লক্ষ্মীপুজোয় তিন জেলার ঢল ময়ূরেশ্বরে, সমুদ্র মন্থনের থিমে মাতছে ষাটপলশা

লক্ষ্মীপুজোয় তিন জেলার ঢল ময়ূরেশ্বরে, সমুদ্র মন্থনের থিমে মাতছে ষাটপলশা

দুর্গাপুজোর আনন্দে বৃষ্টির বাধা পড়লেও, বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের ষাটপলশা লক্ষ্মীপুজোয় এখন উৎসবের ঢেউ। বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও পূর্ব বর্ধমান — এই তিন জেলার মানুষ জমায়েত হন এই ঐতিহ্যবাহী পুজোয়। স্থানীয়রা বলেন, দুর্গাপুজোয় যা হয়নি, সবটা এবার লক্ষ্মীপুজোতেই পুষিয়ে নেব।

পুজোর উৎসব ও ইতিহাস

প্রচলিত আছে, শতাধিক বছর আগে স্থানীয় রাজলক্ষ্মী পাল শুরু করেছিলেন এই লক্ষ্মীপুজো। পরবর্তীতে স্থানীয় ষাটপলশা হাট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি পুজোর দায়িত্ব নেয়, যা আজও বহাল। এই উৎসবকে ঘিরে স্থানীয়দের আবেগ অপরিসীম — এটি কেবল ধর্মীয় নয়, সামাজিক মিলনমেলারও এক বিশাল পর্ব।

থিমে নবত্ব: সমুদ্র মন্থনে সাগরকন্যা লক্ষ্মী

এ বার পুজোর থিম ‘সমুদ্র মন্থনে সাগরকন্যারূপী মা লক্ষ্মীর আবির্ভাব’। মণ্ডপে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জায় ব্যস্ত শিল্পীরা। রঙ, আলো আর প্রতিমা নির্মাণে এক আলাদা আবহ তৈরি হয়েছে। পঞ্চম থেকে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা সবাই উৎসাহে ভরপুর — “বৃষ্টির জন্য দুর্গাপুজোয় আনন্দ মাটি হয়েছিল, এবার লক্ষ্মীপুজোয় সব পুষিয়ে নেব।”

ময়ূরেশ্বরের উৎসব: সর্বজনীন আনন্দের পুজো

লক্ষ্মীপুজো এখানে কেবল দেবীর আরাধনা নয়, পরিবারের পুনর্মিলনেরও সময়। বিবাহিত মেয়েরা বাপের বাড়ি ফেরেন, কর্মরত পুরুষরাও ফিরে আসেন পরিবারের কাছে। ঘরে ঘরে নাড়ু, মিষ্টি আর আতিথেয়তার আমেজ। স্থানীয় গৃহবধূরা বলেন, দুর্গাপুজোয় নিমন্ত্রণ হয় অন্যত্র, কিন্তু আমাদের গ্রামে আত্মীয়স্বজনরা আসেন লক্ষ্মীপুজোয়। তখন ঘর ভরে যায় আনন্দে।

মানুষের ভিড় ও প্রস্তুতি

পুজো উপলক্ষে বসে নয় দিনের মেলা। ভিড় সামলাতে ব্যস্ত প্রশাসন ও উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির সভাপতি নিমাই দে বলেন, “আমাদের মতো বড় আয়োজন আর কোথাও নেই। দুর্গাপুজোয় বৃষ্টিতে যা আনন্দ মাটি হয়েছিল, তা লক্ষ্মীপুজোয় ফেরত আসবে।

ষাটপলশার লক্ষ্মীপুজো আজ বীরভূমের গর্ব, তিন জেলার মিলনমেলা। ধর্ম, সংস্কৃতি ও আনন্দের অনন্য সংমিশ্রণে ময়ূরেশ্বর এখন উৎসবের রঙে রঙিন। সমুদ্র মন্থনের থিমে জেগে উঠেছে গোটা গ্রাম, আর এই উৎসবই প্রমাণ করছে — বাংলার পুজো কেবল দুর্গাপুজোতেই সীমাবদ্ধ নয়, লক্ষ্মীপুজোও আজ হয়ে উঠেছে বাঙালির হৃদয়ের উৎসব।

Leave a comment