নেপালে সহিংস বিক্ষোভ রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন। মন্ত্রী ও নেতাদের বাড়িতে হামলা হচ্ছে। বেশ কয়েকজন মন্ত্রীও পদত্যাগ করেছেন। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
Violent-protests: নেপালে দুর্নীতি ও সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন এক বড় রাজনৈতিক সংকটে পরিণত হয়েছে। দেশজুড়ে সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের গুলিবর্ষণের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন। তাঁর পদত্যাগের পর অস্থায়ীভাবে উপ-প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে। সূত্রের খবর, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে ওলি দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন।
বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে
সোমবার শুরু হওয়া বিক্ষোভ হঠাৎ করে সহিংস রূপ নেয়। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালায়। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২১ জন নিহত এবং ৩০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। কাঠমান্ডু সহ বিভিন্ন শহরে যুবকরা সরকারি ভবন এবং নেতাদের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
মন্ত্রী ও নেতাদের বাড়িতে হামলা
নেপালে বিক্ষোভ এখন সরাসরি নেতা ও মন্ত্রীদের বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে বিক্ষোভকারীরা অগ্নিসংযোগ করে, এবং যোগাযোগ মন্ত্রীর বাড়িতেও হামলা চালিয়ে আগুন লাগানো হয়। পরিস্থিতি এত গুরুতর হয়ে ওঠে যে জনতা বিরোধী নেতা পুষ্প কমল দহল ‘প্রচণ্ড’ এবং নেপালি কংগ্রেসের সভাপতি শের বাহাদুর দেউবার বাড়ির দিকেও এগিয়ে যায়। সূত্রের খবর, বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের দিকেও এগোচ্ছিল, এরপর রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়।
সরকারে বিভেদ, মন্ত্রীদের পদত্যাগ
প্রধানমন্ত্রী ওলির পদত্যাগের পর নেপালের সরকারে ভাঙনের পরিস্থিতি আরও গভীর হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রী রামনাথ অধিকারি পদত্যাগ করেছেন। এছাড়াও জল সরবরাহ মন্ত্রী প্রদীপ যাদবও পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগ করছেন। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখকও সহিংস বিক্ষোভের দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার ও নতুন নির্বাচনের দাবি
বিক্ষোভকারীদের প্রধান দাবি শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলছে যে দেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার (Interim Government) গঠন করা হোক এবং বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন করানো হোক। যুবকদের অভিযোগ, বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ দুর্নীতিগ্রস্ত ও অকার্যকর হয়ে গেছে, তাই এখন একটি নতুন ব্যবস্থার প্রয়োজন।
উপ-প্রধানমন্ত্রীর হাতে অস্থায়ী দায়িত্ব
প্রধানমন্ত্রী ওলির পদ ছাড়ার পর আপাতত দেশের ভার উপ-প্রধানমন্ত্রীর হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু আসল প্রশ্ন হল, উপ-প্রধানমন্ত্রী কি জনগণের ক্ষোভ প্রশমিত করতে পারবেন, নাকি নেপাল এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে আরও জড়িয়ে পড়বে।
ভারত ও প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্বেগ
ভারত নেপালের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিদেশ মন্ত্রক (MEA) বলেছে যে ভারত পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে এবং সহিংসতায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। মন্ত্রক নেপাল সরকার ও বিক্ষোভকারীদের সংযম অবলম্বন করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আবেদন করেছে।
ভারতের পাশাপাশি চীন ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশও নেপালের পরিস্থিতির উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। নেপালের অস্থিরতার প্রভাব পুরো অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব (sovereignty) এবং স্থিতিশীলতার উপর পড়তে পারে।
ওলির দেশত্যাগের জল্পনা
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওলি দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তাঁকে নিরাপদে বের করে আনার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করেছে। ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী ক্রমাগত রাজধানীর পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। যদিও, সরকারিভাবে ওলির দেশত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।