আলিপুরদুয়ার কাণ্ড ইনস্টাগ্রামে প্রেম শেষে নাবালিকাকে ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে গণধর্ষণ গ্রেফতার ২

আলিপুরদুয়ার কাণ্ড ইনস্টাগ্রামে প্রেম শেষে নাবালিকাকে ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে গণধর্ষণ গ্রেফতার ২

সোশ্যাল মিডিয়ার ফাঁদে নাবালিকা

ইনস্টাগ্রামে পরিচয়, ধীরে ধীরে আলাপ থেকে প্রেম। মোবাইল নম্বর বিনিময় ও নিয়মিত যোগাযোগের পর সম্পর্ক গাঢ় হয়। কিন্তু সেই ভার্চুয়াল প্রেমই কিশোরীর জীবনে নিয়ে এল এক ভয়ঙ্কর অধ্যায়। ১৫ অগাস্ট প্রথম দেখা করার পর একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়। অবিশ্বাস, মনোমালিন্য আর মিলনের মাঝেই নাবালিকা বুঝতেই পারেনি কী কালো ছায়া তার জীবনে নেমে আসছে।

১৫ অগাস্ট থেকে শুরু আলাপচারিতা

প্রথম দেখা হয় স্বাধীনতা দিবসের দিন। সেদিন থেকেই দুই তরুণ-তরুণীর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। একসঙ্গে সময় কাটানো, ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখা—সব মিলিয়ে এক স্বাভাবিক প্রেমের গল্পের মতোই চলছিল। কিন্তু সেই গল্পের সমাপ্তি হলো ভয়ঙ্কর পরিণতিতে।

শনিবার রাতভর নিখোঁজ

গত শনিবার বিকেলে কিশোরী প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে যায়। সেদিনও তারা কোচবিহারের রসিকবিল ঘুরে, পরে কামাখ্যাগুড়িতে সিনেমা দেখে। সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে মেলায়ও যায় তারা। এরপর হঠাৎ প্রেমিক ফোনে এক বন্ধুকে ডেকে আনে। তিনজনে একসঙ্গে হোটেলে খাওয়াদাওয়া সারলেও রাতে আর বাড়ি ফেরেনি কিশোরী।

ফাঁকা বাড়িতে নৃশংসতা

অভিযোগ, রাত নামতেই প্রেমিক ও তার বন্ধু কিশোরীকে নিয়ে যায় প্রেমিকের এক আত্মীয়র ফাঁকা বাড়িতে। সেখানেই রাতভর চলে পাশবিক অত্যাচার। পুলিশ জানিয়েছে, নাবালিকার বক্তব্য অনুযায়ী, দুই তরুণ তাকে জোর করে গণধর্ষণ করেছে।

পরিবারের দুশ্চিন্তা ও প্রতিবেশীর সূত্রে খবর

শনিবার রাত গড়ালেও মেয়ে না ফেরায় উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন পরিবারের সদস্যরা। রাতভর খোঁজাখুঁজির পরও কোনও সন্ধান না মেলায় ভোরবেলা খবর আসে এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে। তিনি নাবালিকাকে তেলিপাড়ার দিকে দেখেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়ে মেয়েকে উদ্ধার করেন।

কান্নায় ভেঙে পড়ল কিশোরী

বাড়ির লোক প্রশ্ন করতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে কিশোরী। রাতভর চলা নির্যাতনের কাহিনি কেঁদে কেঁদে শোনায় সে। মুহূর্তেই আঁধার নেমে আসে পরিবারে। বাবা আর দেরি না করে কামাখ্যাগুড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযুক্তদের গ্রেফতার

অভিযোগ পেয়ে দ্রুত তদন্তে নামে পুলিশ। রবিবারই গ্রেফতার করা হয় কিশোরীর ইনস্টাগ্রাম প্রেমিক ও তার বন্ধুকে। পুলিশ জানিয়েছে, পকসো আইনে মামলা রুজু হয়েছে। সোমবারই ধৃতদের আলিপুরদুয়ার জেলা আদালতে তোলা হবে।

অভিযুক্তদের পরিচয়

জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত প্রেমিকের বাড়ি আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের যশোডাঙ্গায়। অপর অভিযুক্ত যুবক পারোকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্রজেরকুঠির বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা পূর্ব থেকেই নাবালিকাকে ফুঁসলিয়ে পরিকল্পনা করেছিল।

পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য

আলিপুরদুয়ার জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, অভিযোগ পেয়েই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্যাতিতা নাবালিকার চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তার দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। তদন্ত সর্বদিক থেকে এগোচ্ছে।

সমাজে আলোড়ন

এই ঘটনার জেরে আলিপুরদুয়ারে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, সোশ্যাল মিডিয়ার অন্ধ দুনিয়ায় নাবালিকারা প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছে। ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে অবাধ যোগাযোগ যে কত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ এই ঘটনা।

প্রশ্নের মুখে সোশ্যাল মিডিয়ার নিরাপত্তা

বিশেষজ্ঞদের মতে, নাবালিকাদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সামাজিক মাধ্যমে অপরিচিত সম্পর্ক কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তা এই ঘটনায় স্পষ্ট। তাই পরিবার ও প্রশাসন—উভয়েরই নজরদারি এখন সময়ের দাবি।

Leave a comment