কলকাতায় ফের অগ্নিকাণ্ড বন্ডেল গেটের মেডিক্যাল সামগ্রীর কারখানায় বিধ্বংসী আগুনে চাঞ্চল্য

কলকাতায় ফের অগ্নিকাণ্ড বন্ডেল গেটের মেডিক্যাল সামগ্রীর কারখানায় বিধ্বংসী আগুনে চাঞ্চল্য

শহরের বুকে ফের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, আতঙ্ক বন্ডেল গেটে

শনিবার সকালে কলকাতার বন্ডেল গেট এলাকায় ঘটে গেল আরও একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। বন্ডেল রোড সংলগ্ন একটি মেডিক্যাল সামগ্রী প্রস্তুতকারক কারখানায় হঠাৎই আগুন লেগে যায়। ধোঁয়ার কুণ্ডলী ক্রমশ আকাশে উঠে যায়, গোটা এলাকা ঢেকে যায় কালো ধোঁয়ার চাদরে। স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হয় প্রবল আতঙ্ক।ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় হঠাৎ করে আগুন লাগার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। আগুনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে কিছুক্ষণের মধ্যেই কারখানা চত্বরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দমকল

সূত্রে খবর, ভেতরে বিস্ফোরণের মতো শব্দ শোনা গিয়েছে একাধিকবার।

দমকলের একাধিক ইঞ্জিন যুদ্ধকালীন তৎপরতায়, পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে নয়খবর পেয়ে দমকলের একাধিক ইঞ্জিন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ফায়ার ব্রিগেড সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত মোট ৬টি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজে নিযুক্ত। তবে কারখানার ভিতরে দাহ্য রাসায়নিক থাকার সম্ভাবনায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগছে।বেশ কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। দমকল আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কারখানার ভিতরে মেডিক্যাল সরঞ্জামের পাশাপাশি রাসায়নিক দ্রব্য মজুত ছিল, যা আগুনকে আরও উস্কে দিয়েছে। ফোম ও জল ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে।

দমকল কর্মীদের একাংশ আগুন নেভানোর পাশাপাশি খতিয়ে দেখছেন, ভিতরে কেউ আটকে রয়েছেন কি না। আগুন ও ধোঁয়ার তীব্রতায় ভিতরে প্রবেশ করতে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। তল্লাশি চলছে।প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, কারখানাটি সকালের পালায় খোলা ছিল। সেই সময় কর্মচারীদের একটি অংশ ভিতরে ছিলেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে তাঁরা নিরাপদে বাইরে বেরিয়ে এসেছেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। এই বিষয়টি নিয়ে দমকল ও পুলিশ যৌথ তদন্তে নেমেছে।

রাসায়নিক সংমিশ্রণে বিস্ফোরণ! আশেপাশের এলাকাতেও কম্পন অনুভব

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানিয়েছেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। জানলা কেঁপে উঠেছে পাশের বাড়িগুলিতে। আশঙ্কা, কারখানার ভিতরে থাকা রাসায়নিকই এই বিস্ফোরণের কারণ।ঘটনার ভয়াবহতায় অনেকেই প্রথমে ভূমিকম্প ভেবে চমকে ওঠেন। পরে বুঝতে পারেন আগুন লেগেছে কারখানায়। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, মেডিক্যাল প্রোডাক্ট তৈরির কিছু কিছু কাঁচামালে দাহ্য উপাদান থাকে, যা উচ্চ তাপমাত্রায় বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।

পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা দল ঘটনাস্থলে, ঘিরে ফেলা হয়েছে এলাকা

বন্ডেল গেটের গোটা এলাকা ইতিমধ্যেই ঘিরে ফেলেছে কলকাতা পুলিশ। যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দলও এসে পৌঁছেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে আশেপাশের ঘরবাড়ি থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।স্থানীয় থানার পুলিশ ছাড়াও লালবাজার থেকে বিশেষ তদন্তকারী দল এসে পৌঁছেছে। কারখানার আগুন কিভাবে লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে শর্ট সার্কিট বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার আশঙ্কা করা হলেও তদন্ত না হলে কিছু বলা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছে দমকল।

প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে, লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল কি?

এই কারখানায় কি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল? অগ্নি নিরাপত্তা শংসাপত্র ছিল কি না? এখন এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ এর আগেও কলকাতার বহু এলাকায় এমন কারখানায় আগুন লেগেছে যেখানে ছিল না প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা।বিশেষ করে শহরের মধ্যে এমন মেডিক্যাল সামগ্রীর কারখানা চালানোর আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ছাড়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। দমকল বিভাগ ও পুরসভার তরফে লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপণ পরিকাঠামো ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি না থাকে, তাহলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে প্রশাসনের তরফে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে তদন্ত জোরদার, কলকাতার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসার পরই তদন্তে জোর দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।শহরের বুকে একের পর এক আগুন লাগার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নাগরিকেরা। বাগরি মার্কেট, নিউ মার্কেট, বাইপাস, নন্দীঘাট—প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে মাঝেমধ্যেই ঘটছে এই ধরনের ঘটনা। এবারও যদি গাফিলতির প্রমাণ মেলে, তাহলে জবাবদিহির মুখে পড়তে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

Leave a comment