রাজ্যে প্রথম এআই হাবের সূচনা

রাজ্যে প্রথম এআই হাবের সূচনা

বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে বাংলার প্রযুক্তি যুগের নব অধ্যায় ঘোষণা করলেন মমতা

পশ্চিমবঙ্গের প্রযুক্তি খাতে এক ঐতিহাসিক দিন। গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের প্রথম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) হাবের উদ্বোধনের কথা। এতদিন যা ছিল কেবল ভাবনায়, এবার তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। রাজারহাটের বুকে আইটিসি ইনফোটেকের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ‘গ্লোবাল সেন্টার অফ এক্সেলেন্স ফর এআই’। বাংলা এবার আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি মানচিত্রে নিজের উপস্থিতি আরও দৃঢ় করতে চলেছে।

রাজারহাট থেকে সরাসরি ৪০ দেশের প্রযুক্তি বাজারে বাংলা

নিউটাউনের মাটি থেকে আন্তর্জাতিক এআই পরিষেবার যাত্রা শুরু | মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, এই সেন্টার থেকে অন্তত ৪০টি দেশের ক্লায়েন্টদের জন্য সরবরাহ করা হবে অত্যাধুনিক এআই পরিষেবা। ভারতীয় প্রযুক্তি শিল্পের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবার বিশ্ববাজারের দরজায় কড়া নাড়ছে। শুধু রাজ্য নয়, গোটা দেশের গর্ব হয়ে উঠতে চলেছে এই নতুন এআই সেন্টার। সফটওয়্যার, ডেটা অ্যানালিটিক্স থেকে শুরু করে মেশিন লার্নিং— সব ক্ষেত্রেই এবার ‘মেড ইন বেঙ্গল’ ট্যাগ লাইনের গুরুত্ব বাড়বে।

১৭ একর জমিতে গড়ে উঠল প্রযুক্তি নগরী

এনকেডিএ-র ছাড়পত্রে স্বপ্নের ক্যাম্পাসের বাস্তব রূপ | নিউটাউনের অ্যাকশন এরিয়া-থ্রিতে ১৭ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে আইটিসি ইনফোটেকের এই বিশাল প্রযুক্তি ক্যাম্পাস। রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় এনকেডিএ ইতিমধ্যেই প্রকল্পের জন্য ‘অকুপেন্সি সার্টিফিকেট’ প্রদান করেছে। এত বড় প্রকল্পের জন্য প্রশাসনিক ছাড়পত্র দ্রুত মঞ্জুর হওয়ায় উদ্যোক্তা মহল বেশ খুশি। প্রযুক্তি নির্মাণের ক্ষেত্রে এ রাজ্যের দক্ষতা এবং দ্রুত পদক্ষেপের নতুন প্রমাণ এই উদ্যোগ।

পাঁচ হাজার প্রযুক্তিপ্রেমীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ

প্রতীক্ষিত চাকরির সুবাস, তরুণদের মুখে হাসি | প্রকল্পের প্রথম ধাপেই অন্তত পাঁচ হাজার পেশাদার কর্মী এই ক্যাম্পাস থেকে কাজ শুরু করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু প্রযুক্তি নয়, বিভিন্ন প্রশাসনিক ও সাপোর্ট পরিষেবার ক্ষেত্রেও তৈরি হবে প্রচুর চাকরির সুযোগ। রাজ্যের হাজার হাজার তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার্থী ও বেকার যুবক-যুবতীর জন্য এ যেন এক স্বপ্নের খবর।

আকাশছোঁয়া টাওয়ার থেকে নলেজ ক্যাম্পাস: প্রযুক্তির পরিকাঠামোয় নজর কাড়া উপস্থাপনা

