পাঞ্জাব: আপ বিধায়ক মনজিন্দর সিং লালপুরা সহ ১১ জন মহিলাকে হেনস্থা ও মারধরের মামলায় দোষী সাব্যস্ত

পাঞ্জাব: আপ বিধায়ক মনজিন্দর সিং লালপুরা সহ ১১ জন মহিলাকে হেনস্থা ও মারধরের মামলায় দোষী সাব্যস্ত

পাঞ্জাবের আদালত আম আদমি পার্টির বিধায়ক মনজিন্দর সিং লালপুরা এবং আরও ১০ জনকে ২০১৩ সালে এক মহিলাকে হেনস্থা ও মারধরের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছে। সাজা ঘোষণা করা হবে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর।

তরনতারন: পাঞ্জাবের একটি আদালত খদুর সাহেব কেন্দ্র থেকে আম আদমি পার্টি (আপ) এর বিধায়ক মনজিন্দর সিং লালপুরা এবং আরও দশ জনকে ২০১৩ সালে এক মহিলাকে হেনস্থা ও মারধরের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছে। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক প্রেম কুমার আদালত আগামী ১২ সেপ্টেম্বর সাজা ঘোষণা করবে। এই মামলায় লালপুরা সহ অন্য অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়ে তরনতারন উপ-জেলে পাঠানো হয়েছে।

২০১৩ সালে দলিত মহিলাকে হেনস্থা ও মারধরের ঘটনা

ঘটনাটি ঘটেছিল ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে। সে সময় ১৯ বছর বয়সী এক দলিত মহিলা এবং তার পরিবারের সদস্যরা একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগ, ট্যাক্সি চালক মনজিন্দর সিং লালপুরা এবং অন্য অভিযুক্তরা মহিলাকে হেনস্থা করে এবং প্রতিবাদ করায় মারধর করে।

ভুক্তভোগী সেই সময় পুলিশকে খবর দেন, কিন্তু ঘটনাস্থলে পৌঁছানো পুলিশ দলও মহিলাকে মারধর করে। ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কর্মকর্তাদের মহিলা এবং তার পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

লালপুরা সহ আট অভিযুক্তের গ্রেপ্তার

অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক প্রেম কুমার আগামী ১২ সেপ্টেম্বর সাজা ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছেন। এই মামলায় পুলিশ লালপুরা সহ আট অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া অন্য অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন রভিন্দর সিং, কাওয়ালদীপ সিং, প্রাক্তন পুলিশ অফিসার দভিন্দর কুমার, সারাজ সিং, অশ্বিনী কুমার, তরসেম সিং এবং হরজিন্দর সিং।

ভুক্তভোগীর আইনজীবী অমিত ধাওয়ান জানিয়েছেন, ১২ অভিযুক্তের মধ্যে একজন, পরমজিৎ সিং, মামলার চলাকালীন মারা গেছেন। অন্য তিন দোষী - গুরদীপ রাজ, গগনদীপ সিং এবং নরিন্দরজিৎ সিং - কে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। এদের মধ্যে নরিন্দরজিৎ নিজেও একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন।

মনজিন্দর সিং লালপুরার রাজনৈতিক জীবন

মনজিন্দর সিং লালপুরা বর্তমানে ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে খদুর সাহেব কেন্দ্র থেকে আপ-এর টিকিটে বিধায়ক হয়েছেন। তিনি ৫৬,৭৫৬ ভোট পেয়ে দুবারের কংগ্রেস বিধায়ক রমনজিৎ সিং সিক্কিকে প্রায় ১৬,৫০০ ভোটে পরাজিত করেন।

ঘটনার সময় লালপুরা ট্যাক্সি চালক হিসেবে কাজ করতেন। রাজনীতিতে আসার আগে এই মামলাটি দীর্ঘকাল ধরে আলোচিত ছিল। আদালতের রায় আসার পর তার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

১৩ বছর পর ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার

আদালতের এই রায় ১৩ বছরের পুরনো মামলায় ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার প্রতিফলন। ভুক্তভোগী জানিয়েছেন যে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় ছিলেন এবং দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ফলে তিনি মানসিক শান্তি পেয়েছেন। আইনজীবী অমিত ধাওয়ান বলেছেন যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত যে দীর্ঘ সময় পরেও ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এই রায়ের প্রতি সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একদিকে ভুক্তভোগী ন্যায়বিচার পাওয়ায় মানুষ খুশি, অন্যদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় নেতাদের দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। আদালতের নির্দেশের পর এবার সকল অভিযুক্তের সাজা ঘোষণা করা হবে।

Leave a comment