ভাষা সন্ত্রাসে ফের বিজেপিকে কটাক্ষ রবীন্দ্রনাথের প্রেরণায় লড়াইয়ের ডাক মমতার

ভাষা সন্ত্রাসে ফের বিজেপিকে কটাক্ষ রবীন্দ্রনাথের প্রেরণায় লড়াইয়ের ডাক মমতার

রবীন্দ্রনাথ স্মরণে মুখ্যমন্ত্রীর আবেগঘন বার্তা

২২শে শ্রাবণ। বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাসে এই দিনটি গভীর শোকের, কারণ এদিনেই চিরবিদায় নিয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গোটা রাজ্যজুড়ে কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে নানা কর্মসূচি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ চলেছে। সেই আবেগঘন পরিবেশে রাজনৈতিক সুরও তীব্র করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির নাম না করেই ভাষা সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আক্রমণ শানালেন। শান্তিনিকেতন থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাভাষা রক্ষার বার্তা দিয়ে লিখলেন, বিশ্বকবি আমাদের প্রাণের ঠাকুর। তিনি প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের ঘিরে আছেন। আজ যখন শুধু বাংলা ভাষা বলার জন্য বাঙালির উপর সন্ত্রাস নেমে আসছে, তখন রবীন্দ্রনাথই আমাদের লড়াইয়ের প্রেরণা।

ভাষা আক্রমণে বেদনাহত, ধ্রুবতারা রবীন্দ্রনাথ

মমতার বক্তব্যে গভীর আক্ষেপের সুর—রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষার সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ প্রতিভা, তাঁর সাহিত্য আমাদের গর্ব। অথচ আজ বাংলার ভাষা নিয়ে যে অবমাননা ও আক্রমণ চলছে, তা আমাদের হৃদয়ে ক্ষত তৈরি করছে। আমরা ব্যথিত, মর্মাহত। তিনি রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত লাইন উদ্ধৃত করে বলেন, “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির’—সেই ভারতই আমাদের লক্ষ্য। সেই স্বপ্ন পূরণে কবিগুরুর দর্শনই আমাদের পথনির্দেশ। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বাংলা-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে যতদিন আন্দোলন চলবে, ততদিন রবীন্দ্রনাথের ভাবধারা হবে সংগ্রামের মশাল।

শপথের দিন ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী

মমতার মতে, প্রয়াণ দিবস কেবল শোকের দিন নয়, এটি বাংলার অস্তিত্ব রক্ষার শপথ নেওয়ারও দিন। তিনি ঘোষণা করেন, “আজ আমরা প্রতিজ্ঞা নিই—বাংলার উপর ভাষা সন্ত্রাস চলতে দেব না। রবীন্দ্রনাথের আদর্শকে মেনে আমরা বাংলার মর্যাদা রক্ষা করব।” শান্তিনিকেতন থেকে রাজ্যের প্রতিটি নাগরিককে এই শপথে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী, এবং স্পষ্ট করে দেন—এই লড়াই শুধু ভাষার জন্য নয়, বাংলা সংস্কৃতি ও আত্মমর্যাদার জন্যও

ঝাড়গ্রাম কর্মসূচিতেও ভাষা সুরক্ষার পুনরাবৃত্তি

প্রয়াণ দিবসের আবেগ নিয়ে মমতা যান ঝাড়গ্রামের সরকারি কর্মসূচিতে। সেখানে স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও মনীষীদের স্মরণ করতে গিয়ে আবারও ভাষা সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। কবিগুরুকে প্রণাম জানিয়ে বলেন, তিনি আমাদের অভিভাবক, তিনি আমাদের ধ্রুবতারা। প্রতিদিনই তাঁকে স্মরণ করি, তাঁর গান, তাঁর কবিতা আমাদের রক্তে মিশে আছে। তাঁর প্রেরণায় আমরা এমন এক দেশ গড়তে চাই যেখানে বাংলা ভাষা সম্মান, মর্যাদা ও সকলের ভালবাসা পাবে।

রাজনৈতিক বার্তায় উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি

প্রয়াণ দিবসের আবেগে মোড়া এই বক্তব্য নিছক সাহিত্যস্মরণ নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তাও বটে। বিজেপিকে সরাসরি নাম না করে ভাষা সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে মমতা আসলে রাজ্যের সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক মঞ্চে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন। তাঁর বার্তায় স্পষ্ট—বাংলার মর্যাদায় আঘাত এলেই তৃণমূল রুখে দাঁড়াবে। “বিকশিত হোক সেই দেশ, যেখানে ভাষা সন্ত্রাস থাকবে না, যেখানে রবীন্দ্রনাথের বাংলা সকলের হৃদয়ে স্থান পাবে,”—এভাবেই তিনি বাংলা-বিদ্বেষহীন ভারতের স্বপ্ন দেখালেন। এই বার্তাই রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে।

Leave a comment