প্রধানমন্ত্রীর উষ্ণ মন্তব্য ও সমালোচনা : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের জিএসটি সংস্কারের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। জিএসটি কাউন্সিলে সম্প্রতি ঘোষিত পরোক্ষ কর ব্যবস্থাকে তিনি ‘ঐতিহাসিক’ এবং ‘পরবর্তী প্রজন্মের সংস্কার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। মোদি বলেন, এই সংস্কার শুধু ঘরোয়া বাজেট ও ছোট ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দেবে না, বরং শিল্পের জন্যও বড় সুবিধা নিয়ে আসবে।পাশাপাশি তিনি কংগ্রেসের প্রাক্তন সরকারের করনীতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় অতিরিক্ত বোঝা সৃষ্টি করেছিল।
কংগ্রেসের অতীত করনীতির উদাহরণ : মোদির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি উদাহরণ তুলে ধরেন, কংগ্রেস সরকার টুথপেস্ট, সাবান, মাথার তেলে ২৭ শতাংশ কর আরোপ করত। খাবার থালা, কাপ প্লেটের মতো দৈনন্দিন জিনিসে ১৮ থেকে ২৮ শতাংশ কর বসানো হত। এমনকি শিশুদের টফির উপরও ২১ শতাংশ কর নেওয়া হতো। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আমি যদি এমন কর ধার্য করতাম, তবে ওরা আমার চুল ছিঁড়ে ফেলত।” এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, নতুন জিএসটি সংস্কারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় কমানোই সরকারের মূল লক্ষ্য।
নাগরিক সুবিধা ও কর হ্রাসের বিশ্লেষণ : প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, নতুন কর কাঠামো কার্যকর হলে সাইকেল, সেলাই মেশিন, হোটেল ভাড়া ও দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ খাতে কেবলমাত্র ৫ শতাংশ কর দিতে হবে। এই সহজীকৃত কর কাঠামো শুধুমাত্র নাগরিকদের উপর থেকে অর্থনৈতিক বোঝা কমাবে না, বরং চাহিদা বৃদ্ধি ও অর্থনীতির গতিশীলতাও বাড়াবে। মোদি উল্লেখ করেন, “সরলীকৃত কর কাঠামো দেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করবে এবং ব্যবসায়িক পরিবেশকে আরও উন্নত করবে।
বিপুল আর্থিক প্রভাব ও ব্যবসায়িক জ্বালানিঃ জিএসটি সংস্কার কেবল নাগরিকের ব্যয় সীমিত রাখার বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রী মোদির মতে, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা এবার আর্থিক স্বস্তি পাবেন। কর বোঝা হ্রাস পাওয়ায় উৎপাদন ও পরিচালন খরচ কমে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নতুন গতিশীলতা আসবে। সরকারের এই পদক্ষেপ দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে এবং নতুন বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াবে।
নবরাত্রি ও দীপাবলির প্রভাব : প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে এই দীপাবলি দেশে দ্বিগুণ উপহার নিয়ে আসবে। লোকেরা নবরাত্রির প্রথম দিন থেকেই এর সুফল পেতে শুরু করবে।” মোদি আশাবাদী, এই সংস্কার সামান্য পরেই দেশের প্রতিটি ঘরে আনন্দ ও উৎসবের উৎসাহ বাড়াবে। ধনতেরসের মতো বড় উৎসবকেও এই পরিবর্তন আরও অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে আনন্দময় করে তুলবে।
কংগ্রেসের সমালোচনা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য : মোদির বক্তব্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কংগ্রেসের সমালোচনা। তিনি বলেন, কংগ্রেস সরকার সাধারণ মানুষের কথা ভাবত না। তাদের করনীতি শুধুমাত্র ধনবান ও বড় ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষা করত। মোদি বিহার নির্বাচনের প্রেক্ষাপটেও এই সমালোচনা করে বলেছেন, কংগ্রেসের অতীত পদক্ষেপ রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। বর্তমান সরকার দেশের সকল স্তরের মানুষকে সুরক্ষা দেয়।
নাগরিক এবং ব্যবসায়ীর প্রতিক্রিয়া :নাগরিকদের মধ্যেও নতুন জিএসটি সংস্কার নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, দৈনন্দিন জীবনের ক্রয়যোগ্য পণ্যের উপর অতিরিক্ত কর কমানো তাদের খরচ সহজ করবে। বিশেষত শিশুদের খাদ্যপণ্য, স্কুল সামগ্রী ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসের ওপর কর কম হওয়ায় পরিবারের বাজেটে সরাসরি স্বস্তি আসবে।
অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা : জিএসটি সংস্কার ভারতের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা আরও বাড়াবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের সামনে খুলে যাবে নতুন সুযোগের দরজা। একইসঙ্গে ব্যবসার পরিবেশ হবে আরও বিনিয়োগবান্ধব, যার ফলে বিদেশি মূলধনের আগমন বাড়বে। সরকারের এই পদক্ষেপ অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে শক্ত ভিত্তি দেবে এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে ভারতের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রভাব : শিশুদের টফি ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় শিক্ষামূলক উপকরণে কর হ্রাসের ফলে পরিবারগুলোর শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় সহজ হবে। নতুন জিএসটি কাঠামো শুধু ব্যবসায়ী নয়, সাধারণ মানুষ ও ছাত্রছাত্রীদের জন্যও সুবিধা বয়ে আনবে। এটি দেশের সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।