ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচিতে একটি চাঞ্চল্যকর সাইবার প্রতারণার ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে এক প্রতারক নিজেকে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকারিক পরিচয় দিয়ে এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীকে জালিয়াতির মাধ্যমে "ডিজিটাল অ্যারেস্ট" করে। অভিযুক্ত নিজেকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র অফিসার বলে পরিচয় দেয় এবং ওই ব্যক্তিকে ৩০০ কোটি টাকার মানি লন্ডারিং কেলেঙ্কারিতে ফাঁসানোর হুমকি দেয়। শুধু তাই নয়, অভিযুক্ত ভিডিও কলের মাধ্যমে ভয় দেখায় যে তিনি সহযোগিতা না করলে তাকে তৎক্ষণাৎ জেলে পাঠানো হবে। ভয়ে ওই ব্যক্তি প্রতারককে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা হস্তান্তর করেন।
গুজরাট থেকে ধরা পড়ল সাইবার প্রতারক
প্রতারিত অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি ঝাড়খণ্ড সিআইডি-র সাইবার ক্রাইম থানা, রাঁচিতে অভিযোগ দায়ের করেন। মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে সিআইডি দ্রুত তদন্ত শুরু করে এবং প্রযুক্তিগত প্রমাণের ভিত্তিতে জানতে পারে যে এই সাইবার প্রতারক গুজরাটের জুনাগড় জেলা থেকে কাজ করছে। অভিযান চালিয়ে সিআইডি ২৭ বছর বয়সী অভিযুক্ত রবি হসमुखলাল গোধনিয়াকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ এখন অভিযুক্তের পুরো নেটওয়ার্ক খতিয়ে দেখছে, যাতে সে আর কত লোককে শিকার বানিয়েছে তা জানা যায়।
অবৈধ উপার্জনের প্রমাণ উদ্ধার
গ্রেফতারের পর অভিযুক্তের কাছ থেকে সিআইডি একটি মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, তিনটি এটিএম কার্ড, তিনটি চেক এবং একটি হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করেছে। তদন্তে অভিযুক্তের মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা প্রতারণার পুরো ষড়যন্ত্রের সত্যতা প্রমাণ করে। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হল অভিযুক্তের ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে একদিনে ৭৯ লক্ষ টাকা জমা হয়েছিল। অ্যাকাউন্টটি তৎক্ষণাৎ ফ্রিজ করা হয়েছে এবং সমস্ত লেনদেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সিআইডি সূত্রে খবর, অভিযুক্ত নিজেকে কখনও ইডি, কখনও সিবিআই আবার কখনও এনআইএ-র আধিকারিক পরিচয় দিয়ে লোকেদের ভিডিও কল করত। সে তাদের কেলেঙ্কারি বা মানি লন্ডারিংয়ের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর কথা বলে ভয় দেখাত এবং তারপর গ্রেফতারি থেকে বাঁচানোর নামে লক্ষ লক্ষ টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করিয়ে নিত।
ভিডিও কলে কোনও গ্রেফতারি হয় না
ঝাড়খণ্ড সিআইডি সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে বলেছে যে কোনও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ভিডিও কলের মাধ্যমে কখনও ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে না। কোনও অপরিচিত ব্যক্তির হুমকিতে পড়ে টাকা হস্তান্তর করবেন না। যদি এমন কোনও কল বা মেসেজ আসে, তবে তৎক্ষণাৎ সতর্ক হন এবং ১৯৩০ হেল্পলাইন নম্বরে কল করুন অথবা www.cybercrime.gov.in-এ অভিযোগ দায়ের করুন। এছাড়াও নিকটবর্তী সাইবার থানা বা পুলিশ স্টেশনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যেতে পারে।
এই ঘটনা শুধু সাইবার অপরাধের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকেই তুলে ধরে না, বরং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সতর্কতা এবং সচেতনতা কতটা জরুরি, সে বিষয়েও সতর্ক করে।