বিহারের বেগুসরাই জেলার নওয়াটোল গ্রামে নাগপঞ্চমীর দিনে প্রতি বছর এমন একটি দৃশ্য দেখা যায়, যা প্রথমবার দেখলে যে কাউকে চমকে দেয়। এখানে, কয়েকশ গ্রামবাসী বালান নদীতে নামেন এবং বিষাক্ত সাপ ধরে তাদের গলায় ঝুলিয়ে গ্রামের ভগবতী মন্দির পর্যন্ত নাচতে-গাইতে যান। এই ঐতিহ্য নতুন নয়, বরং প্রায় ৩০০ বছর পুরনো এবং আজও একই শ্রদ্ধা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয়।
নদী থেকে বিষাক্ত সাপ তোলার এক অদ্ভুত প্রথা
নওয়াটোলকে স্থানীয় লোকেরা সাপের গ্রামও বলে থাকে। কারণ পরিষ্কার—এখানে নাগপঞ্চমীর দিনে লোকেরা বিষাক্ত সাপকে ভয় পায় না, বরং তাদের ভালোবেসে ধরে, গলায় পরে এবং তারপর সারা গ্রামে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে মিছিল বের করে। এই আয়োজন দেখতে প্রতি বছর দূর-দূরান্ত থেকে বহু লোক আসে।
গ্রামবাসীদের দাবি, এই অনুষ্ঠানে আজ পর্যন্ত কাউকে সাপে কাটেনি। তাদের বিশ্বাস, মা ভগবতী'র কৃপায় এই প্রথা সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে। যেখানে সারা দেশে নাগপঞ্চমীতে সাপকে দুধ খাওয়ানোর প্রথা পালন করা হয়, সেখানে নওয়াটোলে এই উৎসব সাপগুলির সাথে গভীর সম্পর্ক এবং নির্ভীকতার উদাহরণ তৈরি করেছে।
রৌবি দাস থেকে শুরু এই প্রথা
গ্রামবাসীদের মতে, এই প্রথার সূচনা গ্রামের এক ভক্ত রৌবি দাস করেছিলেন। তিনি মা ভগবতী'র বড় ভক্ত ছিলেন এবং প্রায় তিন শতাব্দী আগে নাগপঞ্চমীর দিনে প্রথম বালান নদী থেকে সাপ তুলে মন্দিরে উৎসর্গ করেছিলেন। সেই থেকে, তাঁর বংশধর এবং গ্রামের লোকেরা এই প্রথাটি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছেন।
আস্থার সঙ্গে যুক্ত পরিবেশগত বার্তা
এই অদ্ভুত আয়োজনের একটি বৈজ্ঞানিক দিকও রয়েছে। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, সাপ শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও তাদের ভূমিকা রয়েছে। গ্রামবাসীদের মতে, সাপ পরিবেশে উপস্থিত মিথেনের মতো ক্ষতিকর গ্যাস শোষণ করতে সক্ষম। এই কারণেই সনাতন ধর্মে সাপকে পূজা করা হয় এবং ভগবান শিব থেকে শুরু করে তন্ত্র সাধনা পর্যন্ত তাদের গুরুত্ব রয়েছে।