বিদেশে মন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বেইজিংয়ে চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর এটি প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ, যেখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এসসিও শীর্ষ সম্মেলন: ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর মঙ্গলবার বেইজিংয়ে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এই সাক্ষাৎ শঙ্ঘাই সহযোগিতা সংগঠন (এসসিও)-এর বিদেশ মন্ত্রীদের বৈঠকের অবকাশে অনুষ্ঠিত হয়। জয়শঙ্করের এই সফর বহু দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চীন সামরিক সংঘর্ষের পর এটি তাঁর চীন সফর।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে জয়শঙ্করের বক্তব্য
সাক্ষাতের পর বিদেশ মন্ত্রী জয়শঙ্কর সামাজিক মাধ্যমে তথ্য শেয়ার করে জানান, তিনি রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংকে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি জানান, এই আলোচনায় ভারত-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে। জয়শঙ্কর আরও বলেন, এই আলোচনায় উভয় দেশের নেতাদের দেওয়া দিকনির্দেশকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এসসিও-র মঞ্চে বৈঠকের প্রেক্ষাপট
জয়শঙ্কর বর্তমানে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত শঙ্ঘাই সহযোগিতা সংগঠনের বিদেশ মন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। এই বৈঠকের সময় সকল সদস্য দেশের বিদেশ মন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল। এই সময়ে জয়শঙ্কর ও শি জিনপিংয়ের মধ্যে এই প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ হয়।
গালওয়ান সংঘর্ষের পর এই প্রথম সাক্ষাৎ
২০২০ সালে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের সৈন্যদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের পর থেকে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। এই সংঘর্ষে ভারতের ২০ জন জওয়ান শহীদ হয়েছিলেন, যেখানে চীনও তাদের সৈন্যদের হতাহতের কথা স্বীকার করেছে। এই প্রেক্ষাপটে জয়শঙ্করের এই চীন সফর এবং শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
চীনা বিদেশ মন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা
বেইজিং পৌঁছানোর পর বিদেশ মন্ত্রী জয়শঙ্কর চীনের বিদেশ মন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গেও বিস্তারিত আলোচনা করেন। এই আলোচনায় উভয় দেশের মধ্যে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখা, এলএসি (লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল)-এ উত্তেজনা কমানো, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়। উভয় দেশ সীমান্ত বিবাদের সমাধানের জন্য কূটনৈতিক ও সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমে আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে।
ভারতের অবস্থান স্পষ্ট: আলোচনার মাধ্যমে সমাধান, সীমান্তে শান্তি জরুরি
জয়শঙ্কর আলোচনার সময় স্পষ্ট করেছেন যে ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায়, তবে এটি তখনই সম্ভব যখন সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। তিনি বলেন, সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তি। যতক্ষণ না সীমান্তে আস্থা ফিরে আসে, ততক্ষণ অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতি ব্যাহত হবে।
এসসিও-র বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন
বিদেশ মন্ত্রী জয়শঙ্কর এসসিও-র বিদেশ মন্ত্রীদের বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবাদ, আঞ্চলিক সহযোগিতা, সংযোগ এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের মতো বিষয়গুলিতে ভারতের ভূমিকা তুলে ধরবেন। এই বৈঠক আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আফগানিস্তান সংকট এবং এশিয়ায় সামরিক উত্তেজনা-এর মতো চ্যালেঞ্জগুলি রয়েছে।
আগে সিঙ্গাপুরে গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন
চীন সফরের আগে জয়শঙ্কর সিঙ্গাপুরে ছিলেন, যেখানে তিনি ভারত-সিঙ্গাপুর মন্ত্রী পর্যায়ের গোলটেবিল সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। এই সময় তিনি অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পেশ করেন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় ভারতের ভূমিকা স্পষ্ট করেন।