সীমান্তের শেষ প্রান্তে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য : কালিম্পং জেলার পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় টডে ও টাংটা গ্রামের মতো সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। ভারত–ভুটান সীমান্তের একেবারে শেষ প্রান্তে অবস্থিত এই গ্রামগুলি প্রকৃতির এক অদ্ভুত ক্যানভাস। সবুজ পাহাড়, ঝিরিঝিরি বয়ে চলা নদীর ধারা আর দূরে ডোকলাম পর্বতের দৃশ্য মিলেমিশে এ জায়গাটিকে করে তুলেছে এক অনন্য গন্তব্য।
প্রকৃতির শান্তি মেলে অন্য রকম অভিজ্ঞতায়
এই গ্রামগুলিতে পৌঁছে প্রথমেই চোখে পড়ে শান্তির আবহ। সীমান্তের গ্রাম হলেও এখানে নেই অস্থিরতা কিংবা ভয়, বরং চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে নিরবতা। প্রকৃতির নিস্তব্ধতা ও পাহাড়ি হাওয়া মিলেমিশে ভ্রমণকারীদের দেয় এক প্রশান্ত অনুভূতি। পুজোর আগে প্রকৃতির কোলে কয়েকটা দিন কাটাতে চাইলে এই গন্তব্য নিঃসন্দেহে আদর্শ।
সংস্কৃতির মেলবন্ধনে ভিন্ন স্বাদ
টডে–টাংটা গ্রামে ভারতীয় ও ভুটানি সংস্কৃতির এক অসাধারণ মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায়। ঘরবাড়ির গঠন, স্থানীয় পোশাক এবং উৎসব-আচার অনুষ্ঠানে সেই ছাপ স্পষ্ট। ভ্রমণকারীরা তাই এখানে এসে পায় বৈচিত্র্যের স্বাদ। একই সঙ্গে দুই সংস্কৃতির ছোঁয়া এই গ্রামগুলিকে অন্য গন্তব্যের থেকে আলাদা করে তুলেছে।
পাহাড়ি জলেই চিকিৎসার গুণ
স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, টাংটা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীর জল নাকি পেটের নানা সমস্যা সারাতে কার্যকর। বহু পর্যটক সেই জলের স্বাদ নিয়ে এর গুণাগুণের প্রশংসা করেছেন। প্রকৃতির উপহার এই নদীর জল যেন এখানকার মানুষের কাছে জীবনের অমূল্য সম্পদ।
কালিম্পং শহরের দৃশ্য এক ফ্রেমে
ডুরপিনদারা ভিউ পয়েন্ট থেকে দেখা যায় গোটা কালিম্পং শহর ও বয়ে চলা তিস্তাপাড়। শীতকালে এখানে নেমে আসে বরফাচ্ছাদিত দৃশ্যপট, যা চোখ জুড়িয়ে দেয়। পর্যটকরা বলেন, স্নো-ভিউ থেকে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করা এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
সহজ যাতায়াত ও বাড়তি আকর্ষণ
ডুয়ার্স ভ্রমণের সঙ্গে মিলিয়ে এখানে আসা যায় সহজেই। মালবাজার স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় এই সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে। কোনও বাড়তি ঝামেলা নেই, ফলে পর্যটকদের কাছে গন্তব্যটি ক্রমেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
সস্তায় হোমস্টে ও পাহাড়ি আতিথেয়তা
টডে ও টাংটা গ্রামে রয়েছে ছোট ছোট হোমস্টে, যেখানে কম খরচেই থাকা যায়। পাহাড়ি আতিথেয়তা ও স্থানীয় মানুষের আন্তরিকতা ভ্রমণকারীদের মনে গেঁথে যায়। কয়েকটা রাত কাটালেই বোঝা যায়, এ জায়গাটিই আসল শান্তির ঠিকানা।
কালিম্পং ভ্রমণ মানেই শুধু শহর বা তিস্তা নয়, সীমান্তের শেষ প্রান্তের এই গ্রামগুলোও পর্যটন মানচিত্রে নিজেদের স্থান করে নিচ্ছে। পাহাড়, নদী, সংস্কৃতি আর নিরবতার মেলবন্ধন টডে–টাংটা গ্রামকে বানিয়েছে এক অনন্য গন্তব্য। পুজোর ছুটিতে ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে এই ছোট্ট গ্রামগুলো আপনার তালিকায় অবশ্যই রাখার মতো।