আলিপুর চিড়িয়াখানায় রহস্যজনক উধাও ৩২১ প্রাণী শোরগোলের মাঝে সরানো হল অধিকর্তাকে

আলিপুর চিড়িয়াখানায় রহস্যজনক উধাও ৩২১ প্রাণী শোরগোলের মাঝে সরানো হল অধিকর্তাকে

নিবন্ধন তালিকা থেকে গায়েব ৩২১ প্রাণী, তীব্র চাঞ্চল্য আলিপুর চিড়িয়াখানায়

কলকাতার ১৪৯ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী আলিপুর চিড়িয়াখানায় হঠাৎ করেই ৩২১টি প্রাণী ‘নিবন্ধন তালিকা’ থেকে অদৃশ্য! বন দফতরের কাছে জমা পড়া বার্ষিক রিপোর্টে এই অস্বাভাবিক ফারাক ধরা পড়তেই রীতিমতো তোলপাড় রাজ্য প্রশাসনে। কোথায় গেল এত প্রাণী? কোনো ভুল হিসেব, না কি এর নেপথ্যে রয়েছে চক্রান্ত? তদন্তে নেমেছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় দুই স্তরের কর্তৃপক্ষ।

২০২৩-২৪ বনাম ২০২৪-২৫: এক বছরে অর্ধেক প্রাণী কমে গেল কীভাবে?

এক শীর্ষ বন দফতরের কর্তা জানিয়েছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চিড়িয়াখানায় মোট ৬৭২টি প্রাণী ছিল। কিন্তু পরের বছরের তালিকায় দেখা যায়, মাত্র ৩২১টি প্রাণীর অস্তিত্ব নথিভুক্ত। এর মানে, মাত্র ১২ মাসের ব্যবধানে ৩২১টি প্রাণী কোথায় হারিয়ে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তদন্তকারীরা। এই সংখ্যাটি স্বাভাবিক নয় বলেই প্রাথমিক তদন্তে সন্দেহ আরও গাঢ় হয়েছে।

ফাঁস হতেই ‘নিয়মিত বদলি’? বিতর্কে অধিকর্তা বদলির সিদ্ধান্ত

এই অসঙ্গতি প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা অরুণ মুখার্জিকে বদলি করে পাঠানো হয়েছে দার্জিলিংয়ের পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্কে। যদিও বন দফতর দাবী করেছে, এটি ‘নিয়মিত বদলি’র অংশ—তবে ঘটনার সময়কাল ও চাপা অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই বদলিকে ঘিরে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে। তাঁর স্থানে নতুন অধিকর্তা হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন আইএফএস আধিকারিক তৃপ্তি শাহ।

সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট প্রকাশের পরই তদন্তে নামল কেন্দ্রীয় টিম

গত মাসেই পশ্চিমবঙ্গ বন দফতর যখন এই প্রাণী তালিকার বিস্ফোরক ফাঁস প্রকাশ করে, তখনই বিশেষ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই সূত্র ধরে কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ (CZA)-এর একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্তকারী দল সম্প্রতি কলকাতা চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে এসে প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করেছে। রিপোর্টে অনিয়মের প্রমাণ মিললে দায়ীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

সরকারি স্তরে চলছে রিপোর্ট বিশ্লেষণ, মুখে কুলুপ বনদফতরের

প্রধান বন্যপ্রাণী ওয়ার্ডেন এস. সুন্দরিয়াল জানিয়েছেন, “আমরা রিপোর্ট হাতে পেয়েছি এবং তার বিশ্লেষণ চলছে। যথাসময়ে সমস্ত তথ্য জনসমক্ষে আনা হবে।” তিনি আরও বলেন, “সরকার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তবে অধিকর্তা বদলির সঙ্গে এই অস্বাভাবিক প্রাণী-সংক্রান্ত তথ্য গায়েবের সরাসরি কোনও সম্পর্ক রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।

১৪৯ বছরের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা, বাড়ছে প্রশ্নচিহ্ন

আলিপুর চিড়িয়াখানার ১৪৯ বছরের ইতিহাসে এত বড় আকারের প্রাণী তালিকা গরমিল আগে দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি নিছক হিসেবের গণ্ডগোল নয়, বরং এর পেছনে থাকতে পারে গোপন অনিয়ম বা গাফিলতি। বিভিন্ন পশু সংরক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক আদানপ্রদান নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি প্রাণীর হিসেব রাখা বাধ্যতামূলক। এই ঘটনার জেরে ভবিষ্যতে আরও কড়া নিয়ন্ত্রণ আসতে পারে চিড়িয়াখানা প্রশাসনে।

তদন্তেই নির্ভর করছে ভবিষ্যতের পরবর্তী পদক্ষেপ

বন দফতর সূত্রে খবর, রিপোর্ট বিশ্লেষণের পরে যদি অসঙ্গতির প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসে, তবে দায়ী আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি, চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরীণ তথ্য রক্ষণ এবং প্রাণী ব্যবস্থাপনার উপর নতুন গাইডলাইন প্রণয়ন করার কথাও ভাবা হচ্ছে। এবার নজর থাকবে তদন্তের রিপোর্ট কবে প্রকাশ পায় এবং সেই অনুযায়ী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকার।আলিপুর চিড়িয়াখানার নিবন্ধন তালিকা থেকে অদৃশ্য ৩২১টি প্রাণীবন দফতরের রিপোর্টে ফাঁস হওয়া অসঙ্গতির জেরে অধিকর্তার বদলিবদলি ‘নিয়মিত’ দাবি করলেও জোরালো সন্দেহ প্রশাসনিক স্তরেকেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ (CZA) শুরু করেছে তদন্ত১৪৯ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন, তদন্তে নজর সবার

Leave a comment