আমেরিকান কর্তৃপক্ষের তরফে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (PNB) দুর্নীতিতে অভিযুক্ত নীরব মোদীর ভাই নেহাল মোদীকে ভারতের আবেদনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রায় ১৩,০০০ কোটি টাকার এই বৃহৎ ব্যাঙ্ক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নেহালের বিরুদ্ধে ভারতের তরফে প্রত্যর্পণের আবেদন জানানো হয়েছিল।
পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (PNB)-এর বহুল আলোচিত ১৩,০০০ কোটি টাকার দুর্নীতি মামলায় একটি নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ মোড় এসেছে। এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত নীরব মোদীর ভাই নেহাল মোদীকে আমেরিকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভারত সরকারের তরফে করা প্রত্যর্পণের আবেদনের ভিত্তিতে এই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমেরিকার একটি আদালতে নেহালকে শুক্রবার পেশ করা হয়, যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে শুনানি শুরু হয়েছে। তাঁর পরবর্তী শুনানির তারিখ ১৭ই জুলাই ধার্য করা হয়েছে।
ভারতের এজেন্সিগুলির আবেদনে গ্রেপ্তার
ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) এবং সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (CBI) নেহাল মোদীকে প্রত্যর্পণের জন্য মার্কিন প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছিল। এজেন্সিগুলির অভিযোগ, নেহাল তাঁর ভাই নীরব মোদী এবং কাকা মেহুল চোকসির সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই দুর্নীতি করেছেন এবং মানি লন্ডারিংয়ের মতো গুরুতর অপরাধ করেছেন।
নেহাল মোদীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ
নেহাল মোদীর বিরুদ্ধে ভারতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন (PMLA)-এর ৩ নম্বর ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়াও, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০-বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) এবং ২০১ (প্রমাণ লোপাট) ধারায়ও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলছে। ভারতীয় এজেন্সিগুলির দাবি, নেহাল এই পুরো দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন এবং নীরব মোদীর আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করেছিলেন।
শেল কোম্পানিগুলির মাধ্যমে অর্থ পাচার
ইডি-র তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, নেহাল বেশ কয়েকটি শেল কোম্পানির ব্যবহার করেছিলেন, যেগুলির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠানো হয়েছিল এবং সেখানে সম্পত্তি কেনা হয়েছিল। এই সমস্ত টাকাই দুর্নীতিতে ব্যবহার করা হয়েছিল। এছাড়াও, তদন্তকারী সংস্থাগুলির মতে, PNB দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পর নেহাল দুবাই থেকে প্রায় ৫০ কেজি সোনা এবং বিপুল পরিমাণ নগদ সরিয়েছিলেন।
নিরব মোদী এর আগেও লন্ডনে বন্দী
এই দুর্নীতির মূল অভিযুক্ত নীরব মোদী বর্তমানে লন্ডনের একটি জেলে বন্দী রয়েছেন এবং তাঁকে ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত সরকারের প্রচেষ্টা চলছে। ব্রিটেনের একটি আদালত ২০২১ সালে নীরব মোদীর প্রত্যর্পণের অনুমোদন দিয়েছিল, তবে বিষয়টি এখন ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
মিহির ভানসালীর সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ
নেহাল মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নীরব মোদীর ঘনিষ্ঠ এবং ফায়ারস্টার ইন্টারন্যাশনালের সিইও মিহির আর. ভানসালীর সঙ্গে মিলে সমস্ত প্রমাণ লোপাটের এবং টাকা অন্য দেশে লুকানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি নীরবের কোম্পানির ডামি ডিরেক্টরদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে কোনও অবস্থাতেই তদন্তকারী সংস্থাগুলির কাছে তাঁদের নাম প্রকাশ না করা হয়।
চার্জশিটে নাম অন্তর্ভুক্ত
ইডি-র দাখিল করা চার্জশিটে নেহাল মোদীর নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চার্জশিট অনুযায়ী, নেহাল ইচ্ছাকৃতভাবে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছেন এবং নীরব মোদীর অবৈধ কার্যকলাপে সহায়তা করেছেন। ইডি কর্মকর্তাদের মতে, নেহালের ভূমিকা শুধুমাত্র আর্থিক ছিল না, বরং কৌশলগতও ছিল।
এবার কী হবে?
নেহাল মোদীর গ্রেপ্তারের পর, মামলাটি এখন মার্কিন আদালতে বিচারাধীন। ১৭ই জুলাই পরবর্তী শুনানিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে নেহালকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হবে কিনা। এই সময়ে, নেহালের আইনজীবী জামিনের আবেদনও করতে পারেন। যদি আদালত জামিন খারিজ করে এবং ভারতের পক্ষে রায় দেয়, তবে নেহালকে ভারতে আনা যেতে পারে।
ভারতের জন্য বড় সাফল্য আসতে পারে
নেহালের গ্রেপ্তারির ফলে ভারত সরকার এই মামলায় একটি বড় সাফল্য পেতে পারে। এর মাধ্যমে PNB দুর্নীতিতে আরও অনেক নতুন সূত্র পাওয়া যেতে পারে এবং যারা এতদিন এই দুর্নীতি সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দেননি, তাঁদের ভূমিকাও প্রকাশ হতে পারে। তদন্তকারী সংস্থাগুলি আশা করছে, নেহালকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তাঁরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবে।