আধুনিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত ডেস্ক জব পুরুষদের শরীরে নানা অসুখের জন্ম দিচ্ছে। শুধু পিঠ বা হাঁটুর ব্যথা নয়, এর প্রভাব পড়ছে প্রজনন ক্ষমতার উপরও। গবেষণা বলছে, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা ও জীবনযাত্রার নানা খারাপ অভ্যাসে বাড়ছে পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব।
ডেস্ক জবের কারণে লুকিয়ে থাকা বিপদ
আজকাল বেশিরভাগ কর্মজীবী মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ারে বসে কাটান। বিশেষ করে ওয়ার্ক ফ্রম হোম শুরু হওয়ার পর থেকে কাজের সময় বেড়েছে আরও বেশি। এর ফলে শরীরে জমছে পেটের মেদ, বাড়ছে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং নষ্ট হচ্ছে শুক্রাণুর মান।
ল্যাপটপের তাপের মারাত্মক প্রভাব
শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য শরীরের তুলনায় অণ্ডকোষকে শীতল থাকতে হয়। কিন্তু ল্যাপটপ কোলে রেখে বসা বা পা শক্ত করে চেপে বসলে অণ্ডকোষের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এতে শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত হয়, ফলে ধীরে ধীরে কমে যায় প্রজনন ক্ষমতা।
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা মানেই ঝুঁকি
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যাঁরা দীর্ঘ সময় বসে থাকেন তাঁদের শুক্রাণুর মান কম। বিপরীতে, যারা হাঁটাচলা করেন বা শারীরিকভাবে সক্রিয় কাজ করেন, তাঁদের হরমোন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকে। নিষ্ক্রিয় জীবনযাপনই আসল বিপদ।
স্থূলতা ও বিপাকের গন্ডগোল
ডেস্ক জব পুরুষদের শরীরে বিশেষ করে পেটের মেদ বাড়ায়। স্থূলতা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং শুক্রাণুর সংখ্যা ও গতিশীলতা কমিয়ে দেয়। গবেষণা বলছে, স্থূলতা প্রজনন ক্ষমতার উপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাবের ভূমিকা
দীর্ঘ অফিসের চাপ, রাত জাগা ও অনিয়মিত ঘুম শুক্রাণুর ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। মানসিক চাপ টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাস করে, যা পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ফলে ডেস্ক জবের প্রভাব আরও প্রকট হয়।
সমাধানের পথ
চিকিৎসকদের মতে, ডেস্ক জবের চাপ কমাতে ছোট ছোট পদক্ষেপই হতে পারে কার্যকর।
ল্যাপটপ সবসময় টেবিলে ব্যবহার করুন।
প্রতি ৩০–৪৫ মিনিট অন্তর দাঁড়িয়ে নড়াচড়া করুন বা অল্প হাঁটুন।
হালকা ব্যায়াম করুন ও সুষম খাবার গ্রহণ করুন।
প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং ঘুমের আগে স্ক্রিন ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
বিশ্বজুড়ে প্রতি ৬ জনের মধ্যে ১ জন বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় ভোগেন, যার অর্ধেক ক্ষেত্রের জন্য পুরুষরা দায়ী। চিকিৎসকদের মতে, ডেস্ক জব, ল্যাপটপের তাপ, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, ওজন বৃদ্ধি, মানসিক চাপ ও ঘুমের সমস্যা শুক্রাণুর মান নষ্ট করছে।