মুম্বাই পুলিশ ১৯৯৩ সালের কুখ্যাত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার একজন পলাতক আসামিকে ওয়াডালা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে বড় সাফল্য অর্জন করেছে। ৩২ বছর ধরে পুলিশের নাগালের বাইরে থাকা ৫৪ বছর বয়সী আরিফ আলী হাশমুল্লাহ খানকে শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খানের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, বেআইনিভাবে জনতা জমায়েত করা এবং অন্যান্য গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ওয়াডালা পুলিশ স্টেশনে তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু ছিল।
পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে আসামীর সন্ধান চালাচ্ছিল। গোপন সূত্র এবং প্রযুক্তিগত নজরদারির পর খানকে ওয়াডালার দীনবন্ধু নগর এলাকা থেকে ধরা হয়। পুলিশ এখন জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করছে যে সে এত বছর ধরে কোথায় লুকিয়ে ছিল এবং কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। কর্মকর্তাদের মতে, এই গ্রেপ্তার দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা একটি মামলার সমাধানে বড় ধরনের সাফল্য।
আসামীর পলাতক ঘোষণা হওয়ার আগের ঘটনা
১৯৯৩ সালের মুম্বাই দাঙ্গার সময় রুজু হওয়া মামলায় আসামি খানের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা এবং জনতা জড়ো করার মতো গুরুতর অভিযোগ ছিল। পলাতক থাকার কারণে আদালত তাকে পলাতক ঘোষণা করে। আসামিকে ধরতে পুলিশ উত্তর প্রদেশ পর্যন্ত তাদের তদন্তের পরিধি বাড়িয়েছিল। সেখান থেকে পাওয়া একটি গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দলটির হাতে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র আসে, যার সাহায্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর আসামিকে আদালতে পেশ করা হয়, যেখানে তাকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
পুলিশ এখন জানার চেষ্টা করছে যে খান এত বছর কোথায় ছিল এবং কার সহযোগিতায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। এর পাশাপাশি তার ভূমিকা এবং তার সঙ্গীদের সম্পর্কেও নিবিড় তদন্ত চলছে।
দেশের ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়
১৯৯৩ সালে মুম্বাইয়ে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ভারতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হয়। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর পুরো শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, যা দ্রুত সহিংসতায় রূপ নেয়। কয়েক সপ্তাহ ধরে মুম্বাই আতঙ্ক এবং অগ্নিসংযোগের ছায়ায় ছিল। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই দাঙ্গায় প্রায় ৯০০ জন নিহত হয়েছিল, যেখানে ২,০০০ এর বেশি মানুষ আহত হয়েছিল। যদিও, অনেক বেসরকারি প্রতিবেদনে এর চেয়ে অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতির দাবি করা হয়েছে।
এই সহিংসতা দুটি ভিন্ন পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রথম পর্যায়টি ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২-এ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরপরই শুরু হয়েছিল, যেখানে ধারাভি, ভিন্ডি বাজার, ডংরি এবং নাগপাড়ার মতো এলাকাগুলোতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। দ্বিতীয় পর্যায়টি ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে দেখা যায়, যখন মাহিম, গ্রান্ট রোড, ভান্ডুপ এবং যোগেশ্বরীসহ একাধিক এলাকায় আবারও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এই দাঙ্গার সময় শিবসেনার ভূমিকা নিয়েও অনেক গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল, যা রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছিল।
মুম্বাই দাঙ্গার প্রভাব শুধু জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং শহরের সামাজিক কাঠামোতেও গভীর আঘাত হেনেছিল। এই ঘটনা আজও দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।