হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ছড়িয়ে পড়তেই এলাকা জুড়ে ছড়াল আতঙ্ক, জনজীবন বিপর্যস্ত | পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ে মঙ্গলবার দুপুরে ঘটে যায় এক ভয়াবহ রাসায়নিক দুর্ঘটনা। জাতীয় সড়কের উপর একটি বিশাল অ্যাসিড ট্যাঙ্কার উলটে গিয়ে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে কটু গন্ধ ও ঘন ধোঁয়া। হঠাৎ ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায় রাস্তায় থাকা মানুষজনের মধ্যে। ট্যাঙ্কার ফেটে যাওয়ার ফলে বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে মিশে গেলে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট ও চোখে জ্বালার সমস্যা। বহু মানুষ তখনই এলাকা ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যান। প্রাথমিকভাবে কোনও মৃত্যু না হলেও, অন্তত ১২ জনকে শ্বাসকষ্ট ও অসুস্থতার কারণে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। দুর্ঘটনার জেরে প্রায় এক ঘণ্টা জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
দুর্ঘটনার উৎস উকুনমারি-কাঁটাইখাল সীমান্তে, বৃষ্টির জমা কাদায় আটকে বিপত্তি
জাতীয় সড়কের মাঝে নরম মাটিতে বসে যায় ট্যাঙ্কার, নিয়ন্ত্রণ হারান চালক | ঘটনাটি ঘটেছিল খড়্গপুর-বালেশ্বর ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের উকুনমারি ও কাঁটাইখালের মাঝে। দুপুর আড়াইটে নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। টানা বৃষ্টির কারণে ওই অঞ্চলের কাঁচা মাটি ছিল জলজমা ও নরম, যার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় ভারী ট্যাঙ্কারটির এক পাশ বসে যায়। চালক চেষ্টা করেও গাড়ির ভারসাম্য ধরে রাখতে পারেননি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন সংস্কারের বাইরে রয়েছে। বড় গাড়িগুলির জন্য এখানে কোনও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে এমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয়নি। স্থানীয়রা দাবি করছেন, এই সড়কে বহুবার বড় গাড়ি কাদায় আটকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
উদ্ধার করতে গিয়েই ঘটে বিপর্যয়, ভালভ ভেঙে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী রাসায়নিক
ক্রেন দিয়ে তোলার সময় ফেটে গেল অ্যাসিডের ভালভ, বিষাক্ত গ্যাসে স্তব্ধ এলাকাবাসী | ট্যাঙ্কারটি উদ্ধারের জন্য এসে পৌঁছায় একটি হেভি-ডিউটি হাইড্রোলিক ক্রেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক চেষ্টা চালানোর পর ক্রেন চালক যখন ট্যাঙ্কারটি জাতীয় সড়কের উপর তোলার চেষ্টা করেন, তখনই ঘটে সবচেয়ে বড় বিপত্তি। চাপ সহ্য না করতে পেরে ট্যাঙ্কারের পিছনে থাকা ভালভটি হঠাৎ ফেটে যায়। সেখান থেকে গরম ও ঝাঁঝালো হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড গ্যাস বেরিয়ে আসে, যা বাতাসে মিশে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, “আমরা মনে করেছিলাম বৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু পরে বুঝলাম চোখ জ্বলছে, শ্বাস নিতে পারছি না। চারদিক যেন ধোঁয়ার কুয়াশায় ঢেকে গিয়েছিল।” এই সময় বহু মানুষ বাড়ির ভিতরে আশ্রয় নেন। রাস্তায় থাকা ফল-সবজির দোকান, খাবারের হোটেল, ওষুধের দোকান—সব বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কের মধ্যেই কিছু পথচারী অজ্ঞান হয়ে পড়েন বলে জানিয়েছে স্থানীয় ক্লিনিক।
দমকলের দ্রুততায় রক্ষা পেল বৃহত্তর দুর্ঘটনা, বাঁচল একাধিক প্রাণ
তৎপরতায় দগ্ধ হল না কেউ, চারদিক পরিষ্কার করে পরিস্থিতি সামাল দিল বাহিনী | দমকল বাহিনীর দ্রুত প্রতিক্রিয়াই এই বড়সড় দুর্ঘটনাকে বড় বিপর্যয়ে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করে। নারায়ণগড় থানার পুলিশ খবর পাওয়ার পরেই কাছাকাছি থাকা দমকল কেন্দ্রগুলিতে যোগাযোগ করে। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তিনটি দমকল ইউনিট। অ্যাসিড নিরোধক বিশেষ পোশাক পরে তাঁরা গোটা এলাকা ঘুরে প্রথমে অ্যাসিড লিক হওয়া বন্ধ করেন। এরপর রাসায়নিক ধোঁয়া হটাতে জলের স্প্রে ও নিরোধক কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে তাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এলাকার স্কুলগুলো তৎক্ষণাৎ ছুটি ঘোষণা করে। স্থানীয় প্রশাসন জানান, ট্যাঙ্কারটি একটি বেসরকারি রাসায়নিক কারখানায় যাচ্ছিল বলে অনুমান। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে, পরিবহণ কর্তৃপক্ষ ও রাসায়নিক সংস্থাকে তলব করা হয়েছে। এখনও এলাকায় অ্যাসিডের তীব্র গন্ধ রয়ে গেছে, তবে পরিস্থিতি স্থিতিশীল।