প্রধানমন্ত্রী মোদী জাপান সফরে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সুরক্ষা সহযোগিতায় বড় চুক্তি হতে পারে। 'মেক ইন ইন্ডিয়া', প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় নতুন উদ্যোগের সম্ভাবনা। ভারত-জাপান সম্পর্কে নতুন শক্তি ও দৃঢ়তা আসবে।
PM Modi Japan Visit: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বর্তমানে দুই দিনের জাপান সফরে রয়েছেন। এই সফর ভারত ও জাপানের মধ্যে কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। টোকিওতে পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রী মোদীর भव्य অভ্যর্থনা জানানো হয়। এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন বিশ্ব বাণিজ্য এবং সুরক্ষার পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এবং ভারত তার অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
টোকিওতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর গ্র্যান্ড অভ্যর্থনা
প্রধানমন্ত্রী মোদী টোকিও পৌঁছানো মাত্রই জাপান সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন তাঁকে এক অসাধারণ অভ্যর্থনা জানায়। টোকিওর রাস্তায় ভারতীয় সম্প্রদায় এবং স্থানীয় মানুষজন তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। স্থানীয় শিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবেশকে উৎসবমুখর করে তোলেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিম্বার আমন্ত্রণে এই সফর ভারত-জাপানের গভীর সম্পর্ককে আরও মজবুত করার সাক্ষ্য বহন করে।
ভারত-জাপান বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ
প্রধানমন্ত্রী মোদী ১৫তম ভারত-জাপান বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। এই মঞ্চটি উভয় দেশের মধ্যে কেবল রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতাকেও শক্তিশালী করার সুযোগ করে দেয়। এই শীর্ষ সম্মেলনে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি, বিনিয়োগের নতুন সুযোগ এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের উপর জোর
এই সফরের মূল বিষয় হল ভারত ও জাপানের মধ্যে বিনিয়োগ সম্পর্ককে নতুন দিকনির্দেশনা দেওয়া। প্রধানমন্ত্রী মোদী জাপানের প্রধান ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং তাঁদের ভারতে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন। বিশেষ করে উৎপাদন, প্রযুক্তি এবং অবকাঠামো খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ লিখেছেন যে তিনি টোকিওতে ভারতীয় সম্প্রদায়ের স্নেহ এবং উষ্ণ অভ্যর্থনায় অভিভূত। তিনি ভারতীয় সম্প্রদায়ের প্রশংসা করেছেন কারণ তারা জাপানে বসবাস করলেও তাদের সাংস্কৃতিক শিকড় বজায় রেখেছে এবং জাপানি সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা সহযোগিতায়ও জোর দেওয়া হবে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিম্বার মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা সহযোগিতা নিয়েও বিশেষ জোর দেওয়া হবে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পরিবর্তনশীল সুরক্ষা পরিস্থিতি বিবেচনা করে, ভারত ও জাপান উভয়ই তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করতে চায়।
জাপানে ভারতীয় সম্প্রদায়ের ভূমিকা
জাপানে বসবাসকারী ভারতীয় সম্প্রদায় প্রধানমন্ত্রী মোদীকে এক অসাধারণ অভ্যর্থনা জানায়। প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারতীয় সম্প্রদায়ের অবদানের প্রশংসা করে বলেছেন যে তারা কেবল ভারতের সংস্কৃতিকেই জীবন্ত রাখেনি, বরং জাপানের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি আরও বলেন যে ভারত-জাপান সম্পর্ককে আরও গভীর করার ক্ষেত্রে প্রবাসী ভারতীয়দের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।
১০০ টির বেশি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে
এটা মনে করা হচ্ছে যে এই সফরের সময় উভয় দেশের মধ্যে ১০০ টির বেশি সমঝোতা স্মারক (MoUs) স্বাক্ষরিত হতে পারে। এর মধ্যে অবকাঠামো, প্রযুক্তি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতের মতো বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। জাপান ইতিমধ্যে ভারতে হাই-স্পিড রেল প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। এখন এই বিনিয়োগ নতুন খাতে প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
'মেক ইন ইন্ডিয়া'-এর জন্য জাপানের সহযোগিতা
প্রধানমন্ত্রী মোদী এই সফরে জাপানি কোম্পানিগুলিকে ভারতে উৎপাদন ইউনিট স্থাপন এবং 'মেক ইন ইন্ডিয়া' উদ্যোগে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন। ভারত সরকার চায় যে জাপান তার হাই-টেক উৎপাদন প্রযুক্তি ভারতে স্থানান্তর করুক, যাতে দেশের উৎপাদন ক্ষমতা এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পায়।
কৌশলগত ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের উপর জোর
ভারত ও জাপানের মধ্যে সম্পর্ক কেবল অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগতও। উভয় দেশই Quad (কোয়াড) গোষ্ঠীর সদস্য এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে ভারসাম্যপূর্ণ করার জন্য একসাথে কাজ করছে। এই সফরে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা এবং সমুদ্র সুরক্ষা নিয়েও আলোচনার আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এটি ৮ তম জাপান সফর
প্রধানমন্ত্রী মোদীর মেয়াদে এটি তাঁর ৮ম জাপান সফর। এটি দেখায় যে ভারত-জাপান সম্পর্ক মোদী সরকারের বিদেশ নীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে, মোদী সর্বদা জাপানকে ভারতের একটি প্রধান কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করেছেন।