রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সাত সপ্তাহ পর ইস্তাম্বুলে শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প পুতিনের উপর চাপ সৃষ্টি করে জানিয়েছেন ৫০ দিনের মধ্যে সমঝোতা না হলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।
Russia-Ukraine: রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে গত সাত সপ্তাহ ধরে বন্ধ থাকা শান্তি আলোচনা আবার শুরু হয়েছে। বুধবার দুই দেশের প্রতিনিধি দল তুরস্কের ইস্তাম্বুলে মিলিত হয়, যেখানে তারা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আলোচনা করে। এই সাক্ষাৎ নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা না থাকলেও, এটিকে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য শীর্ষ সম্মেলনের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ বিষয় হল এই বৈঠকের কয়েক দিন আগে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার উপর কড়া অবস্থান নিয়ে নতুন করে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন।
আলোচনার পিছনে আমেরিকার ভূমিকা
এই বৈঠকের আয়োজনের পিছনে আমেরিকার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, রাশিয়া যদি দ্রুত কোনো শান্তি চুক্তি না করে, তাহলে তাকে এবং তার প্রধান বাণিজ্যিক সহযোগীদের কঠিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হবে। ট্রাম্পের এই সতর্কবার্তার পর রাশিয়ার উপর আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে। এই কারণেই মস্কো এখন আলোচনার টেবিলে ফিরতে বাধ্য হয়েছে।
১৬ মে ও ২ জুনের পূর্বের বৈঠকগুলি ছিল সীমিত
এর আগে ১৬ মে ও ২ জুন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য দুটি বৈঠক হয়েছিল। এই বৈঠকগুলোতে উভয় পক্ষ যুদ্ধবন্দী ও মৃত সেনাদের দেহ বিনিময় করেছিল। তবে, এই বৈঠকগুলো তিন ঘণ্টারও কম সময় ধরে চলেছিল এবং যুদ্ধ বন্ধ করার বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।
ইউক্রেন চায় রাষ্ট্রপতি স্তরের আলোচনা
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে ক্রমাগত দাবি করা হচ্ছে যে পরবর্তী বৈঠকটি দুই দেশের রাষ্ট্রপতির স্তরে হওয়া উচিত। রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি মনে করেন, যতক্ষণ না ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আলোচনাকে সেই দিকে একটি সম্ভাব্য সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও ক্রেমলিন এখনও পর্যন্ত এই ধরনের কোনো সম্ভাবনার বিষয়ে সম্মতি দেয়নি।
পুতিনের উপর ট্রাম্পের কড়া মনোভাব
গত কয়েক সপ্তাহে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের তরফে পুতিনকে নিয়ে মন্তব্য আরও তীব্র হয়েছে। তিনি রাশিয়াকে স্পষ্ট জানিয়েছেন যে যদি ৫০ দিনের মধ্যে কোনো শান্তি চুক্তি না হয়, তাহলে আমেরিকা রাশিয়া এবং সেই দেশগুলোর উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করবে, যারা রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাসের মতো পণ্য কেনে। এই সতর্কবার্তার প্রভাব শুধু কূটনৈতিক স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, আন্তর্জাতিক বাজারেও এর প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
আর্থিক বাজারে অস্থিরতা বৃদ্ধি
ট্রাম্পের বিবৃতির পর বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারে অস্থিরতা দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে যে আমেরিকা যদি সত্যিই রাশিয়া ও তার বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তাহলে এর ফলে জ্বালানি সরবরাহের উপর প্রভাব পড়বে এবং বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি আবার বাড়তে পারে। তবে, কিছু বিশ্লেষকের মনে করেন এই সতর্কতা রাশিয়াকে শান্তির পথে আরও গুরুত্ব দিতে বাধ্য করতে পারে।
জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প ও ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সম্পর্ক কয়েক মাস আগে পর্যন্ত বেশ খারাপ ছিল। ফেব্রুয়ারিতে দুই নেতার মধ্যে হোয়াইট হাউসে একটি প্রকাশ্য বিতর্কও হয়েছিল, যেখানে মতभेद স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে। এখন দুই নেতার মধ্যে কথাবার্তা আগের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ও সহযোগী বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্রেমলিনের প্রত্যাশা সীমিত
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এইবারের আলোচনা নিয়ে কোনো বিশেষ প্রত্যাশা নেই। ক্রেমলিনের মুখপাত্ররা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে কোনো "বড় সাফল্য" আশা করা যাচ্ছে না। তাদের মতে যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ থাকবে, রাশিয়া কোনো গুরুতর চুক্তির দিকে পদক্ষেপ নেবে না। তবে, আমেরিকার চাপ ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনা করে রাশিয়া এখন আলোচনা থেকে পুরোপুরি দূরে থাকতে পারবে না।