ত্রিকোণ লড়াই আমেরিকার চোখরাঙানি ভারতের সাফ জবাব রাশিয়ার দিকে আরও ঝুঁকছে দিল্লি পুরো অঙ্কটা বুঝে নিন একনজরে !

ত্রিকোণ লড়াই আমেরিকার চোখরাঙানি ভারতের সাফ জবাব রাশিয়ার দিকে আরও ঝুঁকছে দিল্লি পুরো অঙ্কটা বুঝে নিন একনজরে !

রাশিয়া-আমেরিকা সংঘাতে এখন ‘কিংমেকার’ ভারতের ভূমিকাই কেন্দ্রে

বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্রে রাশিয়া-আমেরিকার সংঘাতের কেন্দ্রে এখন ভারত। জ্বালানি তেলের বিশ্ববাজারে ভারতের অবস্থান যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা ফের প্রমাণিত হল। ক্রুড অয়েল কেনার ইস্যুতে আমেরিকার তীব্র কটাক্ষ, পাল্টা জবাবে ভারতের স্পষ্ট বার্তা—'রাষ্ট্রীয় স্বার্থের প্রশ্নে কোনও আপস নয়’। ভারত এখন কেবল পর্যবেক্ষক নয়, বরং কূটনৈতিক 'কিংমেকার' হয়ে উঠছে এই উত্তপ্ত ত্রিভুজে।

ট্রাম্পের আঙুল ভারতমুখী, অথচ আয়নার দিকেও তাকানো দরকার আমেরিকার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতকে সরাসরি অভিযুক্ত করেছেন রাশিয়ান তেল কিনে যুদ্ধকে পরোক্ষভাবে সমর্থনের। তিনি বলেন, ভারত রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে তেল কিনে তা খোলা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছে। এমনকী শুল্ক বৃদ্ধির হুমকিও দেন। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ট্রাম্প এই মন্তব্য করে নিজের দেশেই দ্বিচারিতার মুখোশ খুলে ফেললেন।

ভারতের জবাব সোজাসাপ্টা: অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রশ্নে চুপ থাকা নয়

এই হুমকির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক (MEA) কড়া ভাষায় জানায়—এই পদক্ষেপ ‘অযৌক্তিক, একপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইনের পরিপন্থী’। ভারত স্পষ্ট করে দেয়, “জাতীয় স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু করবে দিল্লি।” এই সাফ বার্তা কার্যত ভারতকে শুধু আত্মরক্ষায় নয়, বরং কূটনৈতিক আক্রমণে নিয়ে যায়।

দ্বিচারিতার নিখুঁত উদাহরণ: রাশিয়ার ইউরেনিয়াম এখনো আমদানি করছে আমেরিকাই

ভারত প্রশ্ন তোলে—যে আমেরিকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে তেল কেনার প্রশ্নে এত সোচ্চার, তারাই এখনও পরমাণু চুল্লির জন্য রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড আমদানি করছে। শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং রাশিয়ার মধ্যে পণ্যের বাণিজ্য ছিল ৬৭.৫ বিলিয়ন ইউরো, পরিষেবার

বাণিজ্য ১৭.২ বিলিয়ন ইউরো—যা ভারতের থেকে বহু গুণ বেশি। তাহলে প্রশ্ন—কেন শুধু ভারতকে নিশানা?

বিশ্বজুড়ে দ্বিচারিতার অভিযোগ, তবু ভারত নিজের পথে অনড় একদিকে পশ্চিমারা নিজেরাই বিভিন্ন পদ্ধতিতে রাশিয়ান তেল নিচ্ছে, আবার ভারতকে নিশানা করছে। এর মাঝেই ভারত দেখিয়ে দিচ্ছে—নীতি মেনে, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়ও কৌশলী বাণিজ্য সম্ভব। পশ্চিমা কাঠামোর মধ্যেই দাঁড়িয়ে ভারত আজ নিজের স্বার্থ রক্ষা করছে দক্ষতায়।

তথ্যে স্পষ্ট: চিন শীর্ষে, ইউরোপ পিছিয়ে নয়, তাহলে ভারত কেন কাঠগড়ায়?

ডিসেম্বর ২০২২ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে—রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের ৪৭% কিনেছে চিন, ৩৮% ভারত, আর ৬% কিনেছে ইইউ ও তুরস্ক। চিন এবং ইউরোপ তেল কিনলেও সমালোচনার মুখে একমাত্র ভারতই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারতের স্বাধীন কূটনৈতিক অবস্থান অনেকেরই গায়ে লাগছে।

রাশিয়ার গ্যাস ব্যবসায় ইউরোপীয় দেশগুলির বড় অংশীদারিত্ব

২০২৫ সালের জুন মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ান গ্যাস আমদানিতে ব্যয় করেছে ১.২ বিলিয়ন ইউরো। ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, নেদারল্যান্ডস, স্লোভাকিয়া—এই দেশগুলি ছিল বড় ক্রেতা। অথচ এইসব দেশকে নিয়ে ট্রাম্প বা অন্যান্য পশ্চিমা নেতারা মুখ খোলেন না। কেন এই নীরবতা?

রিফাইন্ড তেল নয়, কেবল ক্রুড—ভারতের অবস্থান পরিস্কার

ভারত রাশিয়া থেকে কোনও পরিশোধিত জ্বালানি কেনে না। শুধুমাত্র অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। অন্যদিকে, তুরস্ক, চিন, ব্রাজিল—এই দেশগুলি রাশিয়ার রিফাইন্ড জ্বালানি বিপুল পরিমাণে আমদানি করছে। তাহলে ভারতের উপর এত চোটপাট কেন?

বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম কম রাখতে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, স্বীকৃতি আমেরিকারও

বিশ্বব্যাপী তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে ভারতের ভূমিকা আগেও প্রশংসিত হয়েছে। ২০২২ সালে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি বলেছিলেন, “ভারতের তেল কেনা আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক।” ২০২৪ সালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি বলেন—“ভারতের আমদানির সিদ্ধান্ত বিশ্ববাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক।” তাহলে আজ এই হঠাৎ তিরস্কার কেন?

রাশিয়া-ভারত বাণিজ্য বৈধ ও স্বচ্ছ, কিন্তু যারা বেশি চিৎকার করে, তারা চুপিচুপি বেচাকেনা করে

শেষ কথাটা আসলে ভারতের কণ্ঠে উঠে এসেছে—রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি নিয়মমাফিক, স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক কাঠামোর মধ্যেই সীমিত। ভারত তার কাজ গোপন রাখে না। কিন্তু যারা বেশি চিৎকার করছে, তাদের অনেকেই নীরবে রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিমুখী বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। ভণ্ডামির এই বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত এখন তর্ক নয়, যুক্তি ও তথ্যের জোরে জবাব দিচ্ছে।

Leave a comment