রাজস্থানে মুসলিম যুবকের হিন্দু বৃদ্ধার শেষকৃত্য সম্পন্ন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির

রাজস্থানে মুসলিম যুবকের হিন্দু বৃদ্ধার শেষকৃত্য সম্পন্ন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির

রাজস্থানে এক মুসলিম যুবক ১৫ বছর ধরে প্রতিবেশী একাকী হিন্দু বৃদ্ধা শান্তি দেবীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছেন। তিনি হিন্দু রীতি অনুযায়ী অগ্নি সংযোগ করেন এবং পুরো পাড়া তাকে সমর্থন করে।

ভীলওয়ারা: রাজস্থানের ভীলওয়ারা শহর থেকে ভারতের এক অসাধারণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ছবি সামনে এসেছে। এখানে একজন মুসলিম যুবক তাঁর প্রতিবেশী ৬৭ বছর বয়সী হিন্দু বৃদ্ধা শান্তি দেবীর মৃত্যুর পর কেবল তাঁর শেষ যাত্রার দায়িত্বই গ্রহণ করেননি, বরং হিন্দু রীতিনীতি অনুসারে তাঁকে অগ্নি সংযোগও করেছেন। এই ঘটনা গঙ্গাজমুনি সংস্কৃতি এবং পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের এক জীবন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

১৫ বছর ধরে মুসলিম পরিবারের বাড়িতে থাকতেন শান্তি দেবী

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শান্তি দেবী গত ১৫ বছর ধরে গান্ধী নগর, জাঙ্গি চক-এর কাছে সেলিম কুরেশীর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। একাকী এবং অসুস্থ বৃদ্ধার দেখাশোনা সেই পাড়ার মুসলিম পরিবারই করত। বৃদ্ধার কোনও সন্তান ছিল না এবং পরিবারেও কোনও সদস্য ছিল না, তাই তাঁর মৃত্যুর পর শেষকৃত্যের দায়িত্ব এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন যে শান্তি দেবী এবং তাঁর দেখাশোনা করা মুসলিম পরিবারের মধ্যে সময়ের সাথে সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। এই সম্পর্ক অবশেষে সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের দেওয়াল ভেঙে ভ্রাতৃত্বকে শক্তিশালী করেছে। যখন বৃদ্ধার মৃত্যু হয়, তখন সমস্ত মুসলিম প্রতিবেশীরা মিলে তাঁর শেষ যাত্রা এবং শেষকৃত্যের ভার গ্রহণ করেন।

মুসলিম যুবক হিন্দু রীতির দায়িত্ব পালন করেন

গান্ধী নগর নিবাসী নিসার সিলাওয়াট জানিয়েছেন যে শান্তি দেবীর মৃত্যুর পর এলাকায় আসগর আলী নামে এক মুসলিম যুবক এগিয়ে আসেন। তিনি বলেন যে শান্তি দেবী তাঁকে মায়ের স্নেহ দিয়েছেন, তাই তিনি তাঁর শেষকৃত্যের দায়িত্ব নেবেন। এরপর আসগর আলী কেবল বৃদ্ধার শবযাত্রায় কাঁধ দেননি, বরং হিন্দু রীতিনীতি অনুসারে অগ্নি সংযোগও করেছেন।

আসগর আলীর সাথে অন্য মুসলিম যুবক আশফাক কুরেশী, শাকির পাঠান, ফিরোজ কুরেশী, আবিদ কুরেশী, ইনায়াত ভাই এবং আজগর পাঠানও শেষ যাত্রায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এই পুরো কাজে পাড়ার মুসলিম নারী ও পুরুষরাও সহযোগিতা করেন, যার ফলে সামাজিক ঐক্যের বার্তা পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে।

ভীলওয়ারা শহরে ভ্রাতৃত্বের দৃষ্টান্ত

ভীলওয়ারা শহর তার সংবেদনশীল সামাজিক পরিস্থিতির জন্য পরিচিত, যেখানে সামান্য বিষয়েও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। এমন পরিবেশে এক মুসলিম যুবকের হিন্দু মহিলার শেষকৃত্যে পালন করা ভূমিকা প্রমাণ করেছে যে মানবতা এবং মনুষ্যত্ব কোনও ধর্মের মুখাপেক্ষী নয়।

এই ঘটনা কেবল গান্ধী নগর পাড়াই নয়, বরং পুরো ভীলওয়ারা শহরে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব এবং সহযোগিতার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। স্থানীয় মানুষ এই ঘটনা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন এবং এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে ঐক্য ও সহিষ্ণুতার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন।

Leave a comment