃতির ছিল। কেউ ভাবতেই পারেনি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে সে। স্কুল চত্বরে চলছে শোকসভা, শিক্ষকরাও বাকরুদ্ধ।স্কুলের করিডোরে আর বাজছে না সেই পায়ের শব্দ, বেঞ্চে ফাঁকা তার বসার জায়গা। সহপাঠীদের চোখের জলে যেন জ্বলে উঠেছে একটাই প্রশ্ন— কে দায়ী?

সমাজের প্রশ্ন— এক জনের অপমান, আর একজনের মৃত্যু!

ঘটনাটি সমাজের কাছে এক বড় প্রশ্নচিহ্ন ছুড়ে দিল। কোনও তরুণকে অভিযুক্ত করার আগে কি বিচার করা হয়? না কি শুধু সন্দেহই হয়ে ওঠে মৃত্যুর কারণ?এই মৃত্যু কি নিছকই আত্মহত্যা? না কি এটাও এক প্রকার সামাজিক খুন? উত্তর খুঁজছে কাঁথি, আর সেই উত্তরের চাপে কাঁপছে বহু তরুণের মন।

Leave a comment