কাওঁড় যাত্রার উৎসব সারা উত্তর ভারতে ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে। হরিদ্বার থেকে জল নিয়ে ফিরতে থাকা লক্ষাধিক কাওঁড়ীদের কথা মাথায় রেখে দিল্লি-এনসিআর-এ নিরাপত্তা ও ট্র্যাফিকের বিষয়ে প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত দেখা যাচ্ছে। রাজধানী দিল্লিতে ২২ জুলাই পর্যন্ত চলতে থাকা এই যাত্রা শান্তিপূর্ণ ও সুসংগঠিতভাবে সম্পন্ন করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে কড়া নিরাপত্তা
দিল্লি পুলিশ রাজধানীর সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। প্রায় ৫,০০০-এর বেশি দিল্লি পুলিশকর্মী এবং আধা-সামরিক বাহিনীর ৫০টি কোম্পানির সমান সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। কাওঁড় পথের উপর নজরদারির জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। মন্দির, প্রধান মোড় এবং জনাকীর্ণ এলাকাগুলিতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। সমস্ত জেলার ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন তাঁদের এলাকায় নিয়মিতভাবে উপস্থিত থাকেন এবং পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখেন।
পরিবর্তিত ট্র্যাফিক রুট
দিল্লি ট্র্যাফিক পুলিশ কাওঁড় যাত্রার কারণে অনেক রুটে ট্র্যাফিক ডাইভারশন लागू করেছে। বিশেষ করে কালিন্দী কুঞ্জ, নয়ডা, বদরপুর এবং আগ্রা নাহার মার্গে আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। প্রশাসন জনসাধারণের কাছে আবেদন জানিয়েছে, তাঁরা যেন এই রাস্তাগুলি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকেন এবং ডিএনডি ফ্লাইওয়ে বা আশ্রম রোডের মতো বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করেন।
বৃষ্টির কারণে অতিরিক্ত সতর্কতা
দিল্লি-এনসিআর-এ ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে প্রশাসন আরও সতর্কতা অবলম্বন করছে। জল জমা এবং দুর্ঘটনা এড়াতে বিশেষ দল মোতায়েন করা হয়েছে। দিল্লি বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ (ডিডিএমএ) মেডিকেল টিম, জল সরবরাহকারী ট্যাঙ্ক এবং বিপর্যয় ত্রাণ ইউনিট প্রস্তুত রেখেছে, যাতে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ করা যায়।
৭৭৪টি শিবিরের চিহ্নিতকরণ
কাওঁড়ীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে দিল্লিতে ৭৭৪টি স্থান শিবির স্থাপনের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭৪টি শিবিরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেখানে থাকার ব্যবস্থা, জল এবং চিকিৎসার মতো প্রয়োজনীয় সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বাকি শিবিরগুলির জন্য অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।
মথুরা ও হরিদ্বারে কড়াকড়ি
মথুরায় ডিএম ও এসএসপি স্বয়ং রাস্তায় নেমে কাওঁড় যাত্রার উপর নজর রাখছেন। পরিচ্ছন্নতা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণের উপর বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। ১৬টি পিআরভি (পুলিশ রেসপন্স ভেহিকল) এবং ৪টি মোবাইল টিম लगातार টহল দিচ্ছে। অন্যদিকে, হরিদ্বারে কাওঁড় যাত্রার সময় দুটি পৃথক ঘটনায় চার কাওঁড়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজন পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়েছিল এবং দুজন একটি দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টের নোটিশ
কানপুরে কাওঁড় যাত্রা চলাকালীন একটি শোভাযাত্রায় হাঙ্গামা হয়, যেখানে এক হোম গার্ড ও আরও দুইজন আহত হন। পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং সিসিটিভির মাধ্যমে আরও ২০ জনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। একই সময়ে, সুপ্রিম কোর্ট ইউপি সরকারকে একটি নোটিশ জারি করেছে, যেখানে কাওঁড় পথের দোকানগুলিতে মালিকের তথ্য সহ কিউআর কোড লাগানোর নীতিকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আবেদনকারী এটিকে ধর্মীয় বৈষম্য এবং গোপনীয়তার অধিকারের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন।
বারেলিতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে এফআইআর
বারেলিতে এক স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন গান গাওয়ার অভিযোগ উঠেছে, যা কাওঁড় যাত্রার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। যদিও তদন্তে জানা গেছে যে ভিডিওটি পুরনো ছিল এবং এটিকে বিভ্রান্তিকরভাবে ভাইরাল করা হয়েছিল।
দিল্লিতে কাওঁড়ীদের প্রবেশের জন্য গাজিয়াবাদ বর্ডার, আনন্দ বিহার, ভূপুরা, অপ্সরা, লোনী বর্ডার এবং কাশ্মীরী গেটের মতো রাস্তাগুলি নির্ধারণ করা হয়েছে। ওয়াজিরাবাদ, জিটি রোড ও লোনী রোডকে প্রধান কাওঁড় পথ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জরুরি অবস্থার জন্য কাওঁড়ীদের সহায়তার জন্য হেল্পলাইন নম্বরও চালু করা হয়েছে।
নজরদারি ও সমন্বয়ের উপর জোর
প্রশাসনের অগ্রাধিকার হল, যাত্রাকালে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এবং তীর্থযাত্রীরা কোনো অসুবিধা ছাড়াই তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন। এর জন্য পিসিআর ভ্যান, কুইক রেসপন্স টিম এবং অ্যাম্বুলেন্সগুলিকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। সমন্বয় ও নজরদারির কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে কাওঁড় যাত্রা কেবল নিরাপদ নয়, সুচারুভাবে সম্পন্ন করা যায়।