পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমেরিকার ট্যারিফ বৃদ্ধির পর চীনের রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়ানোর সুযোগ এসেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত এ মুহূর্তে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে চায়। এবার সেই একই পথে হাঁটতে চাইছে পাকিস্তানও।
শাহবাজের খোলামেলা বক্তব্য: রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব মজবুত করতে চাই
মঙ্গলবার পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে শাহবাজ শরিফ সরাসরি নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পুতিনকে বিশ্বমানের নেতা হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক মজবুত। আমরা তার প্রশংসা করি। তবে আমরা চাই আমাদের দেশও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হোক। এতে দুই দেশই এগিয়ে যাবে এবং সমৃদ্ধি অর্জন করবে।” বৈঠকের সময়ে শাহবাজের সরল ও খোলামেলা বক্তব্য কূটনৈতিক মহলে বিশেষ নজর কেড়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতি
এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের পরাজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত চীনা সামরিক কুচকাওয়াজের সময়। বেজিংয়ে এই কুচকাওয়াজে শাহবাজ শরিফ, পুতিন ও শি জিনপিং অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও, পুতিন কূটনৈতিক বৈঠক পরিচালনা করেন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এবং স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকোর সঙ্গে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বৈঠকগুলোর মূল উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সামরিক সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখা।
ভাইরাল ছবি এবং নজর কাড়ার মুহূর্ত
সম্প্রতি এসকো শীর্ষ সম্মেলনে পুতিনকে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে হাঁটতে দেখা যায়। সেই সময় শাহবাজ শরিফকে পুতিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেষ্টার মুহূর্তও ক্যামেরাবন্দি হয়। দুই নেতা করমর্দনেরও চেষ্টা করেন, যদিও শাহবাজ সামান্য পিছিয়ে পড়েন। ওই ছবি সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ভাইরাল হয় এবং পাকিস্তান-রাশিয়া সম্পর্ক নিয়ে নানা জল্পনা উস্কে দেয়।
পাকিস্তানের কূটনৈতিক অবস্থান
পহেলগাঁও হামলার পর এই প্রথমবার শাহবাজ শরিফ এবং নরেন্দ্র মোদীকে একই মঞ্চে দেখা গেল চীনের এসকো সম্মেলনে। পাকিস্তান বারবার জানিয়ে এসেছে, তারা শান্তিপ্রিয় দেশ। প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সবসময় সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। শাহবাজের এই বার্তায় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন, “ভারত-চিন-রাশিয়া যে নতুন অক্ষ তৈরি করেছে, তাতে পাকিস্তানের জন্য নতুন কৌশল প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার আহ্বান তাৎপর্যপূর্ণ।”
ভারতের কৌশল এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিক্রিয়া
ভারত এবং রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক মানচিত্রে নতুন মাত্রা যোগ করছে। ভারতের লক্ষ্য চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করা। পাকিস্তানও এখন রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এভাবে দক্ষিণ এশিয়া এক নতুন কূটনৈতিক সমীকরণে প্রবেশ করছে।
সাম্প্রতিক কূটনৈতিক কৌশল ও ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শাহবাজ শরিফের এই পদক্ষেপ কেবল সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ। ভারতের সঙ্গে চলমান তীব্র প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে নিজের কৌশলগত অবস্থান আরও দৃঢ় করতে চাইছে। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মানচিত্রে এই নতুন সমীকরণ উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে, যা ভবিষ্যতে অঞ্চলের কূটনৈতিক ভারসাম্যেও পরিবর্তন আনতে পারে।
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ
বিশ্ববাজার ও কূটনৈতিক মহলে পাকিস্তানের এই উদ্যোগ নজর কেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের উপস্থিতি দৃঢ় করতে চায়। এটি শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।