ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি: সতর্কতা অবলম্বন করছে ভারত

ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি: সতর্কতা অবলম্বন করছে ভারত

ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা এগিয়ে চলেছে, তবে ভারত কৃষি, দুগ্ধ এবং ইস্পাত-এর মতো ক্ষেত্রগুলোতে অভ্যন্তরীণ স্বার্থকে ધ્યાનમાં রেখে সতর্কতা অবলম্বন করছে।

India-America: ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বহু বছর ধরে ঝুলে থাকা বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে এখন তৎপরতা বেড়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক बयान এই প্রত্যাশিত চুক্তির সম্ভাবনাকে আরও জোরালো করেছে। ট্রাম্প বলেছেন যে, আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে একটি 'অ interim বাণিজ্য চুক্তি' চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনায় রয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে শীঘ্রই একটি বড় ঘোষণা হতে পারে।

এই আলোচনায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি वरिष्ठ দল, যারা বর্তমানে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে। এই দলটি বাণিজ্যিক নীতি এবং শুল্ক কাঠামো নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছে। ট্রাম্প স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, আমেরিকা সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি করেছে, তেমনই ভারতের সঙ্গেও একটি চুক্তি শীঘ্রই হতে পারে।

ভারতের সতর্ক রণনীতি

আমেরিকা এই চুক্তি নিয়ে বেশ উৎসাহিত এবং সেখানকার সরকার ক্রমাগত এর পক্ষে বিবৃতি দিচ্ছে। এর বিপরীতে, ভারতের রণনীতি এখনও পর্যন্ত संतुलित এবং সংযত। ভারত শুধু প্রতিটি বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে তাই নয়, সেই ক্ষেত্রগুলোর ওপর বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে, যেখানে অভ্যন্তরীণ বাজারের সুরক্ষা জড়িত — যেমন কৃষি, দুগ্ধ এবং অটোমোবাইল সেক্টর। ভারত সরকারের চেষ্টা হলো এই চুক্তির ফলে দেশের কৃষক, দুগ্ধ উৎপাদনকারী এবং ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। এই কারণে ভারত আমেরিকা কে এই সেক্টরগুলোতে বেশি ছাড় দিতে অস্বীকার করেছে।

ট্রাম্পের বড় ঘোষণা: ভারতের সাথেও চুক্তি শীঘ্রই

বুধবার হোয়াইট হাউসে বাহরাইনের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ট্রাম্প বলেন, 'আমরা সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছি, এবং এখন ভারতের সঙ্গেও একটি চুক্তি খুব কাছেই আছে।' এর আগে ট্রাম্প এও বলেছিলেন যে, ভারতের সঙ্গে চুক্তিটি ইন্দোনেশিয়ার সাথে করা চুক্তির মতোই হতে পারে। অর্থাৎ, আমেরিকা ভারতীয় বাজারে আরও ভালো প্রবেশাধিকার পাবে এবং ভারত কিছু শুল্ক ছাড় পেতে পারে, তবে এই ভারসাম্য এখনও আলোচনার বিষয়।

আমেরিকার রণনীতি: ২০% শুল্কের চাপ?

সাম্প্রতিক মার্কিন নীতির কথা বললে, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুসারে, আমেরিকা ইন্দোনেশিয়ার পণ্যের উপর ১৯% ট্যাক্স লাগিয়েছে। এই বাণিজ্যিক রণনীতি এখন ভারতের জন্য সতর্কবার্তা হতে পারে। ট্রাম্প সরকার ভারতের উপরেও একই ধরনের শুল্ক, অর্থাৎ ২০% পর্যন্ত আরোপ করার কথা বিবেচনা করছে, যাতে ভারতকে চুক্তির জন্য চাপে আনা যায়। যদিও ভারত এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি, তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা আমেরিকার এই নীতি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কৌশল হতে পারে।

ভারতের দাবি: ন্যূনতম শুল্ক এবং দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা

ভারত এই বাণিজ্য চুক্তিতে মূলত নিম্নলিখিত দাবিগুলো রাখছে:

  • কমপক্ষে শুল্ক: ভারত চায় আমেরিকা তার পণ্যের উপর শুল্ক কম রাখুক, যাতে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা সেখানে বেশি লাভ করতে পারে।
  • কৃষি ও দুগ্ধ খাতের সুরক্ষা: ভারত মার্কিন দুগ্ধজাত পণ্য এবং কৃষি পণ্যের জন্য তার দরজা সম্পূর্ণরূপে খুলে দিতে রাজি নয়।
  • ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর ছাড়: আমেরিকা এর আগে ভারতের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিল। ভারত এখন এই পণ্যগুলোর উপর ছাড় চায়।
  • অটোমোবাইলের উপর ভারসাম্য: ভারতের ধারণা আমেরিকা থেকে আসা অটোমোবাইলগুলির উপর শুল্ক থাকলে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর ক্ষতি হতে পারে।

চুক্তির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য

এই বাণিজ্য চুক্তি শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকে নয়, ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। চীনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যিক উত্তেজনার মধ্যে আমেরিকা এশিয়ায় তার বাণিজ্যিক সহযোগীদের খুঁজছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত একটি শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে। অন্যদিকে ভারতের জন্য এই চুক্তি আমেরিকা র মতো বড় বাজারে স্থায়ী প্রবেশাধিকার পাওয়ার একটি সুযোগ। এর ফলে ভারতের রপ্তানি বাড়বে এবং বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে একটি শক্তিশালী ভূমিকা তৈরি হবে।

Leave a comment