শ্রাবণে শিবভক্তদের জন্য সুখবর বীরভূম জেলার পাঁচটি জাগ্রত শিবমন্দিরে ভক্তির জল ঢালুন সঙ্গে ঘুরে দেখুন ঐতিহ্য আর ইতিহাসে মোড়া প্রাচীন তীর্থস্থান

শ্রাবণে শিবভক্তদের জন্য সুখবর বীরভূম জেলার পাঁচটি জাগ্রত শিবমন্দিরে ভক্তির জল ঢালুন সঙ্গে ঘুরে দেখুন ঐতিহ্য আর ইতিহাসে মোড়া প্রাচীন তীর্থস্থান

ডাবুকেশ্বর মন্দির: তারাপীঠের কাছেই শিবের উন্মত্তেশ্বর রূপে আরাধনা, ২০০ বছরের পুরনো এই মন্দির আজও প্রাণবন্ত

বীরভূমের ময়ূরেশ্বর-১ ব্লকের ডাবুক গ্রামে অবস্থিত ডাবুকেশ্বর মন্দির একটি জাগ্রত এবং অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় তীর্থস্থান। শিবের উন্মত্তেশ্বর অবতারের এই আবাসস্থল প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। শ্রাবণ মাসে এখানে শিবভক্তদের ঢল নামে। পাশেই রয়েছে বিখ্যাত তারাপীঠ, ফলে একই সফরে দুটি তীর্থ দর্শন সহজেই হয়ে ওঠে। গ্রামীণ সৌন্দর্য, শান্ত পরিবেশ আর মন্দির চত্বরের অতীন্দ্রিয়তা এক অন্য অনুভূতির জন্ম দেয়।

শালবনের মাঝে হাজার বছরের শিবমন্দির! রামপুরহাট-সিউড়ি রোডের গহীন অরণ্যে চমকপ্রদ আবিষ্কার

যাঁরা শহরের কোলাহল থেকে দূরে এক ফাঁকা, নির্জন অথচ আধ্যাত্মিক পরিবেশ খুঁজছেন, তাঁদের জন্য আদর্শ এই জঙ্গলঘেরা শিবমন্দির। রামপুরহাট থেকে সিউড়ি যাওয়ার পথে এই গহীন শালবনের মধ্যে পাওয়া যায় ৫ হাজার বছরের পুরনো বলে কথিত একটি পোড়ামাটির শিবমন্দির। একান্ত নিরিবিলিতে এখানে শিবকে জল ঢালার অভিজ্ঞতা শুদ্ধ করে মনপ্রাণ। ইতিহাস আর প্রকৃতির মেলবন্ধন এখানে প্রকৃতভাবেই অলৌকিক।

মল্লারপুরের মল্লেশ্বর মন্দির: কুন্তির পুজিত শিবের প্রাচীন তীর্থ, রাজা মল্লনাথের নির্মাণ ও তন্ত্রসাধনার প্রাচীন কেন্দ্র

তারাপীঠ থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মল্লারপুরের মল্লেশ্বর মন্দির ইতিহাসপ্রিয় ও ভক্তিসম্পন্ন মানুষের অন্যতম আকর্ষণ। জনশ্রুতি অনুসারে, পান্ডব জননী কুন্তি এখানে শিবের পুজো করেছিলেন। ১১২৪ শকাব্দে রাজা মল্লনাথ মন্দিরটি নির্মাণ করেন এবং পরে এখানে গড়ে ওঠে আরও ২৩টি মন্দির। তন্ত্রসাধক কৃষ্ণনন্দ আগমবাগীশের সমাধিক্ষেত্রও রয়েছে এই চত্বরেই। ইতিহাস আর তন্ত্রসাধনার মিলনস্থল এই স্থান ভক্তিময়তার অনন্য ঠিকানা।

বক্রেশ্বর শিবমন্দির: বক্রনাথের রাজত্বে সতীপীঠ ও উষ্ণপ্রস্রবণের আশীর্বাদ, শিবের পাঁচ রূপে বিরাজমানতা অনন্য

বক্রেশ্বর নামেই জেগে ওঠে শিবভক্তদের মন। এখানে প্রধান মন্দিরে বিরাজমান বাবা বক্রনাথ ছাড়াও আরও পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ শিবলিঙ্গ রয়েছে—কুবেরেশ্বর, সিদ্ধেশ্বর, জ্যোতির্লিঙ্গেশ্বর, কালারুদ্রেশ্বর এবং জম্ভেশ্বর। তার সঙ্গে রয়েছে উষ্ণপ্রস্রবণ ও সতীপীঠরূপে দশভূজা মহিষমর্দিনী মায়ের আবাস। সতীর ভ্রু-মধ্য পড়ে থাকার জনশ্রুতি বক্রেশ্বরকে করে তুলেছে দেবী ও শিব আরাধনার যুগ্মতীর্থ। তীর্থদর্শনের পাশাপাশি চিকিৎসায়ও আসে বহু মানুষ, উষ্ণপ্রস্রবণের জলে স্নান করেন রোগমুক্তির আশায়।

মদনেশ্বর শিব ও কোটাসুরের প্রাচীন কাহিনি: বিশাল প্রাচীর আর দ্বারবাসিনী কালী মন্দির, ছুঁয়ে যায় ইতিহাসের রন্ধ্রে রন্ধ্রে

বীরভূমের সাঁইথিয়া থেকে খুব সহজে পৌঁছনো যায় কোটাসুরের মদনেশ্বর শিবমন্দিরে। কথিত আছে, কোটাসুর গ্রাম একসময় বিশাল প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল, যা ছিল রক্ষাকবচ স্বরূপ। দক্ষিণ দিকে ছিল বাবা সন্ন্যাসীর দ্বার, উত্তরদিকে ছিল দ্বারবাসিনী কালী। প্রাচীন এই মন্দির আজও আকর্ষণ করে বহু দর্শনার্থীকে। ভক্তির পাশাপাশি ইতিহাসপ্রেমীদের জন্যও এই স্থান এক অনন্য অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার।

এক ঝলকে দেখুন — বীরভূমের শ্রাবণ তীর্থ দর্শন:

মন্দিরের নাম অবস্থান বিশেষত্ব

ডাবুকেশ্বর মন্দির ডাবুক, ময়ূরেশ্বর-১ উন্মত্তেশ্বর অবতার, ২০০ বছরের পুরনো

শালবনের শিবমন্দির রামপুরহাট-সিউড়ি রোড পোড়ামাটির মন্দির, ৫০০০ বছরের পুরনো

মল্লেশ্বর মন্দির মল্লারপুর কুন্তির পুজিত, রাজা মল্লনাথ নির্মিত

বক্রেশ্বর শিবমন্দির বক্রেশ্বর ৫টি শিবলিঙ্গ, সতীপীঠ ও উষ্ণপ্রস্রবণ

মদনেশ্বর শিবমন্দির কোটাসুর, সাঁইথিয়া বিশাল প্রাচীরবেষ্টিত, দ্বারবাসিনী কালী

এই প্রতিবেদনটি ভক্তিমূলক ও ভ্রমণ-পরামর্শমূলক। ধর্মবিশ্বাস ও ইতিহাসের নিরিখে এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। তীর্থদর্শনে যাওয়ার আগে স্থানীয় বিধিনিষেধ ও মন্দির কর্তৃপক্ষের নিয়মাবলি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Leave a comment