মহারাষ্ট্র রাজনৈতিক মামলার শুনানির তারিখ আগস্টে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সুপ্রিম কোর্ট

মহারাষ্ট্র রাজনৈতিক মামলার শুনানির তারিখ আগস্টে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সুপ্রিম কোর্ট

সর্বোচ্চ আদালত সোমবার মহারাষ্ট্রের রাজনীতি-সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানির জন্য উদ্ধব ঠাকরে শিবিরের আবেদনের শুনানির তারিখ আগস্ট মাসে ধার্য করেছে।

মুম্বাই: মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে শিবসেনার ‘তির-ধনুক’ নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে চলমান বিতর্ক এবার তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) উদ্ধব ঠাকরে শিবিরের (Uddhav Thackeray Faction) দায়ের করা আবেদনের শুনানির জন্য আগস্ট মাসে দিন ধার্য করেছে। আবেদনে মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধ্যক্ষের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তি জানানো হয়েছে, যেখানে একনাথ শিন্ডের (Eknath Shinde Faction) নেতৃত্বাধীন শিবিরের ‘তির-ধনুক’ (Bow & Arrow) প্রতীক প্রদানের সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মনে করা হয়েছিল।

আসলে ঘটনা কি?

শিবসেনায় ভাঙনের পর থেকেই ‘তির-ধনুক’ নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে আইনি লড়াই চলছে। মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধ্যক্ষ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এক আদেশে একনাথ শিন্ডে শিবিরকে আসল শিবসেনা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের এই প্রতীকটি অর্পণ করেন। এর বিরুদ্ধে উদ্ধব ঠাকরে শিবির সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন।

উদ্ধব ঠাকরের বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত সংবিধান বেঞ্চের নির্দেশনার পরিপন্থী। তার দাবি, সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেই আসল দল নির্ধারিত হয় না, বরং দলের আদর্শগত এবং সাংগঠনিক পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ।

সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি জয়েমাল্য বাগচির বেঞ্চ জানিয়েছে, এই মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে এবং এই অনিশ্চয়তা দূর করা জরুরি। আদালত স্পষ্টভাবে বলেছে যে আগস্টে এই মামলার শুনানি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। আদালত উদ্ধব শিবিরের আইনজীবী কপিল সিব্বলের উদ্দেশ্যে বলেছে, আমরা প্রধান আবেদনের নিষ্পত্তির জন্য আগস্টে শুনানির তারিখ নির্ধারণ করব।

কপিল সিব্বল যুক্তি দিয়েছিলেন যে মহারাষ্ট্রে আসন্ন স্থানীয় নির্বাচনগুলির (local body elections) কথা বিবেচনা করে এই বিতর্কের দ্রুত সমাধান অত্যন্ত জরুরি। অন্যদিকে, শিন্ডে শিবিরের আইনজীবী নীরজ কৃষ্ণ কউল বলেন যে আদালত ইতিমধ্যে দ্রুত শুনানির আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।

কখন কি ঘটেছিল?

  • ১০ জানুয়ারি ২০২৪: মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধ্যক্ষ রাহুল নেরুকার শিন্ডে শিবিরের ১৬ জন বিধায়কের অযোগ্যতা চেয়ে উদ্ধব শিবিরের আবেদন খারিজ করেন।
  • ৭ মে ২০২৪: সুপ্রিম কোর্ট জানায়, উদ্ধব শিবির স্থানীয় নির্বাচনগুলিতে মনোযোগ দিক, এবং এই আবেদনের শুনানি গ্রীষ্মের ছুটির পর হবে।
  • বর্তমানে, ২০২৫ সালের আগস্টে চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

উদ্ধব ঠাকরে শিবিরের আবেদনে কি বলা হয়েছে?

উদ্ধব ঠাকরে শিবির সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা আবেদনে বলেছে যে বিধানসভার অধ্যক্ষের সিদ্ধান্ত আইনের পরিপন্থী। তারা বলেছে যে বিধানসভার অধ্যক্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কদের আসল শিবসেনা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ভুল করেছেন। এই সিদ্ধান্ত দলত্যাগ বিরোধী আইনের ভাবনার বিরুদ্ধে। আবেদনের ভাষ্যমতে, এই সিদ্ধান্ত দলত্যাগকারীদের শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে পুরস্কৃত করেছে। সুপ্রিম কোর্টের কাছে এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা এবং উদ্ধব শিবিরকে আসল শিবসেনা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

রাজনৈতিক সমীকরণে প্রভাব

বিধানসভার অধ্যক্ষের সিদ্ধান্তের পর শিন্ডের অবস্থান মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে আরও শক্তিশালী হয়েছে। বিজেপি এবং অজিত পাওয়ার শিবিরের সঙ্গে শিন্ডে শিবিরের ক্ষমতাসীন জোটের ক্ষমতা এবং স্থিতিশীলতা বেড়েছে। লোকসভা নির্বাচন ২০২৪-এ শিন্ডে শিবির ৭টি আসনে জয়লাভ করে। বিধানসভায় শিন্ডের ৫7 জন বিধায়ক, বিজেপির ১৩২ জন বিধায়ক এবং অজিত পাওয়ার শিবিরের ৪১ জন বিধায়ক রয়েছেন।

ডিসেম্বর ২০২৪-এ, ফড়নবীস পুনরায় মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হন, যেখানে শিন্ডে এবং অজিত পাওয়ারকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হয়। 'তির-ধনুক' শিবসেনার রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল ভিত্তি। প্রতীক পাওয়ার সরাসরি প্রভাব ফেলবে আসন্ন লোকসভা, বিধানসভা ও স্থানীয় নির্বাচনে। যদি সুপ্রিম কোর্টের রায় উদ্ধব শিবিরের পক্ষে যায়, তাহলে শিন্ডে শিবির বড় ধাক্কা খাবে। অন্যদিকে, যদি শিন্ডে শিবির প্রতীক ধরে রাখতে পারে, তবে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।

Leave a comment