১২ ঘণ্টার কাজের সময় কেন্দ্র বনাম রাজ্য দ্বন্দ্বে নতুন শ্রম কোড ‘মানবে না’ বলছে পশ্চিমবঙ্গ

১২ ঘণ্টার কাজের সময় কেন্দ্র বনাম রাজ্য দ্বন্দ্বে নতুন শ্রম কোড ‘মানবে না’ বলছে পশ্চিমবঙ্গ

তৃণমূল বনাম বিজেপি: শ্রম কোডে দ্বিমতের আগুন, জ্বলছে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক

ভারত সরকারের নতুন চারটি শ্রম কোড ঘিরে পশ্চিমবঙ্গ ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠল। যেখানে দেশের অধিকাংশ রাজ্য এই কোডের খসড়া তৈরি করে ফেলেছে, পশ্চিমবঙ্গ এখনও পিছিয়ে। সংসদে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য, তৃণমূল সরকার শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় নিষ্ক্রিয়। রাজ্যের শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক পাল্টা বললেন— ১২ ঘণ্টা ওয়ার্কিং আওয়ার্স? ওটা শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী। আমরা মানব না।এই অংশে কেন্দ্র ও রাজ্যের টানাপোড়েন, শ্রমিকদের স্বার্থ এবং রাজনৈতিক অবস্থানকে ঘনীভূত করা হয়েছে। পাঠক যেন ঠিক বুঝতে পারেন, কেন বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

যে চারটি কোড ঘিরে তর্ক: বদল আনছে দীর্ঘদিনের শ্রম আইন বাতিল করে

নরেন্দ্র মোদী সরকার ২৯টি পুরনো শ্রম আইন বাতিল করে চালু করেছে চারটি শ্রম কোড—

‘দ্য কোড অন ওয়েজেস – ২০১৯’

‘দ্য কোড অন সোশ্যাল সিকিউরিটি – ২০২০’

দ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন কোড – ২০২০’

‘অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশন কোড – ২০২০’

এই কোডগুলোর লক্ষ্য— শ্রম আইনের জটিলতা দূর করে সর্বভারতীয় স্তরে একাধিক সংহত ব্যবস্থা চালু করা। যদিও এ নিয়ে শ্রমজীবীদের একাংশ আশঙ্কিত।এখানে পাঠকদের প্রযুক্তিগত ও আইনগত জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। চারটি কোড কী, এবং তা কী পরিবর্তন আনতে চলেছে— তা সহজ করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

রাজ্যের স্পষ্ট অবস্থান শ্রমিকদের স্বার্থে ১২ ঘণ্টা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়

রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, যেখানে তিনশোর বেশি শ্রমিক আছে, সেখানে কোনও শ্রম আইন কার্যকর হবে না— এমন কোড আমরা মানব না। তৃণমূল সরকার শ্রমিক স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনও আইন মেনে নেবে না।তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গে পূর্বের শ্রম আইনই চালু থাকবে। কেন্দ্রের এই শ্রম কোড শ্রমিকদের উপর চাপ বাড়াবে।এই অনুচ্ছেদে রাজ্যের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের স্বার্থে নেওয়া অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে, যাতে পাঠক বুঝতে পারেন— বিষয়টি কেবল প্রশাসনিক নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার সঙ্গেও জড়িত।বিজেপির পাল্টা যুক্তি: তৃণমূল শুধু এক দিক দেখাচ্ছে, পুরো চিত্র নয় বিজেপির মতে, ১২ ঘণ্টার কাজ মানেই অতিরিক্ত পারিশ্রমিক, ছুটি, ও ওভারটাইমের সুযোগ। তাই তৃণমূল কেবল এই ১২ ঘণ্টার অংশকেই সামনে এনে ভুল ধারণা তৈরি করছে।

শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে কি আদৌ ৮ ঘণ্টার কাজ হয়? এই শ্রম কোড বাস্তবে আরও স্বচ্ছতা আনবে।”

এই অংশে বিজেপির পাল্টা অবস্থান উঠে এসেছে— যে শ্রম কোডের বিরোধিতা করা হচ্ছে, তাতে আসলে শ্রমিকরাই লাভবান হবেন— এই যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।

শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিন্ন অবস্থান: অধিকাংশই বিরোধিতায়, ব্যতিক্রম বিএমএস

এআইটিইউসি, ইনটাক, সিটু, এইচএমএস— প্রায় সব বড় জাতীয় শ্রমিক সংগঠন নতুন শ্রম কোডের বিরোধিতা করেছে। তবে আরএসএস ঘনিষ্ঠ বিএমএস ছাড়া। গত ৯ জুলাই দেশজুড়ে ধর্মঘট ডেকেছিল এই সংগঠনগুলি।অদ্ভুতভাবে, ধর্মঘটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারও। ফলে রাজ্যের বক্তব্য ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক।এখানে পাঠক জানতে পারবেন— কেন্দ্রের বাইরে শ্রমিক সংগঠনগুলির ভূমিকাও কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মঘটের মতন ঘটনা কতটা ব্যাপক ছিল, তা উঠে আসে।

শেষ কথা ১২ ঘণ্টার কাজ মানেই বিকাশ, না কি শোষণ? প্রশ্ন উঠছেই

একদিকে কেন্দ্র বলছে, নতুন শ্রম কোডে শ্রমিকদের জন্য আরও সুযোগ, উন্নয়ন ও সুব্যবস্থা তৈরি হবে। অন্যদিকে, রাজ্য ও বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলি বলছে— এটা একধরনের কর্পোরেটপন্থী শোষণ। এই বিতর্কে শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থই মূল— যার বিচার হবে ভবিষ্যতের বাস্তব প্রয়োগে।

Leave a comment