ইন্দোর-দেওয়াস সড়কে যানজট: এনএইচএআই-এর বিতর্কিত জবাবে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট

ইন্দোর-দেওয়াস সড়কে যানজট: এনএইচএআই-এর বিতর্কিত জবাবে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট

গত সপ্তাহে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর-দেওয়াস জাতীয় সড়কে প্রায় ৫০ ঘণ্টা ধরে চলা তীব্র যানজট এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই সময়ে হাজার হাজার যানবাহন আটকে ছিল এবং চিকিৎসার অভাবে তিনজন মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে সোমবার মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের ইন্দোর বেঞ্চে এনএইচএআই-এর দেওয়া জবাবে সবাই বিস্মিত হয়েছে।

এনএইচএআই-এর জবাবে বিতর্ক বেড়েছে

শুনানির সময় যখন এনএইচএআই-এর আইনজীবীকে জবাব দিতে বলা হয়, তখন তিনি বলেন, 'মানুষজন কোনো জরুরি কাজ ছাড়া এত তাড়াতাড়ি ঘর থেকে কেন বের হয়?' এই মন্তব্যের জেরে আদালত থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এবং সোশ্যাল মিডিয়া পর্যন্ত তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মানুষ এটিকে সংবেদনহীন এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ হিসেবে বর্ণনা করছেন। হাইকোর্টও এনএইচএআই-এর জবাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সমস্ত বিভাগ থেকে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছে।

এনএইচএআই এবং প্রশাসনকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে

বিচারপতি বিবেক রুসিয়া এবং বিচারপতি বিনোদ কুমার দ্বিবেদীর বেঞ্চ অ্যাডভোকেট আনন্দ অধিকারী দ্বারা দায়ের করা আবেদনের শুনানি করে কেন্দ্র সরকার, এনএইচএআই, ইন্দোর জেলা প্রশাসন এবং পুলিশকে নোটিশ জারি করেছে। সকল পক্ষকে এক সপ্তাহের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, মহাসড়ক নির্মাণকারী একটি বেসরকারি কোম্পানিকেও প্রতিপক্ষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালত জানিয়েছে, আপাতত ভারী যান চলাচলের জন্য বিকল্প পথের ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য একটি সুসংহত কৌশল তৈরি করতে হবে।

আবেদনকারীর আর্জি, আদালতের তত্ত্বাবধানে কাজ হোক

এই মামলায় আবেদনকারী আইনজীবী গিরিশ বর্ধন হাইকোর্টের কাছে আবেদন করেছেন, ইন্দোর-দেওয়াস সড়কে চলমান নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধান যেন আদালত নিজেই করে। তিনি বলেন, ৫০ ঘণ্টা ধরে চলা যানজট শুধুমাত্র প্রশাসনিক গাফিলতির ফল এবং যতক্ষণ না দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।

তিনি যুক্তি দেন যে জাতীয় মহাসড়কের মতো ব্যস্ততম রাস্তাগুলোতে নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও পরিকল্পনার অধীনে হওয়া উচিত, যাতে সাধারণ মানুষের ন্যূনতম অসুবিধা হয়।

গাড়িতে আটকে পড়া বৃদ্ধের মৃত্যুর ঘটনা সামনে এল

এরই মধ্যে, বিজলপুরের বাসিন্দা বিজয় পাঞ্চাল দাবি করেছেন যে যানজটে আটকা পড়ার সময় তাঁর বাবা কমল পাঞ্চাল (৬৫) হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারায় তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি জানান, যানজটে গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে ছিল এবং কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি। অবশেষে, তাঁর বাবা গাড়িতেই মারা যান।

এই হৃদয়বিদারক ঘটনা প্রশাসনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ঘটনার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া আসছে। অনেক স্থানে নাগরিকরা প্রতিবাদ করে ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং খারাপ নির্মাণ পরিকল্পনার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে

বিষয়টি আলোচনার জন্ম দেওয়ার পরে, স্থানীয় প্রশাসন মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, এনএইচএআই-এর প্রতিক্রিয়ার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, বিষয়টি আরও গুরুতর রূপ নিয়েছে।

এখন সবার নজর হাইকোর্টের পরবর্তী শুনানির দিকে, যেখানে সাধারণ মানুষ আশা করছেন এই মামলার সুস্পষ্ট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Leave a comment