মহারাষ্ট্রে বিধায়কের ক্যান্টিন কর্মীকে মারধর, রাজনৈতিক মহলে তোলপাড়

মহারাষ্ট্রে বিধায়কের ক্যান্টিন কর্মীকে মারধর, রাজনৈতিক মহলে তোলপাড়

সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এবার এর কারণ হয়েছেন একনাথ শিন্ডে শিবিরের বিধায়ক সঞ্জয় গায়কোয়াড়ের একটি ভাইরাল ভিডিও, যেখানে তিনি একটি ক্যান্টিন কর্মীর সঙ্গে মারধর করছেন। ঘটনাটি মুম্বাইয়ের আকাশবাণী বিধায়ক হোস্টেলের। অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে তাঁকে খারাপ খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল, যার ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি ওই কর্মীর ওপর হাত তোলেন।

পুরো ঘটনাটি সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে এবং ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে যায়। ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস এবং উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে দুজনেই বিধায়কের আচরণকে অনুচিত বলেছেন এবং অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

বিধায়ক গায়কোয়াড়ের দাবি

ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বিধায়ক সঞ্জয় গায়কোয়াড় তাঁর সাফাইয়ে বলেছেন যে, তাঁকে পচা ও বিষাক্ত খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল। তিনি মিডিয়াকে বলেন, ‘আমি যেই প্রথম গ্রাস মুখে দিয়েছি, অমনি দুর্গন্ধ অনুভব করি। খাবারটা সম্পূর্ণ পচে গিয়েছিল। আমি প্রতিবাদ করি এবং সেই সময়ে এই ঘটনা ঘটে।’

যখন তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়, তখন তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আমি ক্ষমা চাইব না এবং আমার কৃতকর্মের জন্য কোনো অনুশোচনা নেই। আমি বিষ খেতে যাচ্ছিলাম, অন্যরা এটা বুঝতে পারবে না।’

গায়কোয়াড় আরও বলেন যে, এটি তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল এবং এতে দলের কোনো ভূমিকা নেই। ‘আমাকে কেউ এমনটা করতে বলেনি, না দল, না অন্য কেউ। দল পাশে আছে কিনা, সেই প্রশ্নই ওঠে না’, যোগ করেন তিনি। যদিও, তিনি অবশ্যই বলেছেন যে, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর অসন্তোষ দূর করার চেষ্টা করবেন।

মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীসের কড়া পদক্ষেপ

ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘X’ (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে বিধায়ক সঞ্জয় গায়কোয়াড়ের আচরণকে সম্পূর্ণভাবে অনুচিত বলে অভিহিত করেছেন।

ফডণবীস বলেছেন, ‘এই ধরনের ঘটনা জনগণের মধ্যে সমস্ত বিধায়কদের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এই বার্তা যায় যে জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।’

তিনি এই পুরো বিষয়টিকে গুরুতর হিসেবে উল্লেখ করে মহারাষ্ট্র বিধান পরিষদের সভাপতি রাম শিন্ডেকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভার স্পিকার রাহুল নারেকর এবং উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডেকেও বিষয়টি নজরে আনার এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।

ফডণবীস জোর দিয়ে বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের এমন আচরণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি করে এবং কোনো অবস্থাতেই তা বরদাস্ত করা যায় না।’

উপমুখ্যমন্ত্রী শিন্ডের পরামর্শ

এই বিষয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী এবং শিবসেনা (শিন্ডে গোষ্ঠী)-র প্রধান একনাথ শিন্ডেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে, গায়কোয়াড়কে পরিবেশন করা খাবার সত্যিই খারাপ ছিল, যার কারণে তাঁর বমি হয়েছিল এবং তিনি রেগে গিয়েছিলেন।

যদিও, শিন্ডে স্পষ্ট করেছেন, ‘আমি কোনো ধরনের সহিংসতার সমর্থন করি না।’ তিনি বলেন, ‘যদি কোনো সমস্যা থাকে, তবে তার জন্য আইনি পথ রয়েছে, কিন্তু কোনো কর্মীকে মারধর করা সম্পূর্ণ ভুল।’

শিন্ডে আরও বলেন, ‘যদি ক্যান্টিন ব্যবস্থাপনায় কোনো ত্রুটি থাকে, তাহলে তার তদন্ত হওয়া উচিত এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু হাত তোলা কোনো অবস্থাতেই সঠিক নয়।’

তাঁর এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন বিরোধী দল এই ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক এবং নৈতিকতার কথা বলছে।

বিরোধী দলের ইস্যু

এই পুরো ঘটনা মহারাষ্ট্রের রাজনীতিকে আবারও উত্তপ্ত করে তুলেছে। বিরোধী দল যেখানে এই ঘটনাকে ক্ষমতার অপব্যবহারের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছে, সেখানে সরকারকেও জবাব দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে।

বিধায়ক সঞ্জয় গায়কোয়াড়ের এই মন্তব্য যে, ‘আমার কোনো অনুশোচনা নেই এবং আমি ক্ষমা চাইব না’ রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উস্কে দিচ্ছে।

বিরোধী দল লাগাতার দাবি জানাচ্ছে যে, বিধায়কের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক।

Leave a comment