দিল্লিতে শিশু হেনস্থার অভিযোগ ঘিরে ফের মমতার তোপ ‘ওদের বেলায় অমিশন এখানে যত্ত কমিশন!

দিল্লিতে শিশু হেনস্থার অভিযোগ ঘিরে ফের মমতার তোপ ‘ওদের বেলায় অমিশন এখানে যত্ত কমিশন!

পরিযায়ী শ্রমিকের শিশুর উপর পুলিশি হেনস্থা! দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে মমতার তীব্র ক্ষোভ

একরত্তি শিশুর কানে ক্ষতের ভিডিয়ো ঘিরে তুঙ্গে উত্তেজনা। মালদার এক পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারকে ঘিরে দিল্লিতে শিশু হেনস্থার অভিযোগ তুলে ফের দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার এক্স হ্যান্ডলে ভিডিয়ো শেয়ার করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে থাকা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। পাশাপাশি প্রশ্ন তোলেন, বাংলা ভাষায় কথা বললেই কি অপরাধ?শিশুর দেহে আঘাতের ছবি ঘিরে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভিডিও প্রকাশ করে দাবি, কেন্দ্রীয় শাসিত এলাকায় বাঙালিদের উপর চলছে ভয়ঙ্কর নিপীড়ন।

পাল্টা দাবি দিল্লি পুলিশের— ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’, ভিডিয়ো নাকি সাজানো!

এতসব অভিযোগের পাল্টা জবাবে সাংবাদিক বৈঠকে দিল্লি পুলিশের ডিসিপি অভিষেক ধানিয়া জানান, শিশুটির মা জেরায় স্বীকার করেছেন, রাজনৈতিক প্ররোচনায় ভিডিয়োটি তৈরি করেছেন তিনি। মালদার এক রাজনৈতিক আত্মীয়ের কথাতেই এই ঘটনাপ্রসূত ভিডিয়ো। পুলিশের দাবি, এই ফাঁদ শুধুই দিল্লি পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতেই। প্রকাশ করা হয়েছে সিসিটিভি ফুটেজও।দিল্লি পুলিশ জানায়, এই অভিযোগ সাজানো; মুখ্যমন্ত্রী তথ্য যাচাই না করেই মিথ্যে প্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ।

‘সত্য–মিথ্যে প্রমাণ হয়ে যাবে!’ পাল্টা হুঁশিয়ারি মমতার

মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী ফের সাফ জানিয়ে দেন, ‘আমি ওদের (শিশু ও পরিবারকে) নিয়ে বলেছিলাম। কাল থানায় ঘুরিয়ে বেড়ানো হয়েছে, ভয় দেখানো হয়েছে। আমি এখন চাই ওরা ফিরে আসুক। বাকিটা প্রমাণিত হয়ে যাবে— কে সত্যি বলেছে, কে মিথ্যে।’ অর্থাৎ, রাজনীতির আঁচ আরও গাঢ় হচ্ছে এই ঘটনাকে ঘিরে।

একাধিক রাজ্যে বাঙালিদের উপর নিপীড়নের অভিযোগ— কমিশনের নিরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী

বীরভূমের প্রশাসনিক সভা থেকে মমতা প্রশ্ন তোলেন— গুজরাট, রাজস্থান, ওডিশা, দিল্লি, অসম, ইউপি-তে বাঙালিদের রেশন, আধার, জমির পাট্টা থাকা সত্ত্বেও ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা হচ্ছে। হরিয়ানায় তৈরি হয়েছে ১০টি ডিটেনশন ক্যাম্প।” প্রশ্ন তোলেন, সেখানে মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশন যায় না কেন?একাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপরে ‘অত্যাচার’-এর অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় কমিশনগুলির নিরবতা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিরোধীর পাল্টা কটাক্ষ— ভিডিয়ো ভুয়ো, ‘মিথ্যে তথ্য’ ছড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী!

দিল্লি পুলিশের প্রকাশিত সিসিটিভি ফুটেজকে হাতিয়ার করে বিজেপি নেতারা যেমন সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, শমীক ভট্টাচার্য একযোগে আক্রমণ শানিয়েছেন। শুভেন্দুর দাবি— “ভিডিয়োটি ভুয়ো। মালদার এক তৃণমূল নেতার প্ররোচনায় তৈরি। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই মিথ্যে ছড়াচ্ছেন।” কাঁথির বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারী দিল্লি পুলিশের সাইবার শাখায় মমতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন এক্স-এ 'অসত্য বিবৃতি' পোস্টের অভিযোগে।সিসিটিভি ফুটেজ সামনে এনে বিজেপি দাবি করেছে, শিশুর সঙ্গে হেনস্থার গল্প সাজানো; মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছে বিজেপি সাংসদ।

‘এখানে টিকটিকি কামড়ালেই কমিশন আসে!’ তীব্র ব্যঙ্গ মমতার বিজেপিকে

মুখ্যমন্ত্রী ব্যঙ্গ করে বলেন, এখানে টিকটিকি কামড়ালেই মহিলা কমিশন, মানবাধিকার কমিশন এসে পড়ে। ওডিশায় মহিলাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হলে কোনও কমিশন যায় না! বাংলাভাষীদের হেনস্থা করলে কোথাও কোনও কমিশন নেই— ওদের বেলায় অমিশন, এখানে যত্ত কমিশন!কমিশনের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে তীব্র কটাক্ষ মমতার— বলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যে হেনস্থার পরও মৌন থাকে কমিশন, বাংলা হলে যেন কমিশন উৎসবে মাতে!

পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরার বার্তা, নাগরিক সমাজকে পথে নামার আহ্বান মুখ্যমন্ত্রীর

মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা— রাজনীতির বাইরে গিয়েও নাগরিক সমাজকে সরব হতে হবে বাঙালিদের উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ হোক শিল্পে, সংস্কৃতিতে।রাজনীতির শিখরে শিশু–কাণ্ড! সত্যি–মিথ্যেয় বিভ্রান্ত জনতাশিশু হেনস্থার ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ চরমে। প্রশাসনিক তথ্য বনাম সামাজিক আবেগ— কোনটা সত্যি আর কোনটা সাজানো, তা এখন সময় বলবে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ আর বিজেপির পাল্টা জবাবে স্পষ্ট, ২০২৬-এর ভোট যুদ্ধের ছায়া ইতিমধ্যেই পড়ে গিয়েছে রাজনীতির রণাঙ্গনে।শিশু হেনস্থাকে কেন্দ্র করে তীব্র রাজনৈতিক যুদ্ধ; সামনে এসেছে প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব ও ভাষাগত রাজনীতির জটিলতা। সত্য–মিথ্যাই এখন রাজনৈতিক অস্ত্র।

Leave a comment