রবিবার দেশজুড়ে মহরমের তাজিয়া মিছিলের সময় বিভিন্ন রাজ্যে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান থেকে সংঘর্ষ, দুর্ঘটনা এবং বিশৃঙ্খলার খবর আসে। অনেক জায়গায় মিছিলের সময় উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তারের (হাইটেনশন তার) সংস্পর্শে এসে মানুষের মৃত্যু হয়, আবার কোথাও শ্লোগান ও পাথর ছোড়ার কারণে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়। পুলিশ ও প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন স্থানে ফোর্স মোতায়েন করে এবং অনেক জেলায় সতর্কতা হিসেবে ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু
উত্তর প্রদেশের (ইউপি) অনেক জেলায় মহরমের মিছিলের সময় পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। জৌনপুরের খুটহান থানা এলাকার সধনপুর গ্রামে তাজিয়া দাফন করে ফেরার পথে মানুষের একটি মিছিল উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তারের (হাইটেনশন তার) সংস্পর্শে আসে। দুর্ঘটনায় তিনজন ঝলসে যায়, যাদের মধ্যে দু'জনের চিকিৎসার সময় মৃত্যু হয়। পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন।
বারেলির ফরিদপুরে, গৌসগঞ্জ গ্রাম থেকে বের হওয়া ২৩ ফুট উঁচু তাজিয়া মেন রোডে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের তারে (লাইন) ধাক্কা লাগে। তীব্র বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে তাজিয়ায় আগুন ধরে যায়। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেকে প্রাণ বাঁচাতে পাশের নদীতে ঝাঁপ দেয়। তাজিয়ার উপরের অংশ পুড়ে যায়, কিন্তু গ্রামবাসীরা সাহস দেখিয়ে আগুন নেভান এবং তাজিয়াটিকে আবার দাফন করেন। এসপি সাউথ, আংশিকা ভার্মা, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
উত্তর প্রদেশের কুশীনগরে মহরমের মিছিলের সময় দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সামান্য কথা কাটাকাটি দ্রুত বিতর্কে পরিণত হয়। বিষয়টি বাড়তে বাড়তে শ্লোগান পর্যন্ত পৌঁছায়, যার ফলে সেখানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। হুড়োহুড়ির মধ্যে এক নিষ্পাপ শিশু আহত হয়, যার মাথায় আঘাত লাগে। ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। বর্তমানে এলাকায় শান্তি রয়েছে, তবে সতর্কতা হিসেবে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
লখিমপুরের শারদানগরেও মিছিলের সময় পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ হস্তক্ষেপ করে উপদ্রবকারীদের তাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে, আলিগড়ে রহমানিয়া মসজিদের কাছে তাজিয়া উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তারের (হাইটেনশন লাইন) সঙ্গে ধাক্কা লাগে, যাতে একজন যুবকের মৃত্যু হয় এবং আরও দুইজন ঝলসে যায়।
বিদ্যুৎ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আতঙ্ক
বিহারের অনেক জেলায়ও মহরমের মিছিলের সময় ঘটনা ঘটে। দ্বারভাঙ্গা জেলার খিরমা গ্রামে একই সম্প্রদায়ের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে পুরনো শত্রুতার জেরে কথা কাটাকাটি হয়, যা দ্রুত হিংসাত্মক সংঘর্ষে রূপ নেয়। উভয় পক্ষ থেকে পাথর ছোড়া হয় এবং ভাঙচুর চালানো হয়, যাতে কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারী ফোর্স মোতায়েন করে।
নওদা জেলার দিরি গ্রামে তাজিয়া মিছিলের সময় একটি পতাকা উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তারের (হাইটেনশন তার) সংস্পর্শে আসে, যাতে আটজন যুবক ঝলসে যায়। তাদের সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বৈশালীর পাতেপুরে মিছিলের সময় একটি দ্রুতগামী বাস দুইজন মানুষকে ধাক্কা মারে। ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনতা বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে ফোর্স মোতায়েন করেছে।
কাটিহারে তাজিয়া মিছিলের সময় দুটি পক্ষ মুখোমুখি হয় এবং ব্যাপক পাথর ছোড়া হয়। সহিংসতায় এক পুলিশকর্মী সহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়। জেলার উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২৪ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মারধর ও গন্ডগোল
রাজস্থানের চুরু জেলায় মিছিলের সময় এক নাবালক ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ডিএসপি সুনীল ঝাজাড়িয়া জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এলাকার উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সিকার জেলায় ঈদগাহ রোডে তাজিয়া মিছিলের সময় কিছু যুবকের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়, যা দ্রুত লাঠি ও লাঠি দিয়ে মারপিটে পরিণত হয়। হাঙ্গামার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছানো পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং সতর্কতা হিসেবে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করে।
মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনে কিছু লোক নিষিদ্ধ রাস্তা দিয়ে জোর করে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে হাঙ্গামা হয়। পুলিশ বাধা দিলে তারা ব্যারিকেড ভেঙে দেয় এবং পুলিশকর্মীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে। পাঁচজন পুলিশকর্মী আহত হন। পুলিশকে লাঠিচার্জ করে ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে হয়। এই ঘটনায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে নজরদারি
মহরমে দেশজুড়ে সহিংসতা, সংঘর্ষ এবং দুর্ঘটনার ঘটনার পর সকল রাজ্যের প্রশাসন সতর্ক হয়েছে। অনেক জেলায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে এবং সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়েছেন, তবে শান্তি বজায় রাখতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।