মধ্যপ্রদেশের একজন মহিলা বিচার বিভাগীয় আধিকারিক কর্তৃক উত্থাপিত প্রশ্ন ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনার দাবি রাখে। তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতন বিচারকের বিরুদ্ধে উৎপীড়ন ও দুর্ব্যবহারের মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন।
নয়াদিল্লি: ভারতের বিচার বিভাগ, যাকে গণতন্ত্রের শেষ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, আজ নিজেই গুরুতর প্রশ্নের সম্মুখীন। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের একজন মহিলা বিচারকের পদত্যাগ, সুপ্রিম কোর্টে 'ভুয়ো মামলা' থেকে নেওয়া রায়, দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা এবং হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত বিতর্ক বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার উপর বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে।
মহিলা বিচারক অদিতি কুমার শর্মার পদত্যাগ: সিস্টেম আমাকে ব্যর্থ করেছে
মধ্যপ্রদেশের শাহদোল জেলার সিভিল জজ (জুনিয়র ডিভিশন) অদিতি কুমার শর্মা ২৮ জুলাই তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দেন। তিনি তাঁর চিঠিতে লিখেছেন: আমি বিচার বিভাগীয় পরিষেবা এই কারণে ছাড়ছি না যে আমি অসফল হয়েছি, বরং এই কারণে যে প্রতিষ্ঠানটিই আমাকে ব্যর্থ করেছে। তাঁর অভিযোগ, যে ঊর্ধ্বতন জেলা বিচারকের বিরুদ্ধে তিনি উৎপীড়ন ও দুর্ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে কোনও রকম তদন্ত ছাড়াই হাইকোর্টের বিচারক পদে নিয়োগ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন যে তিনি তথ্যপ্রমাণ পেশ করেছিলেন, তা সত্ত্বেও কোনও শুনানি হয়নি। এতে প্রশ্ন ওঠে যে নারী সুরক্ষা ও বিচারের নামে বিচার বিভাগ কি কেবল লোক দেখানো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ?
সুপ্রিম কোর্টে 'ভুয়ো বিবাদী' থেকে পাওয়া আদেশ: আদালতও কি প্রতারণার শিকার?
আরেকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা বিহারের মুজাফফরপুর থেকে সামনে এসেছে, যেখানে একটি জমি সংক্রান্ত বিবাদে একজন আবেদনকারী ভুয়ো বিবাদী দাঁড় করিয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে নিজের পক্ষে রায় আদায় করে নিয়েছিল। পরে আসল বিবাদী আদালতে জানায় যে সে কখনও আপস করেনি এবং মামলার বিষয়ে কিছুই জানত না। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে এমনকি সুপ্রিম কোর্টও এখন সুপরিকল্পিত প্রতারণার শিকার হতে পারে। এই ঘটনা বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং তথ্য-যাচাই ব্যবস্থার উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
জাস্টিস যশবন্ত ভার্মা কেস: বিচার ব্যবস্থায় দুর্নীতির ছায়া
আরেকটি বিতর্কিত ঘটনা হল জাস্টিস যশবন্ত ভার্মার, যাঁর বাড়ি থেকে সন্দেহজনক নগদ টাকায় ভর্তি বস্তা উদ্ধার হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করিয়েছিল এবং রিপোর্টের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু করার সুপারিশ করেছিল। যদিও, ভার্মা সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করে এই তদন্তকে অবৈধ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন। এই মামলাটি আদালতে বিচারাধীন, তবে এতে স্পষ্ট যে বিচার বিভাগের অভ্যন্তরেও তদন্ত এবং জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া প্রায়শই দুর্বল হয়ে থাকে।
উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত একটি মামলায় একজন এডিএম (অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট)-এর কার্যকারিতা নিয়ে শুধুমাত্র এই কারণে প্রশ্ন তুলেছে কারণ তিনি ইংরেজি বলতে পারেন না। আদালত বলেছে যে এমন একজন আধিকারিক কি কার্যকরী প্রশাসনিক ভূমিকা পালনে সক্ষম? এই আদেশকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হলে আদালত সেই আদেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে। এই ঘটনা ভাষাগত পক্ষপাতিত্ব এবং সংবিধানে উল্লিখিত ভারতীয় ভাষাগুলোর প্রতি সম্মানের বিতর্ককে আবারও সামনে এনেছে।
কলেজিয়াম সিস্টেম নিয়ে গভীর হচ্ছে প্রশ্ন
ভারতের বিচার বিভাগে উচ্চ পদে নিয়োগের জন্য কলেজিয়াম সিস্টেমকে সবসময় সংবেদনশীলতাহীন, অস্বচ্ছ এবং পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে মনে করা হয়েছে। সম্প্রতি, যে বিচারকের বিরুদ্ধে মহিলা নির্যাতনের অভিযোগ ছিল, তাঁর পদোন্নতি এই ব্যবস্থার নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি একটি রায়ে রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালদের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের জন্য তিন মাসের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।
এই রায়ের উপর স্বয়ং রাষ্ট্রপতি ১৪টি প্রশ্ন তুলে स्पष्टीकरण চেয়েছেন, যার জবাবের জন্য এখন একটি সংবিধান पीठ গঠিত হয়েছে। এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতি বিচার বিভাগ এবং কার্যনির্বাহী বিভাগের মধ্যে বাড়তে থাকা মতভেদকে दर्शाয়।