ইশাক ডারের সফর: ১৯৭১ সালের ক্ষমা নিয়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা

ইশাক ডারের সফর: ১৯৭১ সালের ক্ষমা নিয়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা

পাকিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইশাক ডারের সফর ঘিরে পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কে উত্তেজনা বেড়েছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ নিয়ে ক্ষমা চাওয়া বিতর্কে বাংলাদেশ স্পষ্ট জানিয়েছে, পুরনো ইস্যু একটি বৈঠকে সমাধান করা সম্ভব নয়।

PAK-Bangladesh: পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে আকস্মিক তিক্ততা সবাইকে অবাক করেছে। ১৩ বছর পর পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী ইশাক ডার বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন। এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন উষ্ণতা আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু ১৯৭১ সালের যুদ্ধ নিয়ে ইশাক ডারের দেওয়া এক বিবৃতি পরিস্থিতি পরিবর্তন করে দেয়।

ইশাক ডারের দাবি ও বাংলাদেশের অসন্তোষ

ঢাকা পৌঁছানোর পর ইশাক ডার দাবি করেন যে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ এবং ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি এর আগে দুবার সমাধান করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম সমঝোতা হয় ১৯৭৪ সালে এবং পরবর্তীতে জেনারেল পারভেজ মুশাররফও এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন। তাই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি এখন বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত।

কিন্তু বাংলাদেশের এই দাবি একেবারেই পছন্দ হয়নি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন স্পষ্ট করে বলেন যে ৫৪ বছর ধরে অমীমাংসিত বিষয়গুলো এক দিনে সমাধান করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা এবং অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান এখনও বাকি।

কেন অসন্তুষ্ট বাংলাদেশ

১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নারীদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ চায় পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘটনাগুলোর জন্য ক্ষমা চাক।

কিন্তু ইশাক ডারের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে পাকিস্তান এই বিষয়টিকে আগেই নিষ্পত্তি হয়েছে বলে মনে করে। বাংলাদেশ এতে আপত্তি জানিয়েছে এবং বলেছে যে যতক্ষণ না পর্যন্ত সকল বিতর্কিত বিষয়ের স্পষ্ট সমাধান হয়, ততক্ষণ সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে না।

ঢাকায় কূটনীতির মোড় পরিবর্তন

ইশাক ডারের সফরের আগে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চলছিল। পাকিস্তান চেয়েছিল বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হোক এবং ভারতের উপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি হোক।

কিন্তু ইশাক ডার ঢাকা পৌঁছানোর পরেই পরিস্থিতি বদলে যায়। বাংলাদেশ স্পষ্ট করে জানায় যে শুধু বন্ধুত্বের কথা বললেই সম্পর্ক ভালো হবে না। আসল সমস্যাগুলোর সমাধান করা জরুরি।

১৩ বছর পর এই সফর

পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর এই সফর ১৩ বছর পর হল। ২০১২ সালে হিনা রব্বানি খার বাংলাদেশ গিয়েছিলেন। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে উচ্চ-পর্যায়ের সফর হয়নি। ইশাক ডারের যাত্রা প্রথমে এই বছর এপ্রিলে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। এর পরেও পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছিল।

বাংলাদেশের কড়া প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন যে পাকিস্তানকে এখনও অনেক বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের ঘটনার জন্য ক্ষমা, আর্থিক বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি এবং আটকে পড়া মানুষদের ফেরত পাঠানো ইত্যাদি বিষয় এখনও অমীমাংসিত। তিনি বলেন, কারো এটা আশা করা উচিত নয় যে এত পুরনো এবং গুরুতর বিষয় একটি বৈঠকে মিটে যাবে। এই বিষয়গুলো ভবিষ্যতে আলোচনার অংশ হয়ে থাকবে।

আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছিল না

আশ্চর্যের বিষয় হল এটি কোনো আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছিল না। এটি একটি সাধারণ সাক্ষাৎ ছিল, কিন্তু কথাবার্তা এটিকে একটি বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করেছে। তৌহিদ হোসেন বলেন, যদি পাকিস্তান মনে করে যে বিষয়গুলো আগেই সমাধান হয়ে গেছে, তবে এটি তাদের ভুল ধারণা। যদি তেমনটা হত, তাহলে বিতর্ক এতদিনে শেষ হয়ে যেত।

Leave a comment