নিম্নচাপের ঘনীভবনে ফের ভারী বর্ষণের আশঙ্কা তিন দিনেই মহানগরে ২২০ মিমিরও বেশি বৃষ্টি!

নিম্নচাপের ঘনীভবনে ফের ভারী বর্ষণের আশঙ্কা তিন দিনেই মহানগরে ২২০ মিমিরও বেশি বৃষ্টি!

১২ দিনের ব্যবধানে দু'বার ভারী বর্ষণ, জুলাইয়ে বৃষ্টির রেকর্ডে ছাপ ফেলছে ২০২৫

মহানগর কলকাতার জুলাই মাসে এমন ধারাবাহিক ভারী বর্ষণ বহু বছর পর দেখা গেল। ৭ জুলাইয়ের ৮৯.৬ মিমি এবং ১৯ জুলাইয়ের ৮৪ মিমি—এই দুই দিনের মধ্যে ১৫ জুলাইতেও শহর পেয়েছে ৪২.৩ মিমি বৃষ্টি। সব মিলিয়ে মাত্র তিন দিনেই শহরে ২১৯.৯ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অল্প সময়ের মধ্যে এমন বৃষ্টির ঘনঘটা জলবায়ুর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বর্ষার ছন্দে বদল: বছর পিছু একবার নয়, এবার মাত্র এক মাসে দু'বার ভারী বর্ষণ কলকাতায়

পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজির (IITM) তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছর ধরে প্রতি বর্ষায় কলকাতা পেত একবার করে ভারী বর্ষণ। কিন্তু চলতি বছর সেই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে। বর্ষা এখনও মাঝপথে, অথচ শহর ইতিমধ্যেই দু'বার ‘হেভি রেইনফল’ পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বর্ষার নতুন ধারা, যার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও জড়িয়ে রয়েছে।

বৃষ্টির বাটখারা বলছে আরও আছে বাকি, তৈরি হচ্ছে নতুন নিম্নচাপ!

আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে, ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে নতুন একটি নিম্নচাপ তৈরির সম্ভাবনা প্রবল। সেই সঙ্গে মৌসুমি অক্ষরেখা বর্তমানে রাজস্থান থেকে শুরু করে ফতেগড়, মুজফফরপুর, বাঁকুড়া, কাঁথি হয়ে সোজা বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করেছে। অপর একটি অক্ষরেখা বিহারের উত্তরাংশ থেকে ঝাড়খণ্ড হয়ে ওডিশা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই তিনটি সিস্টেমের মিলিত প্রভাবে বৃষ্টি ফের চূড়ায় উঠবে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে আবহাওয়া দফতর।

কলকাতায় বর্ষা এখনও ‘অন দ্য গো’, স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই বেশি বৃষ্টি হতে চলেছে

আইআইটিএম-এর তথ্য বলছে, জুলাই মাসে কলকাতায় গড় বৃষ্টিপাত হয় প্রায় ৩৭১.৬ মিমি। আর ২০২৫-এর জুলাইয়ে ইতিমধ্যেই শহর পেয়েছে ৩৫৩ মিমি বৃষ্টি, যার মধ্যে বড় অংশ এসেছে মাত্র তিন দিনে। এখন যদি আগামী সপ্তাহে নিম্নচাপ সক্রিয় হয় এবং ফের ভারী বৃষ্টিপাত হয়, তাহলে এবারের জুলাই স্বাভাবিকের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি বর্ষণসিক্ত হয়ে উঠবে।

২৩ জুলাই থেকে ফের শুরু হতে পারে ভারী বৃষ্টি, প্রস্তুত থাকুন দক্ষিণবঙ্গ

আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, আগামী বুধবার অর্থাৎ ২৩ জুলাই থেকে দক্ষিণবঙ্গের বহু জেলায় ফের ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতার সঙ্গে হুগলি, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণের আরও কিছু জেলার জন্য এই বৃষ্টিপাত হতে পারে চরম মাত্রার। জল জমা, ট্র্যাফিক জ্যাম এবং পুরসভা পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলেও সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বর্ষা যখন আশীর্বাদ ও অভিশাপের দোলাচলে—প্রস্তুত কি শহর?

বৃষ্টির প্রভাব যেমন কৃষিক্ষেত্রে ইতিবাচক হতে পারে, তেমনি অতিবৃষ্টির ফলে শহরের নিকাশি, যাতায়াত ও স্বাভাবিক জনজীবনে দেখা দিতে পারে বিপর্যয়। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সামনে আরও ভারী বৃষ্টি থাকায় প্রশাসন ও নাগরিকদের যৌথভাবে সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে হবে। না হলে নিম্নচাপের ঘনঘটা রূপ নিতে পারে নাগরিক দুর্দশার নতুন অধ্যায়ে।

Leave a comment