কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ সরকারি হাসপাতালে হুমকি চিকিৎসককে!

কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ সরকারি হাসপাতালে হুমকি চিকিৎসককে!
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

পূর্ব কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে উত্তেজনা ছড়াল তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের আচরণে। অভিযোগ, স্ত্রীর আত্মীয়ার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসককে রেজিস্ট্রেশন বাতিলের হুমকি দেন বিধায়ক স্বয়ং। চিকিৎসক মেহবুবার রহমান এই অভিযোগ জমা দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।

স্ত্রীর আত্মীয়ার চিকিৎসা করাতে গিয়েই শুরু নাটক!

আসানসোলের বাসিন্দা ৮৬ বছরের এক বৃদ্ধা, যিনি কাঞ্চনের স্ত্রীর দিদিমা, তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে হাজির হন উত্তরপাড়ার বিধায়ক। সেই সময় আউটডোর না থাকলেও, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের নির্দেশে বৃদ্ধাকে মেডিসিন বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেই ভিড়ের মধ্যে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ঘিরে প্রশ্নবাণে উত্তপ্ত হয়ে ওঠেন বিধায়ক ও তাঁর স্ত্রী।

রোগীদের ভিড়ের মধ্যেই ‘বিশেষ গুরুত্ব’ পেলেন বিধায়কের রোগী!

সাধারণ রোগীদের পাশ কাটিয়ে কাঞ্চনের অনুরোধে আগেভাগে দেখা হয় তাঁর আত্মীয়ার। কিন্তু তারপরেও চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে একের পর এক প্রশ্নে বিভ্রান্ত হন চিকিৎসক। রক্তচাপ পরীক্ষা থেকে শুরু করে ওষুধ নির্ধারণ—সব ক্ষেত্রেই কথায় কথায় হস্তক্ষেপ শুরু করেন কাঞ্চন ও তাঁর স্ত্রী।

আপনারা কি এমবিবিএস পাস?—চিকিৎসকের প্রশ্নে ঘনিয়ে ওঠে বিতর্ক

চিকিৎসক প্রশ্ন করেন বিধায়ককে: "আপনারা চিকিৎসা বিষয়ে এত কথা বলছেন কেন?" এই বক্তব্য শুনেই কাঞ্চন ও শ্রীময়ী ক্ষেপে যান বলে অভিযোগ। তারপরেই কাঞ্চনকে বলতে শোনা যায়—"আপনার রেজিস্ট্রেশন নম্বর বলুন, বাতিল করে দেবো!" হুমকির সেই দৃশ্য শুনে প্রতিবাদে মুখর হয় অন্যান্য রোগীরাও।

রোগীদের সামনেই হুমকির অভিযোগ, তারপরই হাসপাতাল ত্যাগ বিধায়ক-দম্পতির

অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে কাঞ্চন ও শ্রীময়ী হাসপাতালে আর না থেকে দ্রুত সরে পড়েন। পরে চিকিৎসক নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করে লিখিতভাবে অভিযোগ দাখিল করেন, যা স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানো হয়।

কাঞ্চনের দাবি উল্টে চিকিৎসকই দুর্ব্যবহার করেছেন আমার স্ত্রীর সঙ্গে!

অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা যুক্তি পেশ করেন তৃণমূল বিধায়ক। তাঁর কথায়, “আমার স্ত্রীকে ওই চিকিৎসক প্রশ্ন করেন, আপনি যদি সব জানেন, তবে এখানে কেন এসেছেন?” কাঞ্চনের দাবি, তিনিই বরং অসম্মানিত হয়েছেন।

আমি যদি প্রভাব খাটাতাম, টিকিট কেটে ডাক্তার দেখাতাম না—কাঞ্চনের পাল্টা সাফাই

নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে কাঞ্চনের বক্তব্য—“আমি বিধায়ক বলেই আমাকে সহজে টার্গেট করা হচ্ছে।” তিনি দাবি করেন, হাসপাতালে অত বেশি ভিড় ছিল না, বরং বৃষ্টির জন্য ফাঁকাই ছিল চিকিৎসালয়। অতএব, অন্য রোগীদের বিক্ষোভের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন তিনি।

হাসপাতাল-পথ থেকে রাজনীতির আঙিনায় বিতর্কের আগুন

একদিকে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রশ্ন, অন্যদিকে জনপ্রতিনিধির সম্মানজনক আচরণের সীমা—এই দুই প্রশ্নে ঘনীভূত হচ্ছে বিতর্ক। কাঞ্চন মল্লিকের এই বিতর্ক তৃণমূলের পক্ষেও অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Leave a comment