ডিভিসি-র জল ছাড়ায় জোড়া ধাক্কা! প্লাবনে বিপর্যস্ত দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান

ডিভিসি-র জল ছাড়ায় জোড়া ধাক্কা! প্লাবনে বিপর্যস্ত দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত বাংলা, জলে ডুবে একাধিক জেলা

রবিবার থেকে লাগাতার বৃষ্টি যেন থামার নাম নেই। দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হুগলি এবং পূর্ব বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন কার্যত জলমগ্ন। নদীর জলস্তর বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে। বহু গ্রামে ঢুকে পড়েছে জল, নৌকা না থাকলে যাতায়াত অসম্ভব।

ডিভিসির জল ছাড়ার সিদ্ধান্তে রাজ্যের ক্ষোভ, তৈরি হচ্ছে রাজ্য বনাম কেন্দ্র বিতর্ক

ঝাড়খণ্ডে অতিবৃষ্টির জেরে ডিভিসি (DVC) মাইথন, পাঞ্চেত এবং দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে বিশাল পরিমাণে জল ছেড়ে দিচ্ছে। রাজ্যের অভিযোগ, কোনওরকম পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই জল ছাড়া হচ্ছে। এর ফলে রাজ্যের নিচু এলাকাগুলি একের পর এক প্লাবিত হচ্ছে।

“দু’দিক থেকে স্যান্ডউইচ হয়ে গেছি”— আক্ষেপ মন্ত্রীর গলায়

সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার কণ্ঠে তীব্র আক্ষেপ— গত বছর জুনে যেখানে ৫৮৭ মিমি বৃষ্টি হয়েছিল, এ বছর ৬ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১১২৬ মিমি! এর মধ্যে ডিভিসিও লাগাতার জল ছেড়ে দিচ্ছে। আমাদের কাছে কোনও বার্তাও আসছে না। আজও ১০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। বাংলাকে একদম স্যান্ডউইচ করে দেওয়া হচ্ছে।

ত্রাণে নজর মুখ্যমন্ত্রীর, কন্ট্রোলরুমে ২১ ঘণ্টা জেগে থাকছেন তিনি— দাবি মন্ত্রীর

মানস ভুঁইয়া জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কন্ট্রোলরুমে বসে গোটা পরিস্থিতি তদারকি করছেন। তিনি দমার পাত্রী নন। দিনরাত পরিশ্রম করছেন। আমিও দেড় মাস ধরে মাঠে মাঠে ঘুরছি। গ্রামবাসীদের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি— সবাই মিলে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে।

পাঁশকুড়ায় প্রশাসনিক বৈঠক, মজুত রাখা হচ্ছে ত্রাণ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী

শনিবার পাঁশকুড়া বিডিও অফিসে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক বৈঠকে অংশ নেন মানস ভুঁইয়া। গত বছর প্লাবনের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে তিনি নির্দেশ দেন, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, ওষুধ, ত্রিপল যেন মজুত থাকে। বৈঠকে ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্যও।

জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ চলছে, ত্রাণে ঘাটতি নেই— আশ্বাস সেচমন্ত্রীর

মানস ভুঁইয়া জানান, জেলার প্রতিটি স্তরের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। কোথাও যাতে ত্রাণ পেতে সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও জেলা পর্যায়ে রিপোর্ট নিচ্ছেন।

বন্যার হাত থেকে বাঁচতে এগিয়ে আসুন সকলেই— গ্রামবাসীদের উদ্দেশে আবেদন

মানস ভুঁইয়া আবেদন জানিয়েছেন গ্রামবাসীদের প্রতি— এই দুর্যোগে সরকার পাশে আছে। আপনাদেরও সাহায্য দরকার। প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করলে আমরা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে পারব।

একদিকে প্রকৃতির রুদ্র রূপ, অন্যদিকে প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ

টানা বর্ষণ ও বেপরোয়া জল ছাড়ার মধ্যে রাজ্য জুড়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সর্বতোভাবে তৎপর হলেও, প্রকৃতি আর সংস্থাগত সমন্বয়ের ঘাটতি বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এখন নজর শুধুই বন্যার জল কত তাড়াতাড়ি নামবে— আর প্রশাসন কতটা কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করতে পারবে এই প্লাবনজনিত বিপর্যয়।

Leave a comment