বিশ্বমানের পরিকাঠামোয় সাজানো বাংলার প্রযুক্তি ভবিষ্যৎ | আইটিসি ইনফোটেকের এই ক্যাম্পাসে থাকছে তিনটি আলাদা ভবন। একটি আকাশছোঁয়া আধুনিক অফিস টাওয়ার, যেখানে প্রযুক্তি জগতের শীর্ষ কোম্পানিগুলি তাদের কার্যক্রম চালাবে। দ্বিতীয়ত, একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবসায়িক সহায়তা কেন্দ্র, যেখানে থাকবে ক্লায়েন্ট মিটিং, প্রজেক্ট ডেলিভারি সহ নানা রকম সাপোর্ট পরিষেবা। তৃতীয়ত, একটি নলেজ ক্যাম্পাস, যেখানে গবেষণা, ডেভেলপমেন্ট এবং ট্রেনিং হবে নতুন কর্মীদের। প্রায় ১৪.৫ লক্ষ বর্গফুট জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা এই ক্যাম্পাস প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য এক নতুন স্বপ্নের ঠিকানা।

১,২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগে টেকনোলজি হাবে বাংলার দৌড়

অর্থনীতির চাকা ঘোরাবে প্রযুক্তির গতি | আইটিসি ইনফোটেক এই প্রকল্পে মোট বিনিয়োগ করেছে প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই বিনিয়োগ রাজ্যের অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করবে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এত বড় বিনিয়োগ এর আগে পশ্চিমবঙ্গের প্রযুক্তি খাতে খুব কমই দেখা গেছে। শুধু কর্মসংস্থান নয়, পর্যটন, আবাসন এবং খুচরো ব্যবসায়ও এই প্রকল্পের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা বাংলা

ডিজিটাল ভারতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ‘ডিজিটাল বাংলা’র উত্থান | মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, এই প্রকল্পের সাফল্য শুধু বাংলার নয়, গোটা দেশের জন্য এক বড় বার্তা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে এখন পশ্চিমবঙ্গ এক লাভজনক গন্তব্য। আগামী দিনে আরও বহু বহুজাতিক সংস্থা এই রাজ্যে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে লগ্নি করতে এগিয়ে আসবে, এমন আশাবাদও প্রকাশ করেছেন তিনি।

প্রশাসনিক সহযোগিতা ও কম অপারেশন কস্টে সন্তুষ্ট আইটিসি

ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’-এ বাংলার অগ্রগতি | আইটিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সঞ্জীব পুরী জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার খরচ অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই কম। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সরকারি প্রশাসনের সহযোগিতা এবং দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়া। ফলে বিনিয়োগের জন্য বাংলা এখন অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে বলে মত তাঁর।

অকুপেন্সি সার্টিফিকেট: নিরাপত্তা ও গুণগত মানের সরকারি স্বীকৃতি

নিউটাউনের প্রযুক্তি ক্যাম্পাসে সরকারি ছাড়পত্রের সিলমোহর |মুখ্যমন্ত্রী নিজের এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, নিউ টাউন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনকেডিএ) এই প্রকল্পের জন্য ‘অকুপেন্সি সার্টিফিকেট’ দিয়েছে। অর্থাৎ, এই প্রযুক্তি ক্যাম্পাস নির্মাণের সমস্ত সরকারি মানদণ্ড এবং নিরাপত্তা বিধি পূরণ করেছে। যা ভবিষ্যতে আরও আন্তর্জাতিক প্রকল্পের জন্য পথ প্রশস্ত করবে বলে মত পর্যবেক্ষকদের।

হিডকোর বরাদ্দ জমিতে বেসরকারি প্রযুক্তি বিপ্লব

সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের সফল রূপএই প্রযুক্তি ক্যাম্পাস গড়ে উঠেছে হিডকো কর্তৃক বরাদ্দ করা ১৭ একর জমির উপর। রাজ্যের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শিল্পবান্ধব নীতির জোরে এই ধরনের বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্প ভবিষ্যতের আরও বড় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ টানার জন্য বাংলার দিকে নজর ঘোরাবে বিশ্ববাজারের প্রযুক্তি সংস্থাগুলি।

Leave a comment