প্রতি বছর ১৯শে জুলাই "আন্তর্জাতিক রিটেইনার দিবস" পালিত হয়, যাতে মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া যায় যে দাঁতের সারিবদ্ধতা এবং হাসি দীর্ঘকাল ধরে বজায় রাখার জন্য রিটেইনার পরা কতটা জরুরি। এই দিনটি বিশেষভাবে সেইসব মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যারা কখনও ব্রেসেস পরেছেন এবং এখন রিটেইনারের মাধ্যমে সেই মেহনত ধরে রাখতে চান।
আন্তর্জাতিক রিটেইনার দিবসের ইতিহাস
আন্তর্জাতিক রিটেইনার দিবসের শুরু ২০২১ সালে। এটি ভিভেরা রিটেইনার্স (ইনভিলাইন কোম্পানির একটি শাখা) দ্বারা পালিত হওয়া শুরু হয়েছিল। ইনভিলাইন হল সেই ব্র্যান্ড যা ঐতিহ্যবাহী ব্রেসেসের পরিবর্তে স্বচ্ছ এবং আরামদায়ক অ্যালাইনার ও রিটেইনার তৈরি করে। এই কোম্পানিটি বিশ্বব্যাপী ডেন্টিস্ট এবং অর্থোডন্টিস্টদের সাথে মিলিত হয়ে এই দিনটির সূচনা করে যাতে রিটেইনারের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো যায়।
রিটেইনার কী এবং এটি কেন জরুরি?
যখনই কোনো ব্যক্তি ব্রেসেস খোলেন, তারপর দাঁতের অবস্থান বজায় রাখার জন্য ডাক্তার রিটেইনার পরার পরামর্শ দেন। রিটেইনার হল এক প্রকার প্লাস্টিক ও ধাতু দিয়ে তৈরি সরঞ্জাম, যা দাঁতকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। যদি এটি নিয়মিতভাবে না পরা হয়, তাহলে দাঁত আবার পুরোনো অবস্থানে ফিরে যেতে পারে। সরল এবং সুন্দর হাসি বজায় রাখার জন্য রিটেইনার পরা ততটাই জরুরি, যতটা ব্রেসেস পরানো।
রিটেইনার পরার সুবিধা
- হাসিকে স্থায়ী করে: ব্রেসেস থেকে পাওয়া হাসি রিটেইনার দীর্ঘকাল ধরে বজায় রাখে।
- মুখের স্বাস্থ্য ভালো হয়: সঠিক দাঁতের অবস্থানের কারণে খাবার চিবানো, কথা বলা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সহজ হয়ে যায়।
- TMJ-এর মতো সমস্যা থেকে বাঁচায়: কিছু ক্ষেত্রে রিটেইনার TMJ (Temporomandibular Joint)-এর মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
- রি-ট্রিটমেন্ট থেকে বাঁচায়: যদি রিটেইনার না পরা হয়, তাহলে পুনরায় ব্রেসেস লাগানোর প্রয়োজন হতে পারে, যা সময় এবং অর্থ দুটোই নষ্ট করে।
সেলিব্রিটিরাও ব্রেসেস ও রিটেইনার পরেছেন
যদি আপনি মনে করেন যে রিটেইনার শুধু সাধারণ মানুষের সমস্যা, তাহলে এই নামগুলো আপনাকে অবাক করতে পারে:
- আমেরিকা ফেরা – বাস্তব জীবনে শুধু রিটেইনার পরেন, কিন্তু তাঁর টিভি চরিত্র "Ugly Betty"-তে ব্রেসেসও পরেছিলেন।
- প্রিন্স হ্যারি – ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সদস্য প্রায় এক দশক ধরে ব্রেসেস পরেছিলেন।
- গ্যাব্রিয়েল ইউনিয়ন – ৯ থেকে ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত ব্রেসেস এবং তারপর রিটেইনার।
- টম ক্রুজ – ৪০ বছর বয়সে স্বচ্ছ ব্রেসেস ব্যবহার করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক রিটেইনার দিবস কীভাবে পালন করবেন?
১. রিটেইনার আবার পরা শুরু করুন
যদি আপনি এটি পরা ছেড়ে দিয়েছেন, তাহলে এটাই সময় আবার শুরু করার। ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং নিজের রিটেইনারকে নিয়মিত রুটিনের অংশ করুন।
২. ডেন্টিস্ট বা অর্থোডন্টিস্টের থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন
যদি আপনার রিটেইনারে কোনো সমস্যা হয় বা আপনি নতুন বানাতে চান, তাহলে আজই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন।
৩. সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতা ছড়ান
#InternationalRetainerDay হ্যাশট্যাগ দিয়ে নিজের রিটেইনারের গল্প বা পুরোনো ছবি শেয়ার করুন এবং অন্যদেরকেও অনুপ্রাণিত করুন।
৪. বাচ্চাদের অনুপ্রাণিত করুন
যদি আপনার বাচ্চা বা কিশোর ব্রেসেস পরছে বা পরেছে, তাহলে তাদের রিটেইনারের গুরুত্ব বোঝান।
রিটেইনারের সঠিক যত্ন কিভাবে নেবেন?
- প্রতিদিন পরিষ্কার করুন – টুথব্রাশ এবং হালকা সাবান দিয়ে রিটেইনার পরিষ্কার করুন।
- গরম জল থেকে বাঁচুন – রিটেইনারকে কখনও গরম জলে ডোবাবেন না, এতে এটি বেঁকে যেতে পারে।
- কঠিন বাক্সে রাখুন – ব্যবহার না করার সময় রিটেইনারকে তার কেসে রাখুন।
- নিয়মিত পরীক্ষা করান – প্রতি ৬ মাসে নিজের ডাক্তারের থেকে রিটেইনার পরীক্ষা করান।
আন্তর্জাতিক রিটেইনার দিবস আমাদের এটা বোঝানোর একটা দারুণ সুযোগ যে রিটেইনার পরা কেবল একটি অভ্যাস নয়, বরং একটি দায়িত্ব যা আমাদের হাসি এবং দাঁতের স্বাস্থ্যকে দীর্ঘকাল ধরে বজায় রাখতে সাহায্য করে। অনেক সময় মানুষ ব্রেসেস খোলার পর উদাসীন হয়ে যায়, যার ফলে সমস্ত মেহনত বিফলে যায়। তাই এই বিশেষ দিনে আমাদের সকলের এই প্রতিজ্ঞা করা উচিত যে আমরা নিয়মিতভাবে নিজের রিটেইনার ব্যবহার করব এবং ডেন্টাল চেকআপ করাতে থাকব, যাতে আমাদের হাসি সবসময় সুন্দর এবং সুস্থ থাকে।