দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর ভারত ও মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক যেন নতুন মোড়ে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের তেল আমদানি থেকে শুরু করে ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কনীতি—সব মিলিয়ে দুই দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছিল কূটনৈতিক উত্তেজনা। কিন্তু হঠাৎই সুর নরম করে আলোচনার টেবিলে ফিরতে ইচ্ছুক বলে জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানালেন, ভারতও এই আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখতে প্রস্তুত।
ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি ও অচলাবস্থা
মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, ভারতীয় আমদানির উপর ৫০ শতাংশ ট্যারিফ চাপানো হবে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ জরিমানার কথাও বলেছিলেন তিনি। ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছিল। এমনকি ভারতকে বিশেষ প্যাকেজ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এই আবহেই ট্রাম্প হঠাৎ সুর নরম করে আলোচনায় ফেরার কথা বললেন।
আলোচনার জন্য প্রস্তুত হোয়াইট হাউস
ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লেখেন, “আমেরিকা ও ভারত বাণিজ্য বাধা দূর করতে সক্রিয়ভাবে আলোচনা চালাচ্ছে। আমি শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলব।” তাঁর দাবি, আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশের জন্যই সফল ফলাফল আসবে। এই বক্তব্যে স্বস্তি ফিরেছে ভারতীয় বাণিজ্য মহলে।
মোদীর ইতিবাচক বার্তা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স-এ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রাকৃতিক অংশীদার। আমি নিশ্চিত এই আলোচনা দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।” তিনি আরও যোগ করেন, ভারতীয় দল দ্রুততার সঙ্গে আলোচনায় এগোচ্ছে এবং তিনি নিজেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপের অপেক্ষায় রয়েছেন।
রাশিয়া প্রসঙ্গে নরম সুর
ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানির সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প কড়া সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ভারত শুল্ক ছাড় চাওয়ার আবেদন ‘খুব দেরিতে’ করেছে। তবে সর্বশেষ বক্তব্যে তিনি সুর নরম করে আবারও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। এটি ইঙ্গিত করছে, কৌশলগত কারণে আমেরিকা ভারতকে পাশে চাইছে।
বিশেষ সম্পর্কের ওপর জোর
ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, বাণিজ্য নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও মোদীর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক মজবুত। তিনি ভারতকে ‘বিশেষ বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছেন। কূটনীতিকদের মতে, এই ধরনের বার্তা আসলে রাজনৈতিক সংকেতও বটে, কারণ মার্কিন নির্বাচনের প্রাক্কালে এশিয়ার বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা ট্রাম্পের জন্য জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত–মার্কিন আলোচনার এই নতুন অধ্যায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ আমেরিকা বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি, আর ভারত এশিয়ার দ্রুততম বর্ধনশীল বাজার। যদি দুই দেশের মধ্যে শুল্ক ইস্যু সমাধান হয়, তবে প্রযুক্তি, কৃষি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি খাতে বড়সড় চুক্তি হতে পারে।
রাজনৈতিক তাৎপর্য
ভারত–মার্কিন সম্পর্ক কেবল অর্থনীতিতেই সীমাবদ্ধ নয়। ভূরাজনীতিতেও এর প্রভাব রয়েছে। চীন ও রাশিয়ার প্রভাব মোকাবিলায় আমেরিকার কাছে ভারতের সহযোগিতা অপরিহার্য। অন্যদিকে, ভারতও মার্কিন প্রযুক্তি ও বিনিয়োগকে দেশের উন্নয়নের চালিকা শক্তি হিসেবে দেখে। তাই দুই দেশের আলোচনাকে কেবল বাণিজ্য নয়, কৌশলগত সমীকরণের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুল্ক বৃদ্ধি ও বাণিজ্যিক অচলাবস্থার মাঝেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানালেন, ভারত–মার্কিন সম্পর্ক মজবুত করতে আলোচনার টেবিলে ফিরতে তিনি প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আলোচনা বিশ্ব বাণিজ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।