গোমাংস প্রসঙ্গে সলমনের খোলাখুলি বক্তব্য : বলিউডের ভাইজান সলমন খান বরাবরই নিজের জীবনযাত্রা, অভ্যাস ও বিশ্বাস নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন। সম্প্রতি তাঁর এক মন্তব্য নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। সলমন স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাঁর খাদ্যতালিকায় গোমাংসের কোনও স্থান নেই। শুধু তাই নয়, এই সিদ্ধান্ত কোনও সাম্প্রতিক পরিবর্তন নয়, বরং তাঁদের পরিবারের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যেরই অংশ। সলমনের বক্তব্যে ভক্তরা যেমন বিস্মিত, তেমনই প্রশংসায় ভরিয়েছেন অভিনেতাকে।
সেলিম খানের দৃষ্টিভঙ্গি: ঐতিহ্য, বিশ্বাস ও ধর্মীয় শিক্ষা
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেলিম খান জানান, ইন্দোর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত তাঁদের পরিবার কখনও গোমাংস খায়নি। তাঁর কথায়, অনেক মুসলিম পরিবার গোমাংসকে সস্তা হওয়ায় খাদ্য হিসেবে বেছে নিলেও, তিনি নবী মহম্মদের শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। সেলিম স্পষ্ট করে বলেন, নবী বলেছেন গরুর দুধ মায়ের দুধের বিকল্প—একটি মুফিদ চিজ বা অত্যন্ত উপকারী খাদ্য। তাই গরু হত্যা করে তার মাংস খাওয়া উচিত নয়। এই শিক্ষাকেই তাঁদের পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অনুসরণ করছে।
বৈচিত্র্য গ্রহণে সেলিমের বার্তা
শুধু খাদ্যাভ্যাস নয়, পারিবারিক জীবনে বৈচিত্র্যের প্রতিফলনও ঘটেছে খানের পরিবারে। সেলিম খান স্মরণ করেন, সালমা খানের সঙ্গে বিবাহ, বাড়িতে গণেশ চতুর্থীর মতো উৎসব পালন—সবকিছুতেই তাঁদের পরিবারে মিলেমিশে গেছে ধর্মীয় বৈচিত্র্য। তাঁর মতে, প্রতিটি ধর্মের মধ্যেই ভাল কিছু শিক্ষা রয়েছে। ইসলামও অন্যান্য ধর্মের ভাল দিক গ্রহণ করেছে, যেমন ইহুদিদের থেকে নেওয়া হয়েছে হালাল মাংস খাওয়ার প্রথা। সেলিমের মতে, মূল কথা হল সর্বোচ্চ শক্তির প্রতি বিশ্বাস রাখা এবং সব ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।
সলমনের ব্যক্তিগত মতামত: "আমি সাধারণ হিন্দুস্তানি"
২০১৮ সালে ‘আপ কি আদালত’-এ সলমন নিজের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি সোজাসুজি বলেছিলেন, “আমি সবই খাই, শুধু গোমাংস ও শূকরের মাংস খাই না।” সলমনের যুক্তি ছিল, “গরু আমাদেরও মা। আমার মা হিন্দু, তাই আমি গোমাংস খাই না। আমার বাবা মুসলিম, দ্বিতীয় মা খ্রিস্টান—আমি তাই নিজেকে সাধারণ হিন্দুস্তানি মনে করি।” এই বক্তব্য আজও ভক্তদের মনে অনুরণিত হয় এবং তাঁর জীবনদর্শনকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
পারিবারিক ঐতিহ্যের প্রতি অনুগত ভাইজান
বছরের পর বছর ধরে যে ঐতিহ্য তাঁদের পরিবার মেনে চলেছে, সলমনও সেই পথেই হেঁটেছেন। খ্যাতির শীর্ষে থেকেও তিনি কখনও পারিবারিক বিশ্বাসের বাইরে যাননি। অনেক তারকা তাঁদের জীবনযাত্রা নিয়ে পরিবর্তন আনলেও সলমন খাদ্যাভ্যাসে এই স্থিরতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতে, খ্যাতি বা অর্থ নয়, পরিবার ও ঐতিহ্যই আসল পরিচয় বহন করে।
ধর্মীয় বিশ্বাস ও সামাজিক বার্তা
সলমনের বক্তব্য শুধু তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নয়, বরং সমাজের জন্যও এক বড় বার্তা বহন করে। ধর্মীয় বিশ্বাস, পারিবারিক ঐতিহ্য এবং ব্যক্তিগত পছন্দ—এই তিনটির মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করেই তিনি চলেন। আজকের দিনে যেখানে খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নানা বিতর্ক হয়, সেখানে সলমনের এই অবস্থান অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত। তিনি প্রমাণ করেছেন যে খাদ্য কেবল রুচি নয়, বরং বিশ্বাস ও পরিচয়েরও প্রতিফলন।
আসন্ন সিনেমা: ‘ব্যাটল অফ গালওয়ান’-এ ব্যস্ত সলমন
খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আলোচনার মাঝেই সলমন এখন ব্যস্ত তাঁর বহুল প্রতীক্ষিত ওয়ার ড্রামা ‘ব্যাটল অফ গালওয়ান’-এর শ্যুটিংয়ে। ছবিটি ২০২০ সালের জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় ঘটে যাওয়া বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে। এতে সলমনের সঙ্গে অভিনয় করছেন চিত্রাঙ্গদা সিং, জেইন শ, অঙ্কুর ভাটিয়া, হর্ষিল শাহ, হীরা সোহাল, অভিলাষ চৌধুরী ও বিপিন ভরদ্বাজ। দর্শকদের প্রত্যাশা, এই ছবিটি সলমনের ক্যারিয়ারে নতুন মাইলফলক তৈরি করবে।
ভক্তদের প্রতিক্রিয়া: প্রশংসা ও শ্রদ্ধা
সলমনের বক্তব্যে ভক্তরা একদিকে যেমন আবেগপ্রবণ হয়েছেন, অন্যদিকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়েছে। বহু ভক্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেছেন যে একজন তারকা হয়েও সলমন নিজের ঐতিহ্য ও বিশ্বাসকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। অনেকেই মনে করছেন, তাঁর এই বার্তা তরুণ প্রজন্মকে ঐতিহ্যকে সম্মান জানাতে অনুপ্রাণিত করবে।সলমন খান শুধু বলিউডের একজন তারকা নন, তিনি এক সাংস্কৃতিক প্রতীক। তাঁর খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাস, পারিবারিক ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিফলন। একইসঙ্গে আসন্ন সিনেমা ‘ব্যাটল অফ গালওয়ান’-এর প্রস্তুতিতে তিনি প্রমাণ করেছেন যে কাজ ও বিশ্বাস—দুটিই একসঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